নিজস্ব চিত্র।
খাস কলকাতায় আইন কলেজে ধর্ষণের ঘটনার জের। অভিযুক্ত অস্থায়ী কর্মীর পাশাপাশি এ বার চাকরি গেল কলেজের আরও দুই অস্থায়ী কর্মীর। অভিযুক্ত অস্থায়ী কর্মীর সঙ্গে বাকি দুই কর্মীকে একইসঙ্গে ২০২৪ সালের ২ জুলাই নিয়োগ করা হয়েছিল।
গত ৭ জুলাই কলেজ পুনরায় খোলে এই ঘটনার পর। তারপর প্রথম পরিচালন সমিতির বৈঠক হয় কলেজ ক্যাম্পাসে। বৃহস্পতিবার এই বৈঠকে কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্যদের পাশাপাশি পরিচালন সমিতির সভাপতি অশোক দেবও উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে কলেজে এই মুহূর্তে আর কোনও অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হবে না। বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমিত অধিকারী— যে দু'জন অস্থায়ী কর্মী ছিলেন তাঁদের মেয়াদ ১৬ জুলাই শেষ হয়েছে। এই দু'জনকে কাজে আর পুনর্বহাল করা হচ্ছে না। যদিও কলেজ সূত্রের খবর, ১৬ জুলাই আগেই তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর কাজে আসতে হবে না।
সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ঘটনার পর অভিযুক্ত অস্থায়ী কর্মীর সঙ্গে বেশ কয়েকজন অস্থায়ী কর্মীর নাম সামনে উঠে এসেছিল। যাঁরা কলেজকে নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ করেছিলেন অনেকেই। এমনকি সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণও ছিল এই অস্থায়ী কর্মীদের হাতে। এমন অভিযোগ করেছিলেন পড়ুয়া থেকে কলেজের শিক্ষকেরা।
অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে সরকারের তরফ থেকেও কলেজকে গাইডলাইন বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দু'ঘণ্টা বৈঠক শেষে পরিচালন সমিতির সভাপতি অশোক দেব বলেন, ‘‘যাঁরা এই কলেজে কাজ করছিলেন তাঁরা কেউ স্থায়ী বা ক্যাজুয়াল স্টাফ নয়। তাঁদের মেয়াদ ৪৫ দিন করে থাকত। আর তাঁদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হল না।’’
অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ কোনও আইন মানেনি। অস্থায়ী কর্মীদের তথ্য জানতে তিনটি পৃথক আরটিআইও হয়েছে বলে কলেজ সূত্রের খবর। এই আরটিআইগুলির যথাযথ জবাব দেওয়া হবে বলে এ দিনের পরিচালন সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত সদস্য শিবরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত হয়েছে আপাতত অস্থায়ী কর্মী আর নিয়োগ করা হচ্ছে না। যদি কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন হয়, তা হলে আইন মেনে, সরকারকে জানিয়ে অস্থায়ীকর্মী নিয়োগ করা হবে।’’
ঘটনার আগেও কলেজে সিসি ক্যামেরা ছিল। কিন্তু সেই সিসি ক্যামেরা পর্যাপ্ত ছিল না। বলে পুলিশের তরফ থেকেই জানান হয়েছিল। পরবর্তীকালে তদন্ত শুরু হওয়ার পর পরই পুলিশের তরফ থেকে কলেজে আলাদা করে ১২ সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। ১৫ অগস্ট এর মধ্যে ই-টেন্ডার ডেকে কলেজে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হবে। এমনকি কলেজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এ বার প্রাক্তন সেনা কর্মীদের কলেজের নিরাপত্তা রক্ষিত দায়িত্বে রাখা হবে। আপাতত দু'জন নিরাপত্তারক্ষী রাখা হবে। বলে পরিচালন সমিতির বৈঠকে ঠিক করা হয়েছে।
উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলেজের ঘটনা এখন বিচারাধীন। পরিচলন সমিতির বৈঠক নিয়ে আমি বাইরে কিছু বলব না। দোষীরা যাতে শাস্তি পায়, এটাই আমরা সকলে চাই। পড়ুয়াদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সুনিশ্চিত করা হবে।’’
শুধু তাই নয়, বিশাখা গাইডলাইন মেনে তৈরি হবে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (আইসিসি)। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই কমিটিতে ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের মধ্যে থেকে থাকবেন দু'জন মহিলা। পরিচালন সমিতি থেকে এক জন থাকবেন। বাইরে থেকে একজন বিশিষ্ট সমাজকর্মী ঋতুশ্রী চক্রবর্তী।
এ ছাড়াও পরিচলন সমিতির সভাপতি অশোক জানান, শীঘ্রই কলেজের দেওয়াল পরিষ্কার করা হবে। সমস্ত স্লোগান মুছে ফেলা হবে। সেই কাজ দু-একদিনের মধ্যে শুরু হবে।
(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। সেই কারণে আনন্দবাজার ডট কম কসবার ধর্ষণকাণ্ডে তিন অভিযুক্তের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে)