Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

২৬ এপ্রিল ২০২৪ ই-পেপার

এই শহরের নাকি কোনও ভবিষ্যৎ নেই! আমি তো বিশ্বাস করি না

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:৪৮

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়

যতই বহুতলে মুখ ঢাকুক না কেন, কলকাতা জুড়ে এখনও একটা পাড়া সংস্কৃতি ছড়িয়ে আছে। এটাই আমার সবথেকে ভাল লাগে। হতে পারে, আগের থেকে সেটা অনেক কমে গিয়েছে। কিন্তু তাও আছে। দেশের অন্য মেট্রো শহরে কিন্তু এটা আমি পাইনি। এখন না হয় গুগল ম্যাপ হয়ে গিয়েছে। আগে তো অচেনা জায়গায় ঠিকানা খুঁজতে সেই পাড়ার লোকই ছিলেন ভরসা। তাঁদের জিজ্ঞাসা করলে পথনির্দেশ তো দিয়েই দিতেন। পারলে, অতিথিকে সঙ্গে করে পৌঁছে দিতেন সে বাড়ির সদরদরজায়। এই জিনিসটা পৃথিবীর কোনও শহরে নেই। হ্যাঁ, অনেকের মনে হতে পারে কলকাতার লোকের কৌতূহল বেশি। বা, এখানকার পাড়া সংস্কৃতিতে ব্যক্তিগত ‘স্পেস’ থাকে না। কিন্তু আমি বলব, এটা যার যার দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। অন্য শহরে তো রাস্তায় দেহ পড়ে থাকলেও কেউ ফিরে তাকায় না। কিন্তু কলকাতার রাজপথে সামান্য কিছু একটা হলেই পাঁচজন লোক জুটে যাবেন। নিন্দুকরা বলবেন, এ শহরের লোকের হাতে অঢেল সময়। আমিতো বলব, এই শহর ইট-বালি-পাথরের জঙ্গল নয়। এখানে কিছুটা হলেও এখনও প্রাণ আছে।

খাবারের দিকে তো আমার শহরকে কেউ কোনওদিন টেক্কা দিতে পারবেন না। কলকাতার মতো ফুচকা আর বিরিয়ানির স্বাদ ভারতের অন্য কোনও শহর করে দেখাক দেখি! গোলগাপ্পা, পানিপুরি—যে নামেই ডাকো না কেন, কলকাতার মতো স্বাদ সেখানে নেই। আমি যখন ফুচকা খেতে শুরু করি, তখন ৪ আনায় ৬টা পাওয়া যেত। এখন তো স্বপ্নের মতো মনে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, আগের মতো ফুচকাওয়ালার পাশে দাঁড়িয়ে পড়ি।এখন মাস্কের সময়, চিনে ফেলারও সম্ভাবনা কম।

Advertisement

আমি তো বলব, হুজুগ, আড্ডা, কফিহাউস, মিত্র কাফে, আপনজন—সব মিলেমিশে কলকাতা আছে কলকাতাতেই। তবে বাঙালির হালফ্যাশনের কথা হল, এই শহরে কোনও ভবিষ্যৎ নেই। আমার কিন্তু এই কথাটা একদম ভুল মনে হয়। শুধু নিন্দে বা সমালোচনা না করে শহরের ভাল দিকগুলি দেখা প্রয়োজন। নিজের শহর ছেড়ে চলে গিয়ে তার সম্বন্ধে খারাপ ভাবমূর্তি তুলে ধরব বাইরে? তা কেন? বরং, এখানে থেকেই দেখি না কেন? কিছু ভালও তো হতে পারে। এই ভাবনা থেকেই আমি কোনওদিন কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবিনি। মুম্বই গিয়ে হিন্দি ছবিতে কাজ করার কথা মনে হয়নি। তার থেকে কলকাতায় কাজ করেই বলিউডে জায়গা করে নেব। তাতেই বরং মানুষ বেশি মনে রাখবেন আমাকে।

আমি কলকাতাবাসী তো। তাই এই শহরের মতো আমিও সবসময় পজিটিভ দিকটা দেখতে ভালবাসি। নেগেটিভ কোনও চিন্তাভাবনা থেকে মনেক দূরেই রাখি। সবার শেষে এই শহর ঘিরে দু’টো স্মৃতি। একটা হল জলসফরের। তখন থাকতাম রাজা বসন্ত রায় রোডে। বর্ষায় কলকাতা জলের তলায় ডুবে গেলে করতাম কী, বন্ধুরা মিলে চলে যেতাম গোলপার্কে। ওখানে এল নাইন বাসের ডিপো ছিল। রুট গোলপার্ক-সিঁথি। ডিপোতে টিকিট কেটে বন্ধুরা চেপে বসতাম ডাবল ডেকার বাসের দোতলায়। তার পর ডুবে থাকা কলকাতার রাজপথে ভাসতে ভাসতে সিঁথি। ওখান থেকে আবার পাল্টা এল নাইন ধরে বাড়ি। মগনলাল মেঘরাজের বজরায় গঙ্গাভ্রমণের মতো বলতে পারেন। কী যে অনাবিল আনন্দ পেতাম, বলে বোঝাতে পারব না।

এখনকার শৈশব-কৈশোর তো এ জিনিস পেলই না।আর একটা স্মৃতি হল আড্ডার। সেই আড্ডা বসত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের উল্টোদিকের মাঠে। বাবার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নির্মল নির্ভেজাল পারিবারিক আড্ডা। সন্ধ্যা পেরিয়ে চলতে সেই আড্ডা। আমার কাছে অন্যতম আকর্ষণ ছিল ওখানে গিয়ে ক্যাম্পাকোলা, পরে কোকাকোলা খাওয়া। তার পর তো কোকাকোলা অনেকদিন ছিলই না এই শহরে। এখন যতই কোল্ড ড্রিঙ্কস খাই না কেন, শৈশবের সেই স্বাদ কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে।

Advertisement