Kali Puja 2025

‘মধ্যরাতে হঠাৎ ঘরে ধস্তাধস্তির শব্দ…গ্যাংটকের সেই রাত আজও ভোলার নয়’, ভূতচতুর্দশীর আবহে অভিজ্ঞতা লিখলেন তনিমা সেন

গ্যাসে তখন আগুন জ্বলছে। উপরে বসানো চাটু। কোনও রকমের পড়ি কি মরি করে ছুটে তিন তলা থেকে নেমে খালি পায়েই দিলাম দৌড়। পথে এক জনের সঙ্গে ধাক্কা!

Advertisement

তনিমা সেন

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ২০:০৭
Share:

সংগৃহীত চিত্র।

‘তেনাদের’ অস্তিত্ব আছে কি নেই, সেই তর্কে আমি যাবই না। বরং শুরুতেই বিজ্ঞপ্তি জারি করছি, ছোট থেকে আমার ভূতে ভীষণ ভয়। এই ভীতির পরিমাণটা যে কতখানি, তার একাধিক নমুনা মুহূর্তে খাড়া করতে পারি আমি। এমনই একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক।

Advertisement

বহু বছর আগের কথা। সল্টলেকে তখন সংসার। সন্ধেটা প্রায়শই আমি আমার বাপের বাড়িতেই কাটাতাম। বর কাজে যেতেন এবং ফেরার সময়ে একে বারে আমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু এক দিন ঘটল ব্যতিক্রম। ওই দিন আমি নিজের বাড়িতেই ছিলাম। ভূতের ভয়ে সারা বাড়িতে আলো জ্বালিয়ে রেখেছি। বরের আসতে দেরি হচ্ছে দেখে ভাবলাম রুটিটা করেই নিই। এই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। হঠাৎ লোডশেডিং! একেই ভয়ে কাবু, উপরন্তু দোসর অন্ধকার। এক কথায়, যাকে বলে, আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়!

গ্যাসে তখন আগুন জ্বলছে। উপরে বসানো চাটু। কোনও রকমের পড়ি কি মরি করে ছুটে তিন তলা থেকে নেমে খালি পায়েই দিলাম দৌড়। পথে এক জনের সঙ্গে ধাক্কা! ঠিক কী করেছিলাম ওই সময়ে, স্পষ্ট মনে নেই। কেবল মনে আছে, একটা জোরে আওয়াজ কানে এসেছিল, ‘ওরে বাব্বা!’

Advertisement

কিন্তু আমার সেই সবে কান দেওয়ার তখন সময় কোথায়! আমি ছুটে গেলাম কাছাকাছি একটি মিষ্টির দোকানে। বসলাম। আর এই প্রথম বার হাঁপটা ছাড়লাম। আমি আর বাড়িমুখো হইনি। ওখানেই বসে অপেক্ষা করতে করতে এক সময়ে দেখি ওই দোকানেই আমার বর আসছেন। এসে দেখেন তাঁর বউ বসে। তার পর আর কী, ওই অবস্থাতেই বাড়ি ফিরলাম। সেখানে এসে দেখি আরেক কাণ্ড!

ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে বাড়ি। জ্বলন্ত গ্যাসে বসানো রুটির চাটুটার অবস্থা বড়ই শোচনীয়। যদিও সেটাই স্বাভাবিক। রুটি করতে করতেই তো ছুট দিয়েছিলাম। শুধু আমার অবিশ্বাস্য রকম ভূতের ভয়ের কারণেই ওই দিন একটা বড়সড় অঘটন ঘটে যেতে পারত। কিন্তু ঠাকুরের কৃপায় এমনটা কিছুই হয়নি।

কিন্তু এ তো গেল মজার ঘটনা। এ বার একটু গায়ে কাঁটা দেওয়া যাক। ভূতের অভিজ্ঞতা লিখতে বসে একটু ‘সিরিয়াস’ না হলে মজা নেই।

সে বার মেয়ে জামাইদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছি গ্যাংটক। আমার নাতি তখন অনেক ছোট। প্রথমে ট্রেন। তার পর শিলিগুড়ি থেকে বাসে করে গ্যাংটকের পথ। সেখানেই একটি দম্পতির সঙ্গে নিজে থেকে আলাপ করে নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছিলাম। আমার জামাইয়ের বন্ধু আগেভাগেই গ্যাংটকে হোটেল বুক করে রেখেছিলেন। কিন্তু বাসের সেই দম্পতির কোনও বুকিং ছিল না। আমরাই প্রস্তাব দিলাম আমাদের সঙ্গে ওই হোটেলে যাওয়ার। আর সেটাই হল বিপত্তি!

হোটেলে গিয়ে দেখি আর কোনও ঘর ফাঁকা নেই, শুধু মাত্র আমাদের দুটি ঘর বাদ দিয়ে। ইতিমধ্যেই বাইরে সন্ধে নেমেছে। আর আমাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। আমরা তো ওই দম্পতিকে নিয়ে এসে অপ্রস্তুতে পড়লাম। কী করা যায়! কী করা যায়! এমন সময়ে রিসেপশন থেকে আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হল সেই রাতটা একটা ‘ডরমিটরি’ ঘরে কাটাতে। পরের দিনের মধ্যে নতুন ঘরের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সেই মতোই ঠিক হল।

আমরা ওই ঘরে গিয়ে দেখি, ছ’খানা খাট পাতা। দুটো দুটো করে জোড়া করে নিলাম সেগুলিকে। একটিতে আমি আর আমার বর, আর অন্যটিতে মেয়ে, জামাই ও তাঁদের সন্তান।

মধ্যরাত। একটি ডিম লাইটের আলো বেশ মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। হঠাৎ শুনতেই, আমার বর অদ্ভুত একটি আওয়াজ করছেন, ‘হুশ হুশ!’ প্রশ্ন করলাম, “কী হয়েছে?” বললেন, “বেড়াল ঢুকেছে হয়তো।” আমিও শুনতে পারছি কেমন যেন খচ্‌খচ্‌ শব্দ সারা ঘর জুড়ে।

অবশেষে উঠলাম। বড় আলো জ্বালালাম। পুরো ঘরে চিরুনি তল্লাশি করেও অন্য কারও দেখা পাওয়া গেল না। আমার মেয়ে-জামাইরা তখন গভীর ঘুমে। যেন এই আওয়াজ বা আমাদের এত কাণ্ড কারখানার শব্দ, কিছুই ওদের কান পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে না।

আওয়াজটিকে মনের ভুল ভেবে আমরা ফের শুলাম। সবে তন্দ্রা এসেছে, এমন সময়ে ফের সেই শব্দ! ‘খচর খচর…’ সারা ঘরময় যেন ধস্তাধস্তি চলছে। আবার উঠলাম। এ বার পুরো আলমারি খুলে খুঁটিয়ে দেখলাম ভিতরটা। ড্রেসিং টেবিল সরিয়ে দেখলাম কোনও ইঁদুর, বেড়াল রয়েছে কি না। কিন্তু কোথায় কী! তৃতীয়বার ঘুমোতে যাওয়ার চেষ্টা করাও হল বৃথা। ফের সেই শব্দের উৎপাত। আমি আর আমার স্বামী একে অপরের দিকে তখন মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি। দু’চোখের ঘুম তত ক্ষণে পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে। অবশেষে ভোরের আলো ফুটল। বাইরের রিসেপশনে গিয়ে রাতের সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করলাম। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে বিষয়টিকে কিছুটা এড়িয়ে গিয়েই তাঁরা জানালেন, অন্য ঘর ফাঁকা হয়েছে, আমরা চাইলে চলে যেতে পারি। আর এক মুহূর্তও থাকিনি ওই ঘরে।

এই ঘটনার পর এত বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ঘটনাটি বলতে গিয়ে আজও আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। কারণ, সেই দিনের সেই শব্দ নিছকই আমাদের মনের ভুল ছিল না। আমি আর স্বামী, দু’জনেই সমস্ত আওয়াজ শুনেছি। ঘর ঘর করে টেবিল, আলমারি সরিয়ে শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে সারারাত জেগেছি। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল, এর কিছুই ঘুণাক্ষরে আঁচ পায়নি আমার মেয়ে, জামাইরা…

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement