ঋতুস্রাবের চার থেকে পাঁচ দিন কী খেলে পেটে ব্যথা হবে না, অস্বস্তিও দূর হবে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ঋতুস্রাবের চার থেকে পাঁচটা দিন অনেক মেয়ের কাছেই অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। ভারী পিরিয়ড, তার উপরে পেটে যন্ত্রণায় ভোগেন অনেকেই। জরায়ুর পেশি সঙ্কোচন-প্রসারণের ফলে এবং হরমোনের হেরফেরে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ‘ডিসমেনোরিয়া’ বলা হয়। অনেক মহিলাই বলেন, ঋতুস্রাব শুরু হলে শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধি, যেমন কোমর, হাঁটু কিংবা পায়ের গোছে ব্যথা বেড়ে যায়। তার জেরে হাঁটাচলা করতেও অসুবিধে হয়। রোজের কাজকর্মেও এর প্রভাব পড়ে। প্রতি মাসে তো ব্যথার ওষুধ খাওয়া যায় না, কারণ এই সব ওষুধের থেকে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই রোজের খাওয়াদাওয়ায় নজর দেওয়া খুব জরুরি। ঋতুচক্রের পরে আয়রনের ঘাটতিও হয় অনেকেরই। সে ক্ষেত্রেও ওষুধের বদলে ডায়েটই ভরসা হতে পারে।
ঋতুচক্রের গোটা প্রক্রিয়াটিই হরমোনের ওঠানামার উপর নির্ভর করে। ঋতুচক্র শুরুর আগেই পেশির সঙ্কোচন-প্রসারণ শুরু হয়। ফলে শরীরে প্রদাহ বাড়ে, যার থেকে ব্যথা বাড়ে। ঋতুচক্র চলার চার থেকে পাঁচ দিন একটি বিশেষ ডায়েট মেনে চললে পেটে ব্যথা, শরীরে অস্বস্তি কম হতে পারে। কোন দিন কী খাবেন,তার তালিকা জেনে রাখা জরুরি।
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর মতে, ঋতুস্রাবের প্রথম দু’দিন যখন পেটে ব্যথা বেশি হয়, সে সময়ে আয়রন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে ভাল। পরে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিন আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে ভাল।
ঋতুস্রাব চলার প্রথম ও দ্বিতীয় দিন
সকাল: হালকা প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে ভাল। যেমন—ওট্মিল বা ডালিয়া (বাদাম ও ফল দিয়ে), ডিম সেদ্ধ। রুটি ও সব্জিও খেতে পারেন।
দুপুরে: অল্প ভাত/রুটি, ডাল, সব্জি (বিশেষ করে সবুজ শাকসব্জি), ছোট মাছ বা চিকেনের স্ট্যু।
বিকেলের জলখাবারে: ফল (কলা, আপেল), বাদাম, দই।
রাতে: হালকা খিচুড়ি বা সব্জির স্যুপ।
ব্যথা বেশি হলে আদা দিয়ে লাল চা বা গ্রিন টি খেলে উপকার হবে। ডার্ক চকোলেট খেলেও অনেক সময়ে ব্যথা কমে। হলুদ জরায়ুতে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও হলুদ হল ইস্ট্রোজেনের প্রাকৃতিক উৎস। শরীরে প্রদাহ নাশ করে।
ঋতুস্রাবের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিন
প্রাতরাশে: আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে ভাল। যেমন— ওট্সের রুটি সঙ্গে সব্জি বা পোহা অথবা কম তেলে উপমা বা রাগির দোসা।
দুপুরে: ভাত/রুটি সঙ্গে ডাল, কম তেলে রান্না মাছ বা মাংস মাছ/মাংস, টক দই।
বিকেলের জলখাবার: ফ্রুট স্যালাড অথবা একমুঠো বাদাম।
রাতে: হালকা খাবার খেতে হবে। সকালে মাছ বা মাংস খেলে, রাতে শুধু রুটি বা সব্জি খেতে পারেন, অথবা ভাত খেলে তার সঙ্গে এক রকম তরকারি বা চিকেনের স্ট্যু খেতে পারেন।
ঋতুস্রাবের সময়ে ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে যন্ত্রণা কম হয়। তার জন্য পালংশাক, কলা, কাঠবাদাম, ডার্ক চকোলেট রোজের ডায়েটে রাখতে পারেন। সেই সঙ্গেই বাদাম ও নানা রকম বীজ খেলে ওই সময়ে পুষ্টির ঘাটতি কম হবে। পর্যাপ্ত জল পান করতেই হবে। টাটকা ফলের রস বা সব্জির স্যুপ রোজ খেতে পারলে ভাল হয়।