কফিতেও মিশছে ভেজাল! আসল-নকল বোঝার উপায় বলল এফএসএসএআই। ছবি: ফ্রিপিক।
ঘুম থেকে উঠে এক পেয়ালা গরম কফি না হলে দিনই শুরু হয় না অনেকের। একটানা কাজের ক্লান্তি কাটাতেও সেই কফিই চাই। শীতের সন্ধ্যায় কফির কাপ হাতে কত যে প্রেম জমে ওঠে, তার ইয়ত্তা নেই। এমনিতে কলকাতা চায়ের শহর। জলহাওয়া, আর্থিক সঙ্গতি, অভ্যাসের ভিত্তিতে চা অনেকটা এগিয়ে কফির চেয়ে। তবে বিশ্বায়নের প্রভাবে কফিতে আসক্তি বেড়েছে শহরের মানুষের, বাঙালির। রসিয়ে কফি পান করার প্রবণতাও বেড়েছে। কফি হাউসের স্বর্ণযুগে দুধ-চিনি দেওয়া এক কাপ কফির স্বাদ কি ভোলা যায়! এখন অবশ্য অভিজাত রেস্তরাঁগুলিতে এসপ্রেসো-কাপুচিনো-কাফে লাতে-কাফে মোকা-আইরিশ কফির চল বেড়েছে। সে যা-ই হোক, কফিতে যদি মন মজে, তা হলে এ-ও যাচাই করতে হবে দোকান থেকে যে কফি কিনছেন, তা খাঁটি কি না।
কফি পাউডার কিনে এনে বাড়িতে বানিয়ে খাওয়ার চলই বেশি। কফির দানা পিষে সে কফি বানিয়ে খান ক’জনে? সমস্যাটা হচ্ছে, দোকান থেকে সিল করা বোতলে যে কফি পাউডার কেনা হচ্ছে, তার কতটা কফি বীজ থেকে তৈরি খাঁটি পাউডার রয়েছে, আর কতটা মেশানো ভেজাল, তা বোঝা প্রায় অসাধ্য। অনেকেই বলবেন, পনির, দুধ, মশলাপাতিতে ভেজাল মিশছে, সে না হয় বোঝা গেল, কিন্তু কফিতেও ভেজাল?
জাতীয় খাদ্যগুণ নির্ণায়ক সংস্থা (এফএসএসএআই) সতর্ক করে জানিয়েছে, কফি পাউডারের মধ্যেই মিশছে ভেজাল। কখনও মেশানো হচ্ছে তেঁতুল বীজের গুঁড়ো, কখনও খেজুর বীজের গুঁড়ো। তা ছাড়া স্টার্চ, বিভিন্ন দানাশস্য পেষাইয়ের পরে পড়ে থাকা ধুলোবালিও মিশছে কফিতে। এই ভেজাল মেশানো কফি দিনের পর দিন খেলে, তার প্রভাব পড়বে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে। কফিতে থাকা ক্যাফিন ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরণে সাহায্য করে। পাশাপাশি, রক্তে অ্যাড্রেনালিন হরমোনের ক্ষরণও বাড়ায়। যে কারণে কফি খেলে ক্লান্তি কাটে, শরীর চনমনে হয়। এখন যদি কফিতেও নানা রকম রাসায়নিক মেশানো হয়, তা হলে ক্যাফিনের সঙ্গে সে সবও রক্তে মিশবে। এর প্রভাব মারাত্মক হয়ে দেখা দেবে শরীরে।
ভেজাল ধরার কোনও উপায় আছে কি?
এফএসএসএআই জানিয়েছে, কফি পাইডারে ভেজাল মেশানো আছে কি না, তা বোঝার কয়েকটি উপায় আছে। অন্তত সাধারণ মানুষ বাড়িতে কফি কিনে এনে তা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
কী কী সেই পদ্ধতি?
ওয়াটার টেস্ট
এক গ্লাস জলে এক চামচ কফি পাউডার মিশিয়ে ভাল করে গুলতে হবে। এ বার গ্লাসটি মিনিট পাঁচেক রেখে দিন। কফি যদি খাঁটি হয়, তা হলে জলের উপরে ভাসবে। আর বীজ বা দানাশস্যের ধুলো মেশানো থাকলে তা গ্লাসের নীচে গিয়ে জমা হবে। জলের নীচের অংশে খুব গাঢ় রঙের ধুলোবালি জমা হবে।
ব্লটিং পেপার টেস্ট
একটি ব্লটিং পেপারের উপর সামান্য কফির গুঁড়ো নিন। এ বার আঙুল দিয়ে চেপে দেখুন যদি গুঁড়ো মিহি হয়ে যায়, তা হলে বুঝতে হবে সেটি খাঁটি। ভেজাল মেশানো থাকলেই কফিতে দানা ভাব থাকবে।
রং দিয়ে যায় চেনা
কফি পাউডারের রং গাঢ় খয়েরি বর্ণের হয়। তার একটা গন্ধও আছে। কিন্তু ভেজাল মিশলে তার রঙে বদল আসবে। খয়েরির বদলে রং কালচে হবে। গন্ধও অন্যরকম হবে।
আরও একটি জিনিস খেয়াল করতে হবে, তা হল খাঁটি কফির পাউডার নরম, ঝুরঝুরে হয়। ভেজাল মিশলে তা আঠালো হবে।