চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়।
‘তারিখ।’ প্রত্যেকটা তারিখ, প্রতিটি দিন কতটা গুরুত্ব দিই আমরা? হয়তো কোনও অনুষ্ঠান, সে তারিখ গুরুত্ব পায় জীবনে। কিন্তু ধরুন সাধারণ একটা দিন। দৈনন্দিনের রোজনামচার বাইরে সে তারিখকে আলাদা করে মনে রাখি কি আমরা? হয়তো সে দিনের বিকেলটা মনকেমনের ছিল। অথবা সকালের জলখাবারে ছিল ছোটবেলার স্বাদ— সে সব আলাদা করে মনে রাখি না আমরা। সে তারিখই যদি পরে ফিরে আসে কোনও অন্য অনুসঙ্গ নিয়ে, তখন তার গুরুত্ব বাড়ে। এ ভাবনা থেকেই নিজের দ্বিতীয় ছবি ‘তারিখ’-এর ভাবনা বেঁধেছেন চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়।
তারিখ ফিরে আসে অন্য প্যাটার্নে
চূর্ণী জানালেন, বহু বার এ ভাবনা তাঁর এসেছে। আবার বেরিয়েও গিয়েছে। কিন্তু এ ভাবনা নিয়ে ছবি করবেন তা ভাবেননি আগে। একটা দোল থেকে আর একটা দোল, একটা পয়লা বৈশাখ থেকে আর একটা পয়লা বৈশাখ, এ বছরের পুজো থেকে পরের বছরের পুজো— বন্ধুত্ব, বিচ্ছেদ, জন্ম, মৃত্যু বদলে যায় কত কিছু। তারিখকে গুরুত্ব না দিলেও প্রত্যেকের জীবনে তারিখ ফিরে আসে অন্য প্যাটার্নে। ছোট, বড় নানা অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি থেকে এ ছবির গল্প ভেবেছেন, জানালেন তিনি।
ঋতুদার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেষ পোস্ট ছিল ‘তবু মনে রেখ’
‘‘ঋতুদা চলে যাওয়ার কিছু দিন আগে দিল্লি যাওয়া এবং আসার ফ্লাইটে বহু ক্ষণ আড্ডা হয়েছিল। অনেক কিছু নিয়ে। ঋতুদা বলেছিল, বাড়িতে আয়, আড্ডা হবে। আমিও বলেছিলাম, যাব। সে মাসের শেষে মানুষটাই আর নেই। খবরটা পেয়ে আমার প্রথম ওটাই মনে হয়েছিল। মাঝের ওই তারিখগুলোকে তো আমি গুরুত্ব দিইনি। ঋতুদা মারা যাওয়ার ২১ দিন আগে, সে সময়টা রবীন্দ্রজয়ন্তী ছিল। ঋতুদার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেষ পোস্ট ছিল, ‘তবু মনে রেখ’। এ সব ভাবনাগুলো থেকেই ছবিটা”— শেয়ার করলেন চূর্ণী।
‘তারিখ’ সেলফি...।
‘ও জানতেই পারল না, আমার ওকে মনে আছে’
চূর্ণীর দাবি, এসএমএস বা হোয়াটস্অ্যাপের উত্তর দেওয়া বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ থাকা তাঁর প্রতি দিনের অভ্যেস নয়। পরিবার বা প্রিয় জনেরা তা জানেন। একবার চূর্ণী-কৌশিকের ছেলে উজানের জন্মদিনের সাত দিন পরে ফেসবুক খুলে বহু মেসেজের মধ্যে এক স্কুলের জুনিয়রের মেসেজ পান, যিনি চূর্ণীকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন বেশ কিছু দিন আগে। মেসেজে জানতে চেয়েছিলেন, চূর্ণীর তাঁকে মনে আছে কিনা...। ‘‘আমার খুব লজ্জা লেগেছিল। তখনই ওকে উত্তর দিয়েছিলাম, তোমাকে চিনতে পেরেছি। তোমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করলাম, এ সব। তার পর ওর ওয়ালে গিয়ে দেখি, ও মারা গিয়েছে। সবাই শ্রদ্ধা জানিয়েছে ওর ওয়ালে। ওই মুহূর্তের অনুভূতিটা আমি বোঝাতেই পারব না। কোনও দিন পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেও পারব না। উজানের জন্মদিনের একদিন আগে ও চলে গিয়েছিল সে বছর। অর্থাত্, আমি বোঝাতে চাইছি আমি যখন বাড়িতে ছেলের জন্মদিনের সেলিব্রেশনের আয়োজন করছি, তখন ও চলে গিয়েছে। আর ও জানতেই পারল না, আমার ওকে মনে আছে’’— দীর্ঘশ্বাস ধরা পড়ল চূর্ণীর গলায়।
আরও পড়ুন, সাংবাদিকদের সম্পর্কে কী ধারণা পার্নোর?
একটা মানুষের টাইমলাইন
ঠিক এ ভাবেই একটা মানুষের সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্ট জুড়ে জুড়ে ‘তারিখ’কে ফ্রেমবন্দি করেছেন চূর্ণী। পোস্ট জুড়ে জুড়ে একটা মানুষকে চেনার জার্নি দেখাবে এই ছবি।
‘তারিখ’ ছবির একটি দৃশ্য।
এ বারও কি জাতীয় পুরস্কার?
চূর্ণী পরিচালিত প্রথম ছবি ‘নির্বাসিত’র ঝুলিতে ছিল জাতীয় পুরস্কার। ‘তারিখ’ও কি সেই পথেই হাঁটবে? চূর্ণীর উত্তর, ‘‘অনেকে হয়তো আশা করেন বারবার বাজিমাত হবে। আমি ঠিক ওই ভাবে ভেবে ছবি তৈরি করতে পারব না। আমার কেরিয়ারগ্রাফ যদি দেখেন, সব কিছুই খুব ন্যাচেরালি হয়েছে। ছবিটাও সে ভাবে বানিয়েছি।’’
আরও পড়ুন, ‘আমি ভাগ্যবান #মিটু ফেস করিনি, কিন্তু কেন ভাগ্যবান বলব বলুন তো?’
‘তারিখ’ কি কৌশিক তৈরি করে দিলেন?
অপর্ণা সেনের ছবি নাকি সত্যজিত্ রায় তৈরি করে দিয়েছিলেন। ঋতুপর্ণর ছবি অপর্ণা। একই ভাবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি নাকি তৈরি করে দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। আর চূর্ণীর ছবি কৌশিক— ইন্ডাস্ট্রিতে এ হেন এই গসিপের পরম্পরা রয়েছে। ‘নির্বাসিত’র সময় অনেকেই বলেছিলেন, সে ছবি চূর্ণী নয়, পরিচালনা করেছেন কৌশিক। দ্বিতীয় ছবি ‘তারিখ’-এও কি সেই আলোচনা শুনতে হল? হাসতে হাসতে চূর্ণী বললেন, ‘‘আগের তুলনায় এ বার এটা নিয়ে বোধহয় কম কথা হচ্ছে। অন্তত আমার সামনে। আমার মনে হয়, ‘নির্বাসিত’ দেখার পর অনেকেই হয়তো বুঝেছেন আমার সিনেম্যাটিক ল্যাঙ্গুয়েজটা আলাদা।’’
(সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy