দুর্ভেদ্য টিউমারকেও ভেদ করবে টিকা? ছবি : এআই সহায়তায় প্রণীত।
ওষুধ নয়, ক্যানসার সারাবে শরীর নিজেই! ক্যানসারের চিকিৎসায় এমন একটি সমাধানসূত্র বহু দিন ধরেই খুঁজে চলেছেন চিকিৎসকেরা। যার বাস্তব রূপ হল ইমিউনোথেরাপি। ওই পদ্ধতিতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে এমন ভাবেই তৈরি করা হয় যে, তা ক্যানসারপ্রবণ কোষগুলিকে নিজে থেকেই চিহ্নিত করে তাদের সমূলে ধ্বংস করতে পারে। মুশকিল হল, ওই পদ্ধতিও কোথাও কোথাও ব্যর্থ হচ্ছে! ইমিউনোথেরাপিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনও কিছু ক্যানসার শরীরে বাসা বাঁধতে পারছে। একটি গবেষণা বলছে, নতুন এক ক্যানসার প্রতিষেধক সেই ঝুঁকিও কমিয়ে দিতে পারবে।
ক্যানসারের ওই প্রতিষেধকের নাম ‘মেসেঞ্জার আরএনএ’ বা ‘এমআরএনএ’ ভ্যাকসিন। 'নেচার' জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে গবেষণাকারীরা লিখেছেন, ‘এমআরএনএ’ প্রতিষেধক যদি ইমিউনোথেরাপি চালানোর পাশাপাশি ক্যানসারের রোগীকে দেওয়া যায়, তবে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তির নবজাগরণ ঘটাতে পারে, একই সঙ্গে ক্যানসারকে গোড়াতেই রুখে দেওয়ার পদ্ধতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
ক্যানসারের ওই টিকা দিতে হবে ইমিউনোথেরাপির ওষুধের সঙ্গে। ছবি : এআই সহায়তায় প্রণীত।
ওই গবেষণাটি করেছেন ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইলিয়াস সায়ৌর এবং ডুয়েন মিশেল। তাঁরা জানাচ্ছেন, ইমিউনোথেরাপির সঙ্গে এই ক্যানসার প্রতিষেধকের একটি মৌলিক তফাত রয়েছে। ইমিউনোথেরাপিতে রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে তৈরি করা হয় কোনও এক বিশেষ ধরনের টিউমারকে ধ্বংস করার জন্য। এই পদ্ধতিতে ওই বিশেষ ধরনের টিউমার সৃষ্টিকারী কোনও একটি বিশেষ প্রোটিনকে চিহ্নিত করে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করা হয়। অন্য দিকে, ‘এমআরএনএ’ শরীরের সামগ্রিক ভাবে রোগ প্রতিরোধ শক্তিকেই অত্যন্ত সক্রিয় করে তোলে।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ওই টিকা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী বানিয়েছে, যা বড় এবং কিছু দু্র্ভেদ্য টিউমারের প্রতিরোধ শক্তিকেও ভাঙতে পারে। ওই ধরনের টিউমারে থাকা প্রোটিনকে চিহ্নিত করা কিছুটা কষ্টসাধ্য। কিন্তু ক্যানসারের ‘এমআরএনএ’ টিকা সেই কঠিন কাজকেও সহজ করতে সাহায্য করবে, যা ক্যানসারকে আটকানোর চিকিৎসায় নতুন দিক খুলে দেবে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।