Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

২০ এপ্রিল ২০২৪ ই-পেপার

Sarees of Bengal: রসগোল্লার মতো বাংলার শাড়িতেও রয়েছে জিআই স্বীকৃতি, পেয়ে যাবেন এ শহরেই

জিওগ্রাফিকাল আইডেন্টিফিকেশন (GI)-এর অধীনে সারা দেশের যে কটি ঐতিহ্যবাহী শাড়ি জায়গা পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাংলার তিনটি বিখ্যাত শাড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:১২

জিওগ্রাফিকাল আইডেন্টিফিকেশন (GI) এর অধীনে সারা দেশের ঐতিহ্যবাহী শাড়ির মধ্যে রয়েছে বাংলার তিনটি বিখ্যাত শাড়ি

বাঙালি পোশাকের কথা উঠলেই শাড়ির প্রসঙ্গ প্রথমে আসতে বাধ্য। এবং সেই শাড়ি কিন্তু বিশেষ ইতিহাস বহন করায় তার স্বীকৃতিও পেয়েছে। টেক্সটাইল মন্ত্রক পণ্য আইন, ১৯৯৯ সালের ভৌগলিক পরিচয় বা জিওগ্রাফিকাল আইডেন্টিফিকেশন (GI) এর অধীনে তাঁতের পণ্যগুলির নিবন্ধনের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এর মধ্যে সারা দেশের যে কটি ঐতিহ্যবাহী শাড়ি জায়গা পেয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বাংলার তিনটি বিখ্যাত শাড়ি। এই তিন ধরনের শাড়িই কয়েক শতাব্দীর ঐতিহ্য বহন করে। এই সব শাড়ি কিন্তু কলকাতা শহরেই আপনি পেয়ে যাবেন সহজেই।

Advertisement
বালুচরী শাড়িকে ভারতে জিওগ্রাফিকাল আইডেন্টিফিকেশনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে

বালুচরী শাড়িকে ভারতে জিওগ্রাফিকাল আইডেন্টিফিকেশনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে


বালুচরী
এই শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মহিলাদের বিশেষ প্রিয়। এই বিশেষ ধরনের শাড়ির উৎপত্তি বাংলায়। শাড়িটি তার আঁচলের পৌরাণিক দৃশ্যের চিত্রায়নের জন্য পরিচিত। এ রকম একটি শাড়ি তৈরি করতে প্রায় এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লাগে। বালুচরী শাড়িকে ভারতে জিওগ্রাফিকাল আইডেন্টিফিকেশনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। অষ্টাদশ শতকে, বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খান এর সমৃদ্ধ বয়ন ঐতিহ্যের পৃষ্ঠপোষকতা করেন এবং এই শাড়ি তৈরির নৈপুণ্যকে ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদের বালুচর গ্রামে নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে শিল্পটি বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে চলে আসে। মল্ল রাজবংশের রাজত্বকালে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে শাড়ি শিল্পের উন্নতি ঘটে। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামলে রাজনৈতিক ও আর্থিক কারণে এই বালুচরী শাড়ির শিল্পটি মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে। কারণ বেশির ভাগ তাঁতিরা এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তী সময়ে এই শাড়ি তৈরি আবার শুরু হয় এবং এখন তো বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে মহিলারা বালুচরী শাড়ি পরার জন্য রীতিমতো দিন গুনতে থাকেন। কলকাতা শহরেই বিভিন্ন নামী-দামি বস্ত্রবিপণিতে নানা ডিজাইনের সুন্দর সুন্দর বালুচরীর খোঁজ মিলবে। কলকাতায় তন্তুজের একাধিক শাখা বা পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনুমোদিত বিশ্ব বাংলার দোকানগুলিতে আপনি পাবেন পছন্দসই বালুচরী। কারুকাজ অনুযায়ী এদের মূল্যও হবে ভিন্ন ভিন্ন।

পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে প্রিয় ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়িগুলির মধ্যে একটি হল ধনিয়াখালি

পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে প্রিয় ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়িগুলির মধ্যে একটি হল ধনিয়াখালি


ধনেখালি
ধনিয়াখালি বা ধনেখালি হুগলি-দামোদর সমভূমির একটি অংশ এবং বর্তমানে চিনসুরা মহকুমার মধ্যে অবস্থিত এই অঞ্চল, শাড়ি তৈরির জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে প্রিয় ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়িগুলির মধ্যে একটি হল ধনিয়াখালি শাড়ি যার নাম এর উৎপত্তিস্থল থেকে এসেছে। এই শাড়ি খুব অল্প সময়েই বাংলার সমস্ত প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। ধনিয়াখালি শাড়িকে তাঁতের শাড়ির ‘সোনার ফসল’ বলা হয়। ধনিয়াখালি শাড়িতেও কেন্দ্রীয় সরকার জি আই ট্যাগ রেখেছেন। এই শাড়িতে ঐতিহ্যগত ভাবে লাল বা কালো পাড় রাখা হত। তবে ক্রমশ অন্যান্য রঙের সুতোও ব্যবহার হতে থাকে। ধনিয়াখালি শাড়ি আজকাল হুগলির হরিপাল, রাজবলহাট রসিদপুর, দ্বারহাটা, রামনগর, গুরাপ এবং অন্তপুরে তৈরি হয়। ইদানীং কলকাতার জনপ্রিয় বুটিকগুলিতেও একটু খুজলেই খাঁটি ধনেখালি পেয়ে যেতে পারেন আপনি। দক্ষিণাপণে বেশ কিছু দোকানে মিলবে নানা মূল্যের ধনেখালি। তন্তুজেও রয়েছে ধনেখালির বিপুল সম্ভার। এ ছাড়া গড়িয়াহাট বা কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলের নামী বস্ত্রবিপণি তো রয়েছেই।

শান্তিপুরী শাড়ি কলকাতা শহরে পাওয়া যাবে বেশ কিছু দোকানে

শান্তিপুরী শাড়ি কলকাতা শহরে পাওয়া যাবে বেশ কিছু দোকানে


শান্তিপুরী
ভারতীয় তাঁত শাড়ির ইতিহাসে শান্তিপুর এবং ফুলিয়া উল্লেখযোগ্য নাম। শান্তিপুর এই দেশের ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো একটি তাঁতকেন্দ্র। পঞ্চদশ শতকের গোড়ার দিকে বৈষ্ণব সংস্কৃতি ও ভক্তি আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল শান্তিপুরে তাঁতের শাড়ি বয়নের কথা বিভিন্ন দলিলে নথিভুক্ত রয়েছে। পুরো মধ্যযুগ জুড়ে শান্তিপুরী শাড়ির বয়নশিল্পের বিকাশ ঘটেছিল, এবং বিখ্যাত নীলাম্বরী শান্তিপুরীর চাহিদার কথা এক সময় বাংলার ঘরে ঘরে শোনা যেত। যদিও এই অঞ্চল অতি সূক্ষ্ম সুতির ধুতি তৈরির জন্য সুপরিচিত ছিল কিন্তু চাহিদা কমে যাওয়ায় তাঁতিরা বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে এক সময় শাড়ি বুনতে শুরু করে। পরাধীন ভারতে ব্রিটিশরা প্রায়ই এই দেশের তাঁতিদের শোষণ করত যাতে তারা সেরা মসলিন, বস্ত্র এবং তুলো ইউরোপে নিয়ে যেতে পারে। বিদেশি বস্ত্র ব্যবসায়ীরা এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর মুনাফা করেছিল এবং বাংলার তাঁতিদের নিঃস্ব করে ফেলেছিল। শান্তিপুরের তাঁতিরা কিন্তু ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দাদনি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে একত্রিতও হয়েছিল। শান্তিপুরী শাড়ি কলকাতা শহরে পাওয়া যাবে বেশ কিছু দোকানে। তবে জি আই ট্যাগ দেখে কিনতে চাইলে একটু সময় নিয়ে ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত শাড়ির দোকানে হানা দেওয়াই সমীচীন। কলকাতার হ্যান্ডলুম হাউস, তন্তুজ, ইত্যাদি দোকানের শান্তিপুরী তাঁতের শাড়ি আপনার মন ভরিয়ে দিতে বাধ্য।

Advertisement