অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী।
খুব নাটকীয় ভাবে নাকি জ্যেষ্ঠপুত্রের কাজ করার প্রস্তাব এসেছিল?
হঠাৎ একদিন একটা টেক্স এল। ‘কেমন আছো?’ আমি সঙ্গে সঙ্গে লিখে পাঠালাম, ‘কবে দেখা হবে?’ টেক্সটা ছিল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের। আর আমি জানি কৌশিক অকারণে খেজুর করার জন্য আমায় টেক্স করেননি। একটা বিশেষ কারণে ও আমায় ‘ব্রাদার’ ডাকে, আমিও ‘ব্রাদার’ ডাকি। শান্তিনিকেতনে চলে আসতে বলল। এমন এক পরিচালকের ডাক এল যার জন্য কোনও প্রশ্ন থাকে না। সাধারণত জানতে চাই কেমন কাজ? এ ক্ষেত্রে প্রশ্নই ওঠে না। ও এমন পরিচালক যে রংটা ক্যানভাসে চড়িয়ে দিলে আমি সেটা এঁকে নিতে পারি। ‘খাদ’-এও দেখেছি, এ বারও দেখলাম ওই ডেডিকেশন। উইট। কমফর্ট জোন।
এই ছবির সঙ্গে ঋতুপর্ণ ঘোষের ছোঁয়া আছে...
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে শুনেছি ওঁর মা যখন চলে গেলেন, উনি দেখলেন এক জন স্টারের ব্যক্তিগত জীবনে আবেগ আছে। প্রেম আছে। তাঁরও রক্তক্ষরণ হয়। এই জায়গা থেকে ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’র ভাবনা শুরু।
ট্রেলারে দেখা যাচ্ছে আপনি বলছেন...
আমার চরিত্র নিয়ে বিশদে বলা যাবে না। আমাদের জীবনে ন’টা রস আছে। ধরে নিন তার মধ্যে একটা আমি। এমন একটা চরিত্র যাকে জ্যেষ্ঠপুত্র ভরসা করে। চরিত্রের নাম সুদেষ্ণা। যে সোজাসুজি তাকিয়ে জ্যেষ্ঠপুত্রকে বলতে পারে, ‘এমন কী কথা যা সকালে বলা গেল না’?
আরও পড়ুন: মানুষ হিরোদের চোখে জল দেখতে পছন্দ করে না: প্রসেনজিৎ
আপনার লুকটাও তো আলাদা?
আমি লুকটার প্রেমে পড়েছি। আমি মেথড অ্যাক্টর নই।
মানে আপনি ওয়ার্কশপে খুব একটা ভরসা করেন না?
নাহ। সিনেমার অভিনয়ে প্রস্তুত হয়ে আসতে নেই। জলের মতো নিজেকে রাখতে হয়। এক জন দমদার পরিচালক আর নিজের বুদ্ধি দিয়ে চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে হয়। আসলে সিনেমা তো ডিরেক্টরস্ মিডিয়াম।
আরও পড়ুন: বুম্বাদার ডেডিকেশন আমাকে ইনসিকিওর করে দেয়, স্বীকারোক্তি ঋত্বিকের
এখন বাংলা সিনেমায় স্টার নয়, অভিনেতারা সামনে আসছে। সে ক্ষেত্রে আপনার কাজের জায়গাটা কেমন?
আরে, আসল তো ছোটগল্প নয়। উপন্যাস। নিজেকে পরিবর্তন শুধু নয়। পরিবর্ধনও করতে হবে। আমার কথা বাদ দিন। এই লোকটাকে যদি দেখি— প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। মুনমুন সেনের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। মুনমুন সেনের মেয়ের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। সম্ভব হলে মুনমুন সেনের নাতনির সঙ্গেও করতে পারবেন। ‘বাবা কেন চাকর’ থেকে ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ ভাবুন! কেমন করে পরিশ্রম দিয়ে নিজেকে ভেঙেছেন। এখন অমিতাভ বচ্চনের থেকে রাজকুমার রাও বেশি জনপ্রিয়। অমিতাভ নিজে স্বীকার করেছেন। আলিয়া ভট্টকে দেখুন। এইগুলো না দেখে আমরা যদি শুধু রোগা, মোটা, সুন্দর, ফর্সা নিয়ে থাকি সেটা খুব হতাশার কারণ হবে। আমি যে কারণে ওই একঘেয়ে শাড়ি পরা ছাড়লাম। শাড়ি, সুন্দরী এগুলো শুনলেই মাথা গরম হয়ে যেত!
‘‘শুধু সুন্দরী হয়ে আজকের দুনিয়ায় কী লাভ?’’
সুন্দরী বললে মাথা গরম হয়! সে কী!
আরে আমি যা নিয়ে জন্মেছি তাতে আমার কৃতিত্ব কোথায়? আমি যদি আমার কাজের মাধ্যমে কৃতিত্ব অর্জন না করতে পারি তা হলে আর কী হবে? আমাকে কাজ দিয়ে স্যালুট পেতে হবে তো! শুধু সুন্দরী হয়ে আজকের দুনিয়ায় কী লাভ? আমার মধ্যে আগ্রাসী খিদে আছে। সেটা জিইয়ে রাখতে চাই। এটাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা। ঈশ্বর অনেক দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ‘ও জানতেই পারল না, আমার ওকে মনে আছে…’
কিন্তু কাজের এই খিদের জায়গা থেকে জানতে চাই এখন আপনার কাজ কমে গিয়েছে, না?
আমি বছরে দুটো কাজ করব। কিন্তু আলাদা। আমার ‘হামি’-র চরিত্র দেখে কেউ বলবে না আমি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-র চরিত্র করেছি। আবার ‘রামধনু’-র চরিত্র দেখে বলবে না আমি ‘বিটনুন’ করেছি। সব ক্ষেত্রে আমার কাজ নজরে এসেছে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় যদি আজ বলে শান্তিনিকেতনে চলে এস, সেটা তো আমায় অর্জন করতে হয়েছে। আমি আমার কাজের ক্ষেত্রে ছেলেদের লক্ষ্যমাত্রা রাখি। জিম করলে ছেলেদের দমটা টার্গেট করি। ছেলেদের সঙ্গে জিম করি। এটা তো স্বীকার করতেই হবে ছেলেদের দমটা কাজের ক্ষেত্রে বেশি থাকে।
‘হামি’-তে আপনার চরিত্র নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট ছিলেন?
(একটু ভেবে) দেখুন, আমি পার্শ্বচরিত্র তো করিনি। আমার মতো করে আমার বিপরীত স্বভাবের চরিত্র করেছি। দর্শকের ভাল লেগেছে।
নিজের আবেগ, প্রেম, রক্তক্ষরণকে কী ভাবে সামলান?
আমার কাছে একটা শব্দ খুব জরুরি। ‘মাত্রা’। অভিনয়ের মধ্যে সমস্ত রক্তক্ষরণ জমা রেখেছি। আমি আমার মতো করে চলতে পারি এটা বলতে পারি।
আরও পড়ুন: ‘আর কী করলে আমাকে অন্য চরিত্রেও ভাববে, জানি না’
আপনার পারিবারিক সমর্থনের একটা জায়গা এ ক্ষেত্রে আছে তো?
সমর্থন নয়। পারিবারিক বিশ্বাসের জায়গা আছে। এটা আমি অর্জন করেছি।
এত ভাল কথা বলেন, রাজনীতিতে আসার আমন্ত্রণ পাননি?
অসম্ভব!
জ্যেষ্ঠপুত্রের সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় নাকি বলেছিলেন, আপনি এই ছবির সিরিয়াস অভিনেত্রী?
মজা করে হঠাৎ বলল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, এই যে গার্গী ম্যাডাম বসে আছেন, সবচেয়ে সিরিয়াস। একটা কথা বলার আগে দশ বার ভাববেন। তার পর কথা বলবেন।
আচ্ছা, আপনার সঙ্গে নাকি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রেম ছিল?
তাই? এটা বলতে হবে তো প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে!
(সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।)