রাতে ঘুম না এলে কী কী করবেন? ছবি: সংগৃহীত।
ঘুম না আসার দুশ্চিন্তায় কাটে প্রতি রাত? উদ্বেগের জেরে নিদ্রা যেন আরওই ধারেকাছে ঘেঁষে না। অথবা মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে তাকে আবার ফিরিয়ে আনা দুষ্কর হয়ে ওঠে। এ দিক ঘুমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সারা দিনের ভাল থাকা, না থাকা। স্বাস্থ্যসংক্রান্ত হাজার সমস্যা ঘিরে ধরতে পারে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম না পেলে। ওষুধের উপর ভরসা করলে, তা দীর্ঘমেয়াদি হয় না। এমতাবস্থায় কী ভাবে রাতে ঘুম আনা যায় সময় মতো? তার জন্য কিছু পুরনো অভ্যাস ত্যাগ করে কিছু নতুন অভ্যাসকে জায়গা দিতে হবে।
১. প্রতি দিন নির্দিষ্ট সময়ে শুতে যেতে হবে- ঘুম ও জাগার সময় নির্দিষ্ট রাখলে দেহ ঘড়ি নিজের ছন্দে চলতে পারে। এতে মস্তিষ্ক বুঝে নেয়, কখন বিশ্রাম নেওয়ার সময়। ফলে সহজেই ঘুম আসে। চেনা পরিসরে, চেনা রুটিনে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
২. সন্ধ্যার পর ক্যাফিন এড়িয়ে চলুন- চা, কফি বা চকোলেটে থাকা ক্যাফিন ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন মেলাটোনিন তৈরিতে বাধা দেয়। সন্ধ্যার পর এ ধরনের খাবার বা পানীয় বাদ দিলে শরীর সহজে ঘুমের ছন্দে ফিরে আসে।
৩. নীল আলোর প্রভাব কমিয়ে দিন- শোয়ার আগে ঘরের আলো, মোবাইল বা কম্পিউটারের নীল আলো বন্ধ করে দিতে হবে। মৃদু আলোয় শরীর বুঝে নেয়, বিশ্রামের সময় এসেছে। ফলে ঘুম স্বাভাবিক ভাবে আসে। ঘুমের অন্তত আধ ঘণ্টা আগে সব স্ক্রিন দূরে রাখুন।
ঘুমের অন্তত আধ ঘণ্টা আগে সব স্ক্রিন দূরে রাখুন। ছবি: সংগৃহীত।
৪. গরম জলে পা ভিজিয়ে রাখুন- গরম জলে স্নান বা পা ভিজিয়ে রাখলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে পেশি শিথিল হয়, মনও শান্ত হয়, ঘুম সহজে আসে। পায়ে থাকে রক্তবাহী নালিকা, যা শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। থার্মোরেগুলেশন, অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার এই প্রক্রিয়াটিই মস্তিষ্ককে ঘুমের সঙ্কেত পাঠায়।
৫. হালকা শরীরচর্চা করুন- দিনের শেষে কিছুটা হাঁটা বা স্ট্রেচিং ঘুমের মান উন্নত করতে পারে। তবে ঘুমের আগে অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে আবার হিতে বিপরীত হতে পারে।
৬. ধ্যান বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন- মনের অস্থিরতা কমাতে ধ্যান করুন বা ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন। এতে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগের সমস্যা কমবে, হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক হবে। ফলে গোটা শরীর ও মন ঘুমের প্রস্তুতি নিতে শুরু করবে।
৭. বিছানাকে শুধু ঘুমের জন্য বরাদ্দ রাখুন- বিছানায় খাওয়া, কাজ করা বা ফোন দেখা বন্ধ করুন। এতে মস্তিষ্ক বিছানাকে শুধুই বিশ্রামের জায়গা হিসেবেই চিনবে, ঘুমও দ্রুত আসবে।
৮. ঘর ঠান্ডা রাখুন- ঘরের তাপমাত্রা বেশি হলে ঘুম আসতে দেরি হয়। মেলাটোনিন উৎপাদনের জন্য তাই নজর রাখতে হবে, ঘর যেন খুব গরম না হয়ে যায়।
৯. ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে দূরে থাকুন- ওয়াইফাই রাউটারের মতো যন্ত্রপাতি থেকে দূরে থাকা ভাল ঘুমের সময়ে। এগুলির ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের কারণে নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এর ফলে শরীরের সার্কাডিয়ান ছন্দে পতন ঘটতে পারে।
এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলি ঘুমের জন্য ওষুধের মতোই কার্যকর। শরীরের ছন্দ ফিরিয়ে এনে গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন নিদ্রার পরিসর তৈরি করে দেবে।