কলকাতায় বেড়ানোর লিস্টে প্রথম যে কয়েকটি একেবারে অবশ্যই দর্শনীয় স্থান, তার মধ্যে জাদুঘর একটি। জাদুঘর বলতেই ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম-এর কথা মনে হয়। কিন্তু কলকাতা ও তার নিকটবর্তী কিছু জায়গাতে বেশ কিছু জাদুঘর রয়েছে। তার মধ্যে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মিউজিয়ামএকটি। মুদ্রা ও তার যাবতীয় কিছু নিয়ে এই সংগ্রহালয়। বিবাদি বাগ এলাকায় ৮ নম্বর কাউন্সিল হাউজ স্ট্রিট ভবনটি আজ ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মিউজিয়াম। এক সময়ে এই ভবনটি ছিল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ১৯৩৫ সালের ১ এপ্রিল এখান থেকেই শুরু হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পথ চলা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রথম গর্ভনর এখানেই বসতেন।
মিউজিয়ামের দরজা দিয়ে ঢুকে অভ্যর্থনা কক্ষে রয়েছে কারেন্সি নোটের জীবনচক্র, অর্থাৎ একটা নোটের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পথ চলা। রয়েছে একটি বিশাল থাম, যার গায়ে পুরনো সোনালি রঙের দশ পয়সার কোলাজ। আর রয়েছে ছেঁড়া, ফাটা, বাতিল নোটের টুকরো দিয়ে তৈরি উপহার সামগ্রী।
বিশাল বড় এক টাকার মুদ্রা আকৃতির মধ্যে দিয়ে প্রবেশ। এখানে দেখা যাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইতিহাস, পুরনো টাকা-পয়সা সম্পর্কিত তথ্যচিত্র।
পৃথিবীতে কী ভাবে বিনিময় প্রথা থেকে বর্তমান টাকা পয়সার আবির্ভাব, তাও দেখতে পাবেন। দেখা যাবে বিভিন্ন আকৃতির ‘ফানি মানি’। এক সময়ে নুন, পাথর, কড়ি মুদ্রা হিসাবে ব্যবহার করা হত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুদ্রাও নোট দেখা যাবে এখানে। নানা মুদ্রিকার দর্শন মিলবে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘গোল্ড ভল্ট’ কেমন দেখতে, কী ভাবে সোনার বার রাখা থাকে, কী ভাবে সেখানে কাজ হয়, সোনার একটি বারের ওজন কেমন, তাও নিজের হাত দিয়ে তুলে দেখা যায়।
Advertisement

ওয়েইং মেশিনে তো নিজের ওজন মাপাই হয়। কিন্তু কেমন হয় যদি নিজের ওজনের সমতুল্য ক’টি সোনার বার হয়, তা জানতে পারতেন? এমন ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে, চাইলে মাপতেই পারেন।
এ বার বলি আরও কী কী দেখতে পাবেন—
ভারতের ক্ষুদ্রতম পয়সা ‘পাই’ পয়সা দেখে নিন এই মিউজিয়ামে। এক সময়ে ভারত সরকারের বিভিন্ন বন্ড ছাপা হত কলকাতা অফিসের পিডিও প্রেস থেকে। হাতে চালানো সেই ছাপা মেশিন এখানে রাখা আছে। এক সময়ে যে মেশিনে কোটি কোটি টাকার বন্ড ছাপা হত, সেই মেশিনে আপনার নামেও একটি বন্ড ছেপে নিন যা এক অমূল্য সম্পদ হিসাবে আপনার কাছে থেকে যাবে।
মিউজিয়ামের ম্যাজেনাইন ফ্লোরে রয়েছে খেলার জায়গা। খেলার মাধ্যমে শিশু কিশোররা যেমন ফাইন্যানশিয়াল লিটারেসি সম্বন্ধে অবগত হতে পারবে, ব্যাঙ্ক সম্বন্ধীয় প্রয়োজনীয় তথ্যও জানতে পারবে।
এই জাদুঘর মঙ্গলবার থেকে রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা। কোনও প্রবেশমূল্য নেই। গ্রুপ করে যেতে চাইলে প্রি-বুকিং করে যেতে পারেন।
ফিরতি পথে পুরনো টাকা দিয়ে তৈরি উপহার সামগ্রী অবশ্যই সংগ্রহ করবেন।