হেয়ার স্টাইলিং এখন আর শুধু ফ্যাশন নয়, কার্যত এটি জীবনেরই অঙ্গে পরিণত হয়েছে! কিন্তু, সমস্যা হল - রিলস তৈরি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে আরও জনপ্রিয় করে তোলার জন্য আজকাল অনেকেই চুলের উপর নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করেন। যা থেকে চুল স্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই, এগুলি থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত অথবা সতর্ক হওয়া উচিত। চলুন, জেনে নিই এমন কিছু স্টাইলিং এবং কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে, যা আমাদের এড়িয়ে চলা দরকার।
অতিরিক্ত ব্লিচিং: চুলের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন করে হালকা করতে বা উজ্জ্বল রং করতে ব্লিচিং করা হয়। কিন্তু, এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত রাসায়নিক চুলের কিউটিকল খুলে দেয় এবং চুলের ভিতরের প্রোটিন উপাদানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে চুল শুষ্ক, দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। অতিরিক্ত ব্লিচিং চুলের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
পার্মানেন্ট রিবন্ডিং বা স্ট্রেটনিং: অনেকে সোজা, মসৃণ চুলের জন্য পার্মানেন্ট রিবন্ডিং বা স্ট্রেটনিং করান। এই প্রক্রিয়ায় এমন কিছু শক্তিশালী কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যা চুলের গঠন পুরোপুরি বদলে দেয়। এর ফলে চুল অত্যধিক দুর্বল হয়ে যায় এবং সহজেই ভেঙে যেতে পারে। নিয়মিত এই ট্রিটমেন্ট করালে চুলের গোড়া আলগা হয়ে যায় এবং চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হেয়ার ডাই এবং রঙে অ্যালার্জি: ফ্যাশনের জন্য অনেকেই চুল রঙিন করেন। কিন্তু কিছু হেয়ার ডাই-এ ব্যবহৃত রাসায়নিক, যেমন প্যারাফিনাইলেনেডিয়ামাইন অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। এর ফলে মাথার ত্বক চুলকানো, লাল হয়ে যাওয়া বা তাতে ফুসকুড়ি হতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে এটি আরও মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই চুল রঙ করার আগে প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া জরুরি।
হট অয়েল ট্রিটমেন্ট: চুলে পুষ্টি জোগানোর জন্য অনেকেই হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করান। কিন্তু তেল অতিরিক্ত গরম করলে তা চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এমনকী, বেশি গরম তেল মাথার ত্বকের কোষ পুড়িয়ে পর্যন্ত দিতে পারে! যা চুলের ফলিকলের ক্ষতি করে এবং চুল পাতলা করে দেয়।
টাইট হেয়ারস্টাইল: লম্বা সময় ধরে চুল খুব টাইট করে বেঁধে রাখা, যেমন টাইট পনিটেল বা বান, চুলের গোড়ার উপর চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে ট্র্যাকশন অ্যালোপেসিয়া নামক এক ধরনের চুল পড়ার সমস্যা হতে পারে। যেখানে মাথার চুল গোড়া থেকে দুর্বল হয়ে ঝরে পড়ে।
অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং: হেয়ার ড্রায়ার, কার্লিং আয়রন বা ফ্ল্যাট আয়রনের মতো হিট স্টাইলিং টুলস অতিরিক্ত ব্যবহারে চুল পুড়ে যেতে পারে বা শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। উচ্চ তাপ চুলের প্রাকৃতিক তেল ও আর্দ্রতা শুষে নেয়, ফলে চুল রুক্ষ ও দুর্বল হয়ে যায়।
ভেজা চুল আঁচড়ানো: অনেকেই ভেজা চুল আঁচড়ান, যা চুলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ভেজা অবস্থায় চুল খুবই দুর্বল থাকে। এই সময় আঁচড়ালে চুল খুব সহজে ভেঙে যায়। ভেজা চুল শুকাতে অন্তত ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করা উচিত।
চুলের নিয়মিত রাসায়নিক পার্মিং: অনেকে চুলকে কোঁকড়া করার জন্য কেমিক্যাল পার্ম করান। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত রাসায়নিক চুলের ভেতরের প্রোটিন ভেঙে দেয় এবং এর গঠন পরিবর্তন করে। নিয়মিত পার্মিং চুলের স্থায়ী ক্ষতি করে এবং চুল ভঙ্গুর করে তোলে।
নকল চুলের এক্সটেনশন: চুল ঘন দেখানোর জন্য হেয়ার এক্সটেনশন লাগানো হয়। যদিও এটি দেখতে সুন্দর লাগে, কিন্তু এর কারণে চুলের গোড়ায় অতিরিক্ত চাপ পড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে এক্সটেনশন ব্যবহার করলে চুলের ফলিকল দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং চুল পড়া বাড়তে পারে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।