Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

১৯ এপ্রিল ২০২৪ ই-পেপার

অতিমারিতে কী অবস্থা পোশাকশিল্পের? বললেন কলকাতার চার ডিজাইনার

সৌমিত্র মণ্ডল বললেন '' ভাল ভাল কারিগর, যাঁদের হাতে কাজ নেই, কাজ দিয়েছি''।

শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী
কলকাতা ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:০৬

অতিমারি আমাদের সামাজিক বুনট যেমন পাল্টে দিয়েছে, তেমন বয়নশিল্পকেও আঘাত করেছে। কী বলছেন কলকাতার ডিজাইনাররা? কী ভাবে সামাল দিয়েছেন?

সৌমিত্র মণ্ডল :

অতিমারির আগেই আমি আমার আন্তর্জাতিক ব্র‌্যান্ড লঞ্চ করেছিলাম, তাই কাজ তো ছিলই। এর পাশাপাশি ভেবেছি, কারিগরদের কী ভাবে রক্ষা করা যায়। কারণ পুরোটাই টিম ওয়ার্ক। একা ভাবা যায়, কিন্তু একা কাজ করা যায় না। একে অতিমারি তার উপর আমপানে আমার ওয়ার্কশপের উপর টাওয়ার ভেঙে পড়ে। কিন্তু যত বড় বিপর্যয়ই হোক, আমি থেমে থাকিনি। কারিগরদের উদ্বুদ্ধ করেছি। ভাল ভাল কারিগর, যাঁদের হাতে কাজ নেই, কাজ দিয়েছি। একজনকে বেশি না দিয়ে ভাগ করে দিয়েছি সবার মধ‌্যে, যাতে সবাই খেয়ে পরে বেঁচে থাকে। তবে এটা ঠিক যে, বাজার স্থিতিশীল হতে সময় লাগবে। সোশ‌্যাল গ‌্যাদারিং হয় না তাই স্বাভাবিক ভাবে কেনাবেচা কমেছে। টার্নওভার কমেছে। ফলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিও প্রবল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

Advertisement

অভিষেক দত্ত:

অতিমারির ফলে এখন বিজনেস টার্নওভার অনেক কমেছে। আগে আন্তর্জাতিক স্তরে যে সব কাজ হত, এখন আর তা করা যাচ্ছে না। কারণ ইউরোপের বহু জায়গায় এখনও লকডাউন চলছে। বিয়ের মরসুমে ডিজাইনার ওয়‌্যারের চাহিদা রয়েছে, তবে তাও বেশ সীমিত। বিয়ের অনুষ্ঠানের পরিসরও ছোট হয়েছে, তাই বিপুল পরিমাণে কেনাকাটাও আর করছেন না কেউ। অন্য দিকে সবার ঘোরাফেরাও এখন সীমায়িত। তাই কেনাকাটাও কমে গিয়েছে। আর ডিজাইনার ওয়‌্যার তো সিজনাল। এক সিজনের জিনিসপত্রের সিজন চলে গেলে মূল‌্য থাকে না। এখন তো বেশির ভাগ কেনাকাটা অনলাইন। আমারও বেশির ভাগ কাজ অনলাইনে চলছে। বাজারের অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমাকেও বেশ কিছু জায়গায় কাটছাঁট করতে হয়েছে নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও। আমার ইন-হাউজ কারিগরদের রেখেছি। তবে ডিজাইনার ওয়‌্যার আগে যেটা অনেক বেশি তৈরি করে রাখতাম, এখন কমিয়ে দিয়েছি। কারণ মানুষ যতটুকু না হলে নয়, ততটুকুই কিনছেন। ২০২০-তে ইভেন্টও বন্ধ ছিল। এই নতুন বছরে আবার ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হচ্ছে। ইভেন্টও শুরু করার পরিকল্পনা করছি।

কোমল সুদ:

২০২০-তে অতিমারি অন্যান্য সমস্ত কিছুর মতো আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকেও খুব খারাপ ভাবে আহত করেছে। মার্কেট ডাউন। মানুষের আকাঙ্ক্ষাও অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। সবাই খুব প্রাইস কনশাস হয়ে গিয়েছে। ডিজাইনার ওয়্যার যেহেতু মরসুম ভিত্তিক হয়, সেহেতু একটা মরসুম চলে গেলে কালেকশনের গুরুত্ব কমে যায়। বিয়ের শপিং-এর ব্যাপারেও সবাই খুব সচেতনতার সঙ্গে খরচ করছে। একেবারে যতটুকু না হলে নয়, ততটুকুই খরচ করছে। খুব ভেবেচিন্তে তবে একটা জিনিস কিনছে।আমার ম‌্যানুফ‌্যাকচারিং টিম, ডিজাইনিং টিম, সেলস টিম থেকে স্টাফ কমাতে হয়েছে এক প্রকার বাধ্য হয়ে। কেয়ার ফ্রি শপিং-এর ব্যাপারটা আর নেই এবং এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও বেশ কিছু দিন লাগবে। আশা করছি, পরবর্তী উৎসব মরসুমে বাজার হয়তো উঠবে। স্প্রিং সামার কালেকশন লঞ্চ করব খুব তাড়াতাড়ি। এ ছাড়া নানা ইভেন্টেরও পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করি, পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক হবে।

অনুশ্রী মালহোত্র:

অতিমারির ফলে যেহেতু বাইরে বেরনো একেবারে কমে গিয়েছে, তার ফলে কেনাকাটা কমে গিয়েছে একেবারে। পুরোটাই অনলাইন। আমিও ক্রমে অনলাইনে কাজ শুরু করেছি। নিজের ওয়েবসাইট লঞ্চ করেছি।আমার কারিগরের বড় সেটআপ ছিল কিন্তু অর্ডার এত কমে গিয়েছিল যে, কারিগর কমিয়ে অর্ধেক করে দিতে হয়েছে। বিয়ের কিছু কাজ ছিল বলে কাজ করেছি। তাও বড় আকারে নয়, কারণ বিয়ের বাজেটও একেবারে কমে গিয়েছে। তবে কোনও কিছুর সবটা খারাপ হয় না। আমি অনলাইনে অনেক সড়গড় হয়ে গিয়েছি। অনেক নতুন বাইরের ক্লায়েন্টও পেয়েছি। নতুন বছরে ক্রমে সব স্বাভাবিক হচ্ছে। এখন আবার আস্তে আস্তে বিক্রি শুরু হয়েছে, এটা আশার কথা।

Advertisement