গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী টেট উত্তীর্ণ হতে হবে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাকে। এই পরিস্থিতিতে প্রমাদ গুণছেন এ রাজ্যের মাধ্যমিক স্তরের (নর্মাল সেকশন) শিক্ষকেরাও। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই টেট উত্তীর্ণ হওয়ার নিদান এসে পড়বে তাঁদের উপরও।
২০১৬ সালে প্রথমবার আপার প্রাইমারি বা উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ হয় স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) তত্ত্বাবধানে। তার আগে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগ করত এসএসসি। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন সামলাতেন মাধ্যমিক স্তরে নিযুক্ত শিক্ষকেরাই। তাঁদের বেতন কাঠামো নির্ধারিত হত শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে। শিক্ষা দফতরের ভাষায়, এই শিক্ষকেরা ‘নরমাল সেকশন’-এর অন্তর্গত।
সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের পর মাধ্যমিক স্তরের (নর্মাল সেকশন) শিক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন তাঁদেরও টেট দিতে হতে পারে। বসিরহাটের ধলতিতা সরলা বিদ্যাপীঠ স্কুলের শিক্ষক অরূপকুমার দে বলেন, “২০০৯ সাল থেকে আমি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকতা করছি। আমাদের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্তও পড়াতে হয়। ২০১৬ সালের পর থেকে আলাদা করে উচ্চ প্রাথমিক নিয়োগ শুরু হয়। কিন্তু আমাদের নাম রয়ে গিয়েছে উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং নরমাল সেকশন-এ। ফলে, আমাদের উপরও যে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রভাব পড়বে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।”
জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে উৎসশ্রী পোর্টালে শিক্ষকদের বিশেষ তালিকা প্রকাশ করা হয়। কোন বিভাগে কত শিক্ষক রয়েছেন তার বিন্যাস রয়েছে সেখানে। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত বজায় রাখার জন্যই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদেরও উচ্চ প্রাথমিকে পড়াতে হয়। স্কুল শিক্ষা দফতরের আইএসএমএস এবং উৎসশ্রী পোর্টালে ২০১৬ সালের আগে মাধ্যমিক স্তরে নিযুক্ত শিক্ষকদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে তিনটি বিভাগেই। উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং নরমাল সেকশন— বলে উল্লেখ করা রয়েছে। এর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদে নামছেন শিক্ষকদের একাংশ। তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের আগে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করে যাঁরা মাধ্যমিক স্তরে নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের নাম কেবল নরমাল সেকশন-এ যেন রাখা হয়। একাধিক শিক্ষক সংগঠন ইতিমধ্যেই বিকাশ ভবনে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছে।
সম্প্রতি স্কুল শিক্ষা দফতরের এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই মুহূর্তে সারা রাজ্যে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষকতা করেন এমন প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা টেট উত্তীর্ণ নন। অথচ, তাঁদের মধ্যে বহু শিক্ষকই রয়েছেন যাঁরা ২০১৬ সালের আগে নিযুক্ত হয়েছেন। সে সময় টেট ব্যবস্থাই ছিল না।
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, “রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাতে চলেছে। আমরা চাই, সেখানে নরমাল সেকশন-এর শিক্ষকদের অব্যাহতি চেয়ে সওয়াল করুক রাজ্য।” তাঁরা মনে করেন শুধু রিভিউ পিটিশন নয়, সংসদে সংশোধনীর দাবিও তোলা উচিত রাজ্যের।