ডায়েটে থাক বৈচিত্র্য, থাক সুস্থ থাকার রসদ। ছবি: সংগৃহীত।
কারও লক্ষ্য সুস্থ থাকা, কারও লক্ষ্য বলিউডের নায়ক-নায়িকাদের মতো চেহারা পাওয়া, কেউ চান খানিক মেদ ঝরাতে, কেউ আবার দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ থাকতে।
লক্ষ্য যাই-ই হোক না কেন, সঠিক ডায়েটই সাহায্য করবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যলাভে, এ কথা সমাজমাধ্যমের দৌলতে প্রায় সকলেই জেনেছেন। কিন্তু মুশকিল হল, রকমারি ডায়েট অনুসরণ করতে গিয়ে কেউ মাঝপথে ছেড়ে দিচ্ছেন, কারও পক্ষে তা ক্লান্তিকর মনে হচ্ছে। ডায়েট মানে পছন্দের অনেক খাবারই বাদ পড়া। ফলে দ্রুত এমন ডায়েট করতে গিয়ে অনেকেই মাঝপথে হাল ছেড়ে দেন।
তবে কঠিন নয়, মাঝপথে ছাড়ার দরকার হবে না, উল্টে পরিবেশবান্ধব— এমন ডায়েটও কিন্তু হয়। তা নিয়েই এখন চর্চা। একেই বলা হচ্ছে ‘সাসটেনবল ডায়েট’। পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘সাসটেনবল ডায়েট শরীরের পক্ষে ভাল এবং পরিবেশ-বান্ধব খাবারের কথা বলে। এই ধরনের খাদ্যতালিকায় থাকে যথাযথ পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপযোগিতা। একই সঙ্গে এই ধরনের খাবারের জন্য চাষবাসে প্রকৃতির ক্ষতি কম হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খাদ্যের ভান্ডার সুরক্ষিত রাখাও এর আরও একটি উদ্দেশ্য।’’
চিকিৎসক এবং যাপন সহায়িকা অপর্ণা সন্থনমের কথায়, নির্দিষ্ট কিছু নিয়ন্ত্রিত খাবারের বদলে বৈচিত্র, স্বাদ, পুষ্টি, পরিমিতিবোধে গুরুত্ব দেয় এমন খাদ্যতালিকা। পছন্দের খাবার বেছে নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। সেই কারণেই এটি অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। কঠোর বা উদ্দেশ্য-নির্ভর ডায়েটের বদলে এই ধরনের খাদ্যতালিকা ব্যক্তিবিশেষের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতায় নজর দেয় এবং স্বাদের দিকটিও খেয়াল রাখে।
কেন চর্চা ডায়েটটি নিয়ে?
· এই ধরনের ডায়েট খাবারে পুষ্টিগুণের সমন্বয়ে জোর দেয়। কিটো ডায়েট যেমন প্রোটিন উপাদানে জোর দেয়, মনো ডায়েট একই রকম খাবার দিনের পর দিন খেতে বলে, এতে তেমন কিছুই বলা হয় না। বরং পছন্দের যে কোনও স্বাস্থ্যকর খাবারই খাওয়া যায়।এই ডায়েটর উদ্দেশ্যই হল, পুষ্টির অভাব দূর করা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে ব্যক্তিবিশেষকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করা।
· পশুপালন হোক বা চাষবাস— গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমানো, অতিরিক্ত জল অপচয়, মাটির ক্ষতি কমানোই এর উদ্দেশ্য।
· এই ধরনের ডায়েট স্থানীয় এবং মরসুমি ফল, সব্জি খেতে উৎসাহিত করে। আমদানি করা ফল বা বাইরের সব্জি-ফল আনতে হলে পরিবহণ খরচ লাগে। খাবারের দাম বাড়ে। স্থানীয় চাষের পণ্য নষ্ট হলে বা চাহিদা না থাকলে কৃষকের ক্ষতি হতে পারে।
· দাম বেশি নয়, অথচ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন যে খাবার লোকে সহজে খেতে পারেন, আবার যেটি চাষ করে কৃষকেরও উপার্জন হয়— এমন খাবারই থাকে খাদ্যতালিকায়।
খাদ্যতালিকায় কী কী রাখা যায়?
চিকিৎসক অপর্ণা সন্থনম বলছেন, প্রক্রিয়াজাত নয়, প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদিত খাবারে জোর দেওয়া হয় এতে। প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ, কার্বোহাইড্রেট, সমস্ত কিছুরই সঠিক সমন্বয়ে জোর দেওয়া হয় ডায়েটে।
১। প্রক্রিয়াজাত নয়, এমন খাবার যেমন ফল, টাটকা শাকসব্জি, ডাল, দানাশস্য পছন্দের যে কোনও খাবার পরিমিত খাওয়া চলে। যেমন বাজারচলতি চিপ্স বা মুখরোচক খাবারের বদলে ছোলাভাজা, মাখানা খাওয়া যেতে পারে।
২। খাবারে যোগ করা দরকার ফাইবার। স্যালাড, স্যতে করা সব্জির সঙ্গে থাক পনির, মাছ, মাংস, টোফু। এতে পেট ভরবে, আবার রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়বে না।
৩। পছন্দের খাবার বাদ না দিয়ে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। বড় থালা বাটির বদলে ছোট থালা বা বাটিতে খাবার রাখুন। থালা-বাটি ভরা রাখলে মানসিক তৃপ্তি আসবে। মনে হবে না, কম খাওয়া হচ্ছে।
৪। প্রাণিজ প্রোটিনের বদলে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো যায়। অঙ্কুরিত ছোলা, মুগ, টোফু, পনির, সয়াবিন— খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীর ভাল থাকবে।
৫। কৃত্রিম গন্ধ এবং স্বাদযুক্ত দই, খাবারের বদলে টাটকা ফল, সব্জি খাওয়া ভাল। আম ফ্লেভারের দইয়ের বদলে টাটকা ঘরে পাতা দই, তার সঙ্গে আম খাওয়া যায়। এতে পুষ্টিগুণও বেশি মেলে। ৬। খাবার অপচয় রোধে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয় এতে। বাসি ভাত, ডাল দিয়ে বাড়ির মহিলারা অনেক কিছু বানিয়ে নেন। সেটাও করা যায়। পড়ে থাকা ডাল দিয়ে হতে পারে ডাল পরোটা। আলু দিয়ে আলুকাবলি বা মুড়ি মাখা।
৭। সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত জল বা তরল খাবার খাওয়া জরুরি। কিন্তু কার্বন যুক্ত বা চিনি যুক্ত পানীয় স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী নয়। বরং বাড়িতে তৈরি ছাস, ঘোল, লস্যি, লেবুর জল, পুদিনার শরবত খাওয়া ভাল।