অ-মিল

বারাক ওবামার পরিচিতি লইয়া সন্দিহান ব্যক্তিদের আন্দোলনকে মৌখিক ভাবে উক্ত বিশেষ্যে চিহ্নিত করা হইয়া থাকে। ওবামা যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, সেই দিন হইতে তাঁহার বিরুদ্ধে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত অভিযোগ উঠিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ০০:০১
Share:

ছবি রয়টার্স

বিগত মাসের শেষ সপ্তাহে ডেমোক্র্যাটদের বিতর্কসভায় প্রাক্তন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বর্ণবিদ্বেষ প্রসঙ্গে আক্রমণ করিয়াছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিক কমলা হ্যারিস। ইহার পর ক্যালিফর্নিয়ার এই সেনেটরের বিরুদ্ধেও পাল্টা অভিযোগ উঠিয়া যায়— নির্বাচনী মঞ্চে সুবিধা পাইবার উদ্দেশ্যে নিজেকে আফ্রো-আমেরিকান প্রমাণ করিবার চেষ্টা করিতেছেন হ্যারিস, যাহা তিনি নহেন। তাঁহার মা ভারতীয়, বাবা জামাইকান, অতএব তিনি ‘তত কালো নহেন’। আলি আলেকজ়ান্ডার নামধারী এক দক্ষিণপন্থী হ্যারিসকে খোঁচা দিয়ে টুইটারে লেখেন, ‘ইঁহারা আমার লোক, আপনার নহে।’ যথেষ্ট কৃষ্ণাঙ্গ না হইবার অভিযোগের ভিত্তিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যারিসের অযোগ্যতা ‘প্রমাণিত’ হইতে থাকে, এবং আলির বক্তব্য রিটুইট করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। আবার হ্যারিসের পাশে দাঁড়াইয়া পাল্টা আক্রমণের কৌশলকে ‘বর্ণবিদ্বেষমূলক’ তকমা দিয়াছেন সেনেটর এলিজ়াবেথ ওয়ারেন। লক্ষণীয়, রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট দুই তরফেই হ্যারিসের সঙ্গে গোলযোগটি বর্ণ সংক্রান্ত। তবে কি তাঁহার পরিচয় লইয়া স্বস্তি বোধ করিতেছে না মূলস্রোতের মার্কিন রাজনৈতিক আখ্যান?

Advertisement

উক্ত গোলযোগ তথা সঙ্কট বস্তুত দ্বিবিধ। প্রথমত বার্থেরিজ়ম। বারাক ওবামার পরিচিতি লইয়া সন্দিহান ব্যক্তিদের আন্দোলনকে মৌখিক ভাবে উক্ত বিশেষ্যে চিহ্নিত করা হইয়া থাকে। ওবামা যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, সেই দিন হইতে তাঁহার বিরুদ্ধে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত অভিযোগ উঠিয়াছে। কেহ বলিয়াছেন, ওবামা জন্মগত ভাবে মার্কিন নহেন, তিনি ব্রিটেন ও আমেরিকা দুই দেশেরই নাগরিক, অতএব ভোটে দাঁড়াইবার সাংবিধানিক অধিকার তাঁহার নাই। ওবামার বিরুদ্ধে এই আক্রমণ তাঁহার সমগ্র কার্যকাল জুড়িয়া, এমনকি অবসরের পরেও, হইয়াছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও রাজনীতির অঙ্গনে পূর্বসূরিকে কটাক্ষ করিতে ছাড়েন নাই। শেষাবধি যাবতীয় অভিযোগই আসলে বর্ণবিদ্বেষের সুপ্ত বীজ। ভারতীয় বংশোদ্ভূত হ্যারিসের ক্ষেত্রেও কথাটি খাটিবে। তবে তাঁহার বিপদটি অধিক কুটিল। এই স্থলে আসে দ্বিতীয় অভিমুখ— হ্যারিসের পরিচিতিকে কোন খোপে আঁটাইবে বর্তমান রাজনীতির ছক— নিশ্চিত হইতে পারিতেছেন না বাইডেন বা ট্রাম্প উভয়ই।

আপন রাজনীতিকে পোক্ত করিতেই ট্রাম্পের ন্যায় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী নেতা চাহিতেছেন, সমগ্র আখ্যানটিই নিয়ন্ত্রিত হউক তাঁহার ছকে। বিরোধিতাও সেই ছকে হইলে ট্রাম্পের লাভ। হ্যারিস বাহিরে আছেন বলিয়াই বিপদ। ট্রাম্প যদি কেবল শ্বেতাঙ্গ ও ভূমিপুত্রদের কথা বলেন এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও অভিবাসীদের ঐতিহ্য তুলিয়া ধরেন বিরোধীরা, তাহা হইলে দ্বিমেরু রাজনীতির সূত্রে ট্রাম্পের লাভ হইতে পারে। কিন্তু তৃতীয় ধারার বেমানান কাহিনি উপস্থিত হইলে আর হিসাব মিলে না। অতএব বারংবার রাজনীতিকে মুখোমুখি পরিচিত আইডেন্টিটির গণ্ডিতে ঠেলিয়া দিবার প্রয়াস। ভারতীয় শাসকের চরিত্রেও তদ্রূপ বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এনআরসি, কাশ্মীর, পাকিস্তান, যে বিষয়ই উঠুক, সমর্থন বা বিরোধিতার মধ্য দিয়া বিষয়টি সর্বক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করিতে থাকিবে সর্বশক্তিমান শাসক। নতুবা তিনি সর্বশক্তিমান হইয়া টিকিয়া থাকিবেন কী উপায়ে?

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন