WB Govt School

করণিকের কাজও করতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষককে! শিক্ষাকর্মীর না থাকার প্রভাব পড়ছে পঠনপাঠনেও

স্কুলে স্কুলে সরকারি বই চলে এসেছে। কিন্তু বহন করার লোক নেই। বই বহন থেকে নথিভুক্তকরণ, সব কাজই করতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষককে। পাশাপাশি কম্পিউটারের কাজ, হিসাব-নিকাশের কাজও করছেন তাঁরা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৫ ১৯:৪২
Share:

করণিকের কাজ করতে হচ্ছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকদের! নিজস্ব চিত্র।

ক্লাস শেষে নেই ঘণ্টা বাজানোর লোক, নেই স্কুলের প্রশাসনিক কাজ করার কর্মীও। শিক্ষক থাকলেই স্কুল চলবে এমনটা নয়, স্কুলের গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি শিক্ষাকর্মীরাও যে একাধারে প্রয়োজন তা মনে করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা। কারণ, এখন করণিকের কাজও করতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষকদের!

Advertisement

সম্প্রতি স্কুলে স্কুলে সরকারি বই চলে এসেছে। কিন্তু ওই বই বহন করা থেকে নথিভুক্তকরণ সব কাজই করতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষককে। পাশাপাশি কম্পিউটারের কাজ, হিসাব-নিকাশের কাজও করতে হচ্ছে। এতে পরোক্ষে প্রভাব পড়ছে পঠনপাঠনে। অবহেলিত হচ্ছে পড়ুয়ারা। রাজ্যের বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষক এই অভিযোগ জানিয়েছেন।

২০১৬ এসএল‌এসটি-র সুপ্রিম কোর্টের প্যানেল বাতিলের রায়ের পর রাজ্যের সরকারি ও সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত স্কুলে শিক্ষাকর্মী প্রায় নেই। তার জেরে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মীদের সমস্ত কাজ করতে হচ্ছে এখন প্রধান শিক্ষক বা স্কুলের অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। নারায়ণ দাস বাঙ্গুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, ‘‘আমার মতে শিক্ষকের পাশাপাশি গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি-র কর্মীদের প্রয়োজন। স্কুলে এই পদে শিক্ষাকর্মী থাকেনই দুই থেকে তিন জন। তাঁরাও যদি চলে যান, তা হলে স্কুলের সব কাজ করবে কারা?’’

Advertisement

যোগ্য অযোগ্য শিক্ষকের চাকরি বাতিলের মাঝেই চাকরি গিয়েছে বহু স্কুল শিক্ষাকর্মীর। একটি স্কুলে নথিকরণে কাজ থাকে প্রচুর। তার পাশাপাশি আরও অনেক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন শিক্ষাকর্মীরা। তাঁদের অনুপস্থিতিতে কাজের সমস্যা হচ্ছে। তার ফলে নির্দিষ্ট কাজের বাইরে কিছু কাজ করতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষকদের। দমদম মতিঝিল গার্লস হাই স্কুলে দু’জন শিক্ষাকর্মী ছিলেন। তাঁরা দু’জনেই এখন অযোগ্য তালিকায়। প্রায় ১৫০০ পড়ুয়ার এই স্কুলের করণিকের কাজও সামলাচ্ছেন প্রধান শিক্ষিকা।

প্রধান শিক্ষিকা পায়েল দে বলেন, ‘‘স্কুল চালাতেই সমস্যা হচ্ছে। পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করার কেউ নেই। কম্পিউটারের কাজ, পিএফ-এর হিসাব রাখা-সহ আরও নানা ধরনের কাজ রয়েছে, যেগুলি করার মতো কর্মী নেই। ফলে সব আমাকেই করতে হচ্ছে!’’

বেশ কিছু সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলে বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চলে। সে ক্ষেত্রে কাজের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। স্কুলের একাদশ শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন, টাকা সংগ্রহ, খাতা লেখা এই সমস্ত হিসাবনিকাশের কাজ সাধারণত স্কুলের শিক্ষাকর্মীদেরই করার কথা। এখন শিক্ষাকর্মী না থাকায় এই কাজগুলিও প্রধান শিক্ষকদেরই করতে হচ্ছে, বলে জানিয়েছেন বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

দমদম বাপুজি কলোনি আদর্শ বুনিয়াদি বিদ্যা মন্দিরেও দু’জন গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মী ছিলেন। এখন তাঁরা কেউই নেই। প্রধান শিক্ষক দেবব্রত সিংহ বলেন, ‘‘দরজা-জানলা খোলা, জল আনার কাজও করতে হচ্ছে আমাদের। শিক্ষাকর্মী নেই, তাই পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলের সব কিছু কাজ করতে হচ্ছে আমাকে, আমার সহকর্মী শিক্ষকদের।”

উল্লেখ্য, চাকরি বাতিলের আগে রাজ্যের সরকার অধীনস্থ স্কুলগুলিতে গ্রুপ সি কর্মী ছিলেন ২০৩৭ জন। গ্রুপ ডি কর্মী ছিলেন ৩৮৮০জন। কিন্তু সিবিআই-র তথ্য অনুযায়ী এই মধ্যে যোগ্য তালিকায় ১২৫৪ জন গ্রুপ সি-র, এবং ২১৩৯ জন গ্রুপ ডি-র। অযোগ্য তালিকায় রয়েছেন ৭৮৩ জন গ্রুপ সি-র, ১৭৪১ জন জন গ্রুপ ডি-র। আবার, স্কুল সার্ভিস কমিশনের তথ্য অনুযায়ী গ্রুপ সি ৭৮৩ জন থাকলেও গ্রুপ ডি-তে রয়েছেন ১৯১১ জন। ফলত চাকরি বাতিল করার পর যোগ্য অযোগ্য-র এই প্রতিবাদের মাঝে ধুঁকছে রাজ্যের বেশ কিছু স্কুল। শিক্ষকদের যেখানে করণিকের কাজে যুক্ত হচ্ছে, সেখানে পড়ুয়াদের পড়াশোনাতেও কিছুটা হলে প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছে শিক্ষক মহলের একাংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement