Kali Puja 2025

কালের নিয়ন্ত্রণকারী কালী আদতে কে?

দশমহাবিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা হলেন দেবী কালিকা। জগতের কালশক্তি কালীর অন্তরে লীন হয়। কালী কেবল শাক্তের আরাধ্যা দেবী নন, তিনি জগজ্জননী।

Advertisement

সৌভিক রায়

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:১৬
Share:

প্রতীকী চিত্র।

দশমহাবিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা হলেন দেবী কালিকা। তিনি কালের নিয়ন্ত্রণকারী। তাই বলা হয়, ‘কাল শিবহ্। তস্য পত্নতি কালী।’ কাল হলেন শিব এবং তাঁর স্ত্রী কালী। মহাকাল ও মহাকালী এক এবং অভিন্ন। আবার কালী ও দুর্গাও এক এবং অভিন্ন। দেবীপুরাণ অনুসারে, দেবী দুর্গার অন্যতম রূপ কালী। দুর্গাপুজোর মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে সন্ধিপুজোর বলি গ্রহণ করেন দেবী চামুণ্ডা। তিনি কালীরই রূপ। শ্রীশ্রী চণ্ডীতে দেবী স্বয়ং বলেছেন, ‘একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মমাপরা’ অর্থাৎ ‘এই জগতে আমি ছাড়া দ্বিতীয় আর কে আছে!’

Advertisement

কালী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ। জগতের কালশক্তি কালীর অন্তরে লীন হয়। কালী কেবল শাক্তের আরাধ্যা দেবী নন, তিনি জগজ্জননী। বলা হয়, ‘কালী চ জগতাং মাতা সর্বশাস্ত্রেষু নিশ্চিতা।’ অর্থাৎ প্রতিটি শাস্ত্রে রয়েছে কালী জগতের মা। তিনি সৃষ্টি, তিনিই লয়। কালী মৃত্যুর দেবীও। বিবেকানন্দের ‘কালী দ্য মাদার’-এর অনুবাদে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত চমৎকার ভাবে মৃত্যুর দেবী কালীর পরিচয় দিয়েছেন, ‘করালি! করাল তোর নাম, মৃত্যু তোর নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে/ তোর ভীম চরণ-নিক্ষেপ প্রতিপদে ব্রহ্মাণ্ড বিনাশে!/ কালী, তুই প্রলয়রূপিণী, আয় মা গো আয় মোর পাশে।’

কালিকা পুরাণ অনুসারে, দুই দৈত্য শুম্ভ ও নিশুম্ভের অত্যাচারে স্বর্গলোক থেকে বিতাড়িত হন দেবরাজ ইন্দ্র-সহ দেবতারা। স্বর্গলোক ফিরে পেতে দেবী মহামায়া পার্বতীর আরাধনা শুরু করেন ইন্দ্র। দেবী সন্তুষ্ট হন। দেবীর দেহের কোষ

Advertisement

থেকে সৃষ্টি হয় অন্য এক দেবীর, যার নাম কৌশিকী। ‘শরীর কোষতশ্চাস্যা সমদ্ভূতাভবচ্ছিবা’ অর্থাৎ পার্বতীর দেহ কোষ থেকে কৌশিকীর উৎপত্তি, কোষ থেকে সৃষ্টি বলে নাম কৌশিকী। দেবী কৌশিকীর গাত্রবর্ণ অমাবস্যার রাতের মতো কালো। দেবী কৌশিকী হলেন কালীর আদিরূপ।

অসুরদের তাণ্ডবলীলা চলছে। অসুরদের প্রধান সেনাপতি রক্তবীজ। ব্রহ্মার বরে সে বলিয়ান। এক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়া মাত্র জন্ম হচ্ছিল অসুরদের। কী ভাবে হবে অসুর নিধন? তখন মা দুর্গা নিজ ভ্রু যুগলের মধ্য থেকে জন্ম দেন মা কালীর। একে একে অসুর নিধন শুরু করেন দেবী। আর অসুরদের বংশবিস্তার রুখতে তাদের দেহের রক্ত পান করতে থাকেন। রক্তবীজকে বধ করে সমস্ত রক্ত পান করেন কালী।

সর্বসংহারিণী এই কালীই বাংলার, বাঙালির ঘরের মেয়ে হয়ে উঠেছেন। প্রাচীনকালে কালীর আরাধনা হত কালীযন্ত্রে, প্রতীকে। শ্মশানে, জঙ্গলে লোকচক্ষুর আড়ালে, নিভৃতে কালী সাধনা করতেন তান্ত্রিক, কাপালিক, সাধকেরা। তার পর এক দিন নদিয়ার কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ দেবীর রূপ দান করলেন। তাবৎ বঙ্গের দেবী হয়ে উঠলেন শ্মশানবাসিনী কালী, ‘কালিকা বঙ্গদেশে চ’। বাংলা ও বাঙালির রক্ষাকর্ত্রী হলেন। তিনি মাতৃশক্তি, মা। আবার রামপ্রসাদ, রামকৃষ্ণ পরমহংস, কমলাকান্ত, বামাক্ষ্যাপাদের হাত ধরে মেয়ে অর্থাৎ বাঙালির কন্যা হলেন কালী।

বাংলায় বাহুবলের সঙ্গেও মিশে আছেন কালী। বরাবর তিনি থেকে গেলেন শক্তি সাধনার মাধ্যম হিসাবে। একদা বিপ্লবীরা কালীর সামনে দেশ স্বাধীন করার শপথ নিতেন। বাংলার ‘রবিন হুড’ ডাকাতেরা কালীর আরাধনা করে ডাকাতি করতে বেরোত। ধনী, বিত্তবানদের সম্পদ ছিনিয়ে এনে গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিত। রাজনৈতিক নেতা, গুন্ডা, পুলিশ সকলে তাঁর পুজো করেন। গুন্ডা থেকে কসাই, জমিদার থেকে রাজা, গৃহী থেকে ত্যাগী, সন্ন্যাসী সবাই কালীর সামনে মাথা নোয়ান। এ ভাবে কালী হয়ে উঠেছেন ভাল-মন্দ সকলের আরাধ্যা। তাই সর্ব অর্থেই কালিকা বঙ্গের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement