ছবি: সংগৃহীত।
তামিলনাড়ু, কেরলের পর এ বার কি পশ্চিমবঙ্গ। সরকারি ভাবে ‘ব্যাকবেঞ্চার’ ভাবনা বাস্তবায়ন করতে চলেছে। কি ইঙ্গিত দিলেন শিক্ষা দফরের আধিকারিক। সরকারি ভাবে নিয়ন্ত্রণ নয়। স্কুলগুলির উদ্যোগে পাশে থাকার বার্তা শিক্ষা দফতরের।
‘ব্যাকবেঞ্চার’ বা পিছনের সারির পড়ুয়া শব্দটাই বিদ্যালয়ে রাখতে চায় না পশ্চিমবঙ্গ স্কুল শিক্ষা দফতর। স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষিকাদের প্রশ্ন এড়াতে চায় এমন বহু ছাত্র-ছাত্রী ক্লাসে নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য পিছনের সারিতে বসে। এর ফলে ক্লাসে অনেক সময় বৈষম্যের পরিবেশ তৈরি হয়। এই ভেদাভেদ ঘোচাতে চাইছে স্কুল শিক্ষা দফতর।
ইতিমধ্যে এই ফাস্ট বেঞ্চ এবং লাস্ট বেঞ্চে ইতি টানায় উদ্যোগী হয়েছে বেশ কিছু সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুল।
উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার শ্বেতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৩০০ এই স্কুলে শুরু হয়েছে নো মোর ‘ব্যাকবেঞ্চার্স’ মডেল। ওই স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের বসানো হয়েছে ‘ইউ’ আকারে। ওই স্কুলের এক সহশিক্ষক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমরা যদি এই নয়া ‘ইউ’ আকারে বসাতে পারি তা হলে প্রত্যেকটি ছাত্রছাত্রীর সংস্পর্শে আমরা থাকতে পারব।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বকুলতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক নিখিলকুমার সামন্ত সংবাদমাধ্যমকে জানান, সামনের সারির পড়ুয়ারা যতটা শিক্ষকদের মনোযোগ পায়, পিছনের সারির পড়ুয়ারা উপেক্ষিত হয় বলে মনে হয়। এই নয়া পদ্ধতির ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের বেশ খানিকটা সুবিধা হবে। মালদার একশো বছরের পুরনো অঙ্কুরমনি করোনেশন ইনস্টিটিউশন এই স্কুলেও দেখা গেল একই ছবি।
ক্লাসের সার্বিক মূল্যায়ন হোক বা বোর্ডের পরীক্ষায় বহু সময় দেখা গেছে যে স্কুলে পিছনের সারিতে বসা পড়ুয়ারা টেক্কা দিয়েছে মেধার নিরিখে সামনের সারিতে বসে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের। তা হলে পড়ুয়াদের বসার ক্ষেত্রে ‘ব্যাকবেঞ্চার’ শব্দের ব্যবহার কেন? সেটাই ভাবাচ্ছে দফতরের আধিকারিকদের।
শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, ‘‘আমাদের কাছে বিভিন্ন জেলা থেকে এই ধরনের উদ্যোগের প্রায় ৫০ মতো ছবি এসেছে। এই উদ্যোগ খুব ভাল। আমরা কোনও বিজ্ঞপ্তি দেব না। স্কুলগুলি উদ্যোগী হলে সম্পূর্ণরূপে তাদের সাহায্য করা হবে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা এই ধরনের ভাবনা থেকে বেরোতে হবে।’’
ওই কর্তা আরও জানান, এই বিষয়টি নিয়ে নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া সংখ্যা এবং পরিকাঠামোর উপর। স্কুলগুলি কী ভাবে এর ব্যবস্থা করবে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না। তবে তাঁরা পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন।
২০২৪ সালে মুক্তি পায় মালায়লি সিনেমা ‘স্থানারথি শ্রীকুট্টন’। মূল গল্পে দেখানো হয় স্কুলের একদল ‘ফ্রন্টব্রেঞ্চার’ এবং ‘ব্যাকবেঞ্চার’-এর বিবাদ। ‘ব্যাকবেঞ্চার’-এর মুখ্য ভূমিকায় থাকা শ্রীকুট্টন পড়ুয়াদের মধ্যে বিভাজন এড়ানোর জন্য ক্লাসরুমে ‘সেমি সার্কুলার’ (অর্ধ বৃত্তাকার) বা ইংরেজি ‘ইউ’ অক্ষরের আকারে বসার প্রস্তাব দেয়। শেষমেশ তার ভাবনাকেই মান্যতা দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এর পরই কেরলের আটটি স্কুলে এই ভাবনা রূপায়িত হয়। একই ভাবনা থেকে সম্প্রতি তামিলনাড়ুর শিক্ষা দফতরও কিছু সরকারি স্কুলে পরীক্ষামূলক ভাবে এই ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ করছে। মনে করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে শুধু পড়ুয়াদের মধ্যে নয়, শিক্ষক-পড়ুয়ার মধ্যে যে দূরত্ব, তা-ও দূর করা সম্ভব হবে। শিক্ষকদের সঙ্গে আরও স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারবে পড়ুয়ারা। আরও ভাল ভাবে শিখতে পারবে, যার ফলে ক্লাসের সামগ্রিক শিক্ষার পরিবেশের উন্নতি হবে।
তামিলনাড়ুর স্কুল শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ক্লাসে অর্ধবৃত্তাকারে বসা হলে শিক্ষক সকলের মাঝে থাকতে পারবেন। ফলে কোনও পড়ুয়াই আর লজ্জায় বা ভয়ে গুটিয়ে থাকবে না। সহজে শিক্ষকদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক নানা প্রশ্ন, আলাপ আলোচনা করতে পারবে। পাশাপাশি, শিক্ষকেরাও সহজেই সকল পড়ুয়ার সুবিধা-অসুবিধার দিকগুলি বুঝতে পারবে। এর ফলে শিক্ষক-পড়ুয়ার মধ্যে একটা সুসম্পর্ক এবং ক্লাসরুমে সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলেই আশা করা যায়।