মহাকাশে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন ফোটালে কী হবে, ডায়াবিটিস নিয়ে গবেষণা করবেন শুভাংশু। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
মহাকাশে কি ইনসুলিন ইঞ্জেকশন কাজ করে? যেখানে পৃথিবীর মতো মাধ্যাকর্ষণই নেই, সেখানেও কি রক্তে শর্করা হঠাৎ করে নেমে যেতে পারে? এমনই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজবেন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্ল। ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্স-এর তৈরি মহাকাশযানে চেপে সোজা মহাকাশে পাড়ি দিতে চলেছেন তিন নভশ্চর। পৃথিবীর কক্ষে থাকা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন (আইএসএস)-এ টানা চোদ্দ দিন কাটাবেন এবং ওই সময়ে নানা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন তাঁরা। তার মধ্যেই একটি হল ইনসুলিন ইঞ্জেকশন ও ডায়াবিটিস নিয়ে গবেষণা।
অ্যাক্সিয়োম স্পেস নামে আমেরিকার একটি বেসরকারি সংস্থার মহাকাশ অভিযানে ছাড়পত্র দিয়েছে নাসা। রাকেশ শর্মার ৪০ বছর পরে ফের মহাকাশে পাড়ি দিতে চলেছেন আরও এক ভারতীয়। তাই এই অভিযানে নাসা একা নয়, সঙ্গী হয়েছে ইসরোও।
আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নানা গবেষণা আগেও হয়েছে। ইদানীংকালে ডায়েট নিয়ে চর্চা হচ্ছে বেশি। মহাকাশে গিয়ে কী কী ধরনের খাবার খেলে পুষ্টি হবে, কোন কোন খাবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যাবে, স্পেস স্টেশনে কী কী সব্জির চাষ করা যাবে— এই নিয়ে গবেষণা তো চলছেই। সুনীতা উইলিয়ামসরা ফিরে আসার পরে মহাকাশে নভশ্চরদের পুষ্টির বিষয়টা নিয়ে যথেষ্টই মাথা ঘামাচ্ছেন গবেষকেরা। তবে মহাকাশে ডায়াবিটিস নিয়ে ভাবনাচিন্তা হয়তো এই প্রথমই। আবু ধাবির একটি সংস্থা বুর্জিল হোল্ডিংস এই দায়িত্ব দিয়েছে নভশ্চরদের। পৃথিবীর মতো মাটির টান যেখানে নেই, সেখানে শরীরের ভিতর গ্লুকোজ়ের ওঠানামা ঠিক কী প্রক্রিয়ায় হয়, তা খুঁটিয়ে বুঝতে হবে শুভাংশুদের। তাঁদের সঙ্গে গ্লুকোজ় মনিটর দিয়ে দেওয়া হবে। ২৪ ঘণ্টা তাতে চোখ রেখে বুঝতে হবে শর্করার মতিগতি। এ-ও দেখতে হবে, মহাকাশে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন কাজ করে কি না। শুভাংশুদের সঙ্গে খানকয়েক ইনসুলিন পেনও মহাকাশে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে বলে খবর।
স্পেস এক্স ড্রাগন মহাকাশযানে চেপে মহাকাশে যাওয়ার সময়ে বরফে ঠাসা বাক্সে ইনসুলিন পেনগুলি দিয়ে দেওয়া হবে নভশ্চরদের। তবে এ তো আর গেলাম আর ফিরে এলামের মতো যাত্রা নয়। পৃথিবীর আকর্ষণ কাটিয়ে একেবারে বাইরে চলে যাওয়া। তাই বরফে চাপা ইনসুলিন পৃথিবীর বাইরে গেলে কী দশায় থাকবে, সেটিও দেখার বিষয়। তার উপাদানে কী কী বদল আসবে, সেটিও লক্ষ করবেন নভশ্চরেরা। তবে তাতে লাভ কী হবে?
আসল লাভ নাকি সেখানেই। মহাকাশে বা মাধ্য়াকর্ষণহীন জায়গায় রক্তে শর্করা মাপা ও তা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি যদি আয়ত্তে আসে, তা হলে পৃথিবীর মানুষের ডায়াবিটিস নির্মূল করার পদ্ধতিও নাকি হাতের মুঠোয় চলে আসতে পারে। অথবা এমন যন্ত্র আবিষ্কার করা যাবে, যা পরে থাকলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আরও একটি লাভ হতে পারে। ডায়াবিটিস থাকলে মহাকাশে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যায় না। বিশেষ করে যদি ইনসুলিন নিতে হয়, তা হলে তো আরও নয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর্বেই তাঁকে ‘অযোগ্য’ বলে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রেও এই গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ। যদি এক বার মহাকাশে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় জানতে পারা যায়, তা হলে নিছক সুগার আছে বলে কোনও যোগ্য নভশ্চরকে বাতিলের খাতায় নাম লেখাতে হবে না।
রক্তে শর্করা মাপা মানে নভশ্চরদের বিপাকের প্রক্রিয়ার দিকেও খেয়াল রাখা। তার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত গ্লুকোজ় মনিটর যন্ত্র তৈরিরও চেষ্টা করা হবে। এই যন্ত্র এমন ভাবে তৈরি হবে, যাতে পৃথিবীর মানুষের ডায়াবিটিসও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।