CBSE regulation on CCTV Surveillance 2025

স্কুলে নিরাপদ নয় শিশুরা! নজরদারি চালাতে বসছে ক্যামেরা, কী বলছেন সিবিএসই শিক্ষকেরা?

গত ২১ জুলাই সিবিএসই-ই প্রথম কেন্দ্রীয় ভাবে বিভিন্ন স্কুলে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দেয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫ ১৭:০৩
Share:

প্রতীকী চিত্র।

স্কুল প্রাঙ্গনে নিরাপত্তা ক্রমশ কমছে পড়ুয়াদের! এমন অভিযোগ উঠছে বার বার। কখনও সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে স্কুলে শিশু নির্যাতনের ঘটনা, কখনও হেনস্থা হতে হয় সহপাঠীর কাছেই। সে সব ঘটনার ছাপ থেকে যায় শিশু মনে। প্রভাব পড়ে শারীরিক সুস্থতার উপরও।

Advertisement

গত বছর অগস্টে এক দিকে যখন কলকাতা উত্তাল হাসপাতালের ভিতর কর্তব্যরত চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায়, তখনই প্রকাশ্যে আসে মহারাষ্ট্রের একটি স্কুলে শিক্ষাকর্মীর দ্বারা দুই নাবালিকার উপর নির্যতনের ঘটনা। এ সব ঘটনা রুখতে এ বার শিক্ষাঙ্গনে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)। স্কুলের নিরাপত্তায় সিসিটিভি বসানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

মহারাষ্ট্রের ওই ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্টের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, দেশের সমস্ত রাজ্যে ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস (এনসিপিসিআর)-এর নির্দেশিকা বলবৎ করতে হবে। অবশেষে গত ২১ জুলাই সিবিএসই বিভিন্ন স্কুলে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দেয়। কেন্দ্রীয় ভাবে এই প্রথম কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হল স্কুলে স্কুলে।

Advertisement

বোর্ডের নির্দেশিকায় জানানো হয়, প্রতিটি স্কুলে হাই রেজল্যুশন ক্যামেরা লাগিয়ে তার মাধ্যমে রিয়েল-টাইম অডিয়ো-ভিস্যুয়াল রেকর্ডিং করতে হবে। অর্থাৎ, শুধু দৃশ্য নয়, কেউ মৌখিক হেনস্থা করলে তা-ও ধরা পড়বে শ্রাব্য মাধ্যমে। স্কুলে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ, সিঁড়ি, শ্রেণিকক্ষ, বারান্দা, গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, খেলার মাঠ-সহ অন্য ‘কমন এরিয়া’, ক্যান্টিন, স্টোররুমে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তবে গোপনীয়তার স্বার্থেই বাদ পড়বে শৌচালয়ের আশপাশ। ফুটেজ সংরক্ষণ, সিসি ক্যামেরার সক্রিয়তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে।

কিন্তু এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠছে, শৈশব নিয়ে। নিরাপত্তার খাতিরে গোটা স্কুল নজরদারি ক্যামেরায় মুড়ে দিলে কি শিশু মনে প্রভাব পড়বে না? যে কোনও ছোটখাট দুষ্টুমিও নজরে পড়ে যাবে শিক্ষক বা অভিভাবকের— এমন ‘ত্রাসের রাজত্বে’ ছোটরা কি পারবে ভাল থাকতে?

পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অবশ্য অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষই সিসি ক্যামেরা লাগানোর পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। ইন্দাস ভ্যালি ওয়ার্ল্ড স্কুলের প্রশাসক এবং উপাধ্যক্ষ মধুমিতা শীল বলেন, “সব স্কুলেই সিসিটিভি লাগানো উচিত। আমাদের স্কুলে ইতিমধ্যেই লাগানো রয়েছে। এতে পড়ুয়াদের পাশাপাশি শিক্ষকেরাও সুরক্ষিত থাকবেন।” তাঁর মতে, ক্যামেরা চলছে জানলে, স্কুল প্রাঙ্গণে সকলেই তাঁদের যে কোনও সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। তা ছাড়া, হঠাৎ কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সহজ সমাধান করা যেতে পারে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে।

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন হাওড়ার দিল্লি পাবলিক স্কুলের অধ্যক্ষা সুনীতা অরোরাও। তিনি বলেন, “আমাদের স্কুলে ইতিমধ্যেই ১৮৬টি ক্যামেরা রয়েছে। কোনও সমস্যা বা জটিলতা সৃষ্টি হলে আমরা ওই রেকর্ডিং দেখেই সমাধান করার চেষ্টা করি।” বারাসাতের দিল্লি পাবলিক স্কুলের অধ্যক্ষা জয়িতা মজুমদার বলেন, “সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সিসি ক্যামেরা লাগানো খুব জরুরি। এর মাধ্যমে স্কুলের সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং নজরদারি বৃদ্ধি পাবে।” তিনি মনে করেন, পড়ুয়াদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধও তৈরি করবে এই নজরদারি।

লক্ষ্মীপত সিঙ্ঘানিয়া অ্যাকাডেমির ডিরেক্টর মিনা কাক বলেন, “ক্যামেরার সামনে অনেকেই অন্যায় কাজ করতে ভয় পাবে। এমনকি ‘বুলিং’-এর মতো ঘটনাও কমানো সম্ভব হবে। অনেকেরই আচরণগত নানা সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে। সুস্থ পরিবেশ গড়ে উঠবে।” তবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি নিয়ে তিনি চিন্তিত। তাঁর কথায়, “সিসি ক্যামেরা যাতে ব্যক্তির গোপনীয়তা বা অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে, সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। দেখতে হবে, ফুটেজের অপব্যবহার না হয় এবং পড়ুয়া-শিক্ষকের মধ্যে বিশ্বাসের বন্ধন নষ্ট না হয়।” একই সুরে দমদমের আদিত্য অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষা মেঘনা ঘোষাল বলেন, “সিবিএসই-র পদক্ষেপকে পূর্ণ সমর্থন করি। নিরাপদ এবং সুস্থ পরিবেশ তৈরি হবে। সকলের মধ্যে দায়বদ্ধতা, শৃঙ্খলাবোধও গড়ে উঠবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ফুটেজকে সঠিক ভাবে ব্যবহার জরুরি। ব্যক্তি স্বাধীনতা বা সম্মান যেন কোনও ভাবে নষ্ট না হয়, নিশ্চিত করতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement