প্রতীকী চিত্র।
উচ্চমাধ্যমিক স্তরে যাঁরা কলাবিভাগ থেকে পড়াশুনো করে উচ্চশিক্ষার পথে পা বাড়ান, তাঁদের অনেকেরই পছন্দের বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান। এ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাবিভাগের অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জন্যই সবচেয়ে বেশি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। কিন্তু কী আছে এই বিষয়ে, যা নিয়ে পড়ার আগ্রহ এত বেশি, কোন কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়, কোথায়ই বা চাকরির সুযোগ রয়েছে, তা জানাতেই এই প্রতিবেদন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞানের এমন একটি বিষয়, যা থেকে ক্ষমতা ও রাজনীতির খুঁটিনাটি জানা যায়। আন্তর্জাতিক থেকে দেশ, রাজ্য থেকে স্থানীয় স্তরে সরকারি বা প্রশাসনিক কাঠামো কেমন হওয়া উচিত— সব নিয়ে বিশদ জানা যায় এই বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করলে। যা শুধু পড়ুয়াদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে না। চারপাশের বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনাতেও সাহায্য করে।
দেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এই বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স পড়ানো হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
*দেশে—
১) জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়।
২) দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়।
৩) জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
৪) হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়।
৫) বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়।
*পশ্চিমবঙ্গ—
১) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
২) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
৩) প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।
৪) রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।
৫) বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।
বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের পর শুধুমাত্র এই বিষয় পড়ানোতে সীমাবদ্ধ থাকে না পড়ুয়াদের পছন্দের পেশা। সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রেও একাধিক চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়।
কী কী সুযোগ রয়েছে?
১) স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা: রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে স্নাতক হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক ভাবে যে পেশাটি বেছে নিতে পারেন, সেটি হল স্কুল বা কলেজের শিক্ষকতা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক বিষয়গুলি সহজ ভাবে অন্যদেরকে বোঝানোতে যদি কেউ দক্ষ হন, তা হলে তাঁদের ক্ষেত্রে এই পেশাই আদর্শ। স্কুলে এই বিষয়টি পড়াতে হলে শিক্ষার্থীদের বিএড ডিগ্রি লাভ করতে হবে স্নাতক হওয়ার পর। এর পর সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার জন্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে ও ইন্টারভিউও দিতে হবে। বেসরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে অবশ্য বিএড ডিগ্রি পাশের পর এই জাতীয় কোনও পরীক্ষা দিতে হয় না। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট স্কুলের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হয়। অন্য দিকে, কলেজে পড়াতে হলে স্নাতকোত্তর স্তরে ৫৫ শতাংশ নম্বর-সহ নেট/সেট পরীক্ষাতেও পাশ করতে হয়। যদি কারও গবেষণার ক্ষেত্রটি বেশি পছন্দের হয়, তা হলে তাঁরাও নেট/সেট পরীক্ষায় পাশ করে ফেলোশিপ পেতে পারেন।
২) সিভিল সার্ভিস: রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে শিক্ষার্থীরা আরও একটি পেশাকে বেছে নিতে পারেন, সেটি হল সিভিল সার্ভিস। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে দু’ধরনের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় স্তরের আইএএস, আইপিএস ও আইএফএস পরীক্ষার জনপ্রিয়তা বিপুল। এই পদগুলিতে আসীন ব্যক্তিরা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে, দেশের আইনরক্ষার ক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। জাতীয় স্তরে যে পরীক্ষার মাধ্যমে এই পদগুলিতে নিয়োগ করা হয়, তা হল ইউপিএসসি পরীক্ষা এবং রাজ্যস্তরে ডাব্লিউবিসিএস এবং পিএসসি পরীক্ষা। স্নাতক স্তরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়লে শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষার বেশির ভাগ বিষয়ই আগে থেকেই পড়ে ফেলার সুযোগ পান।
৩) আইন সংক্রান্ত পেশা: স্নাতকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ে পড়ুয়ারা এর পর আইন সংক্রান্ত পেশাতেও যেতে পারেন। যে হেতু, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়গুলি আইনি বিষয়ের সঙ্গে অনেকটাই সম্পর্কিত, তাই এই বিষয়টি পড়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধা হয় শিক্ষার্থীদের। বিশ্বের অগ্রণী আইনজ্ঞদের অনেকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা অর্থনীতির ছাত্র।
৪) সাংবাদিকতা: সংবাদপত্র, গণমাধ্যম বা সমাজমাধ্যমে আমরা যে খবরগুলি দেখি, তার বেশির ভাগই রাজনৈতিক খবর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক পড়ুয়ারা বিষয়গুলির সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত হওয়ার কারণে এই রাজনৈতিক খবরগুলি সহজেই বুঝতে বা বিশ্লেষণ করতে পারেন। এর জন্য স্নাতক হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকতার কোনও কোর্সও করতে পারেন। তবে সাংবাদিকের পেশায় যাওয়ার জন্য কোনও কোর্স করার বাধ্যবাধকতা নেই। সাংবাদিক হিসাবে লেখালেখি, রিপোর্টিং ও সম্পাদকীয় কাজ করতে পারেন।
৫) স্বেচ্ছাসেবি সংস্থায় কাজ: স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা (এনজিও) প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারের পাশাপাশি সমাজের সমস্ত স্তরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও অন্যান্য পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক পড়ুয়াদের মধ্যে যাঁদের সামাজিক সেবামূলক কাজ সম্পর্কে ধারণা বা ভাল লাগা আছে, তাঁরা অসরকারি ক্ষেত্রগুলিকেও বেছে নিতে পারেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে উপরোক্ত পেশাগুলি ছাড়াও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, এডুকেশন পলিসি অ্যানালিস্ট, মার্কেট রিসার্চ অ্যানালিস্ট, আইনসভায় সহকারী-সহ আরও অন্যান্য চাকরি করতে পারেন। প্রতিটি পেশাতেই উপার্জনের সুযোগ মন্দ নয়। তাই এই বিষয়টি পছন্দ হলে নির্দ্বিধায় এই নিয়ে পড়াশুনো করে নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারেন শিক্ষার্থীরা।