তাড়াহুড়োয় সকালে শুধু প্রোটিন বার খেয়ে প্রাতরাশ সারছেন? কী ক্ষতি হতে পারে জানেন? ছবি: এআই
ঘুম থেকে উঠেই ব্যস্ততা। অফিসের তাড়াহুড়ো। তার আগে বাজার করা কিংবা রান্নার চাপ। টেবিলে বসে ধীরে সুস্থে খাওয়ার সময় কই! মুশকিল আসান ‘প্রোটিন বার’। ল্যাপটপে ই-মেল দেখতে দেখতেই খেয়ে ফেলা যায়। প্যাকেট খোলো আর চকোলেটের মতো খাও। বাস হোক বা মেট্রো, চট করে খেয়ে ফেলা যায়। আর জিনিসটি মোটেই অস্বাস্থ্যকর নয়! প্রোটিন আছে এতে। এমন ভাবেই কি দিন কাটছে? ‘স্বাস্থ্য-সচেতন’ বলেই বেছে নিচ্ছেন এমন খাবার। কিন্তু সত্যি কি প্রোটিন বার প্রাতরাশের পরিপূরক হতে পারে?
সমাজমাধ্যম আর সেখানে স্বাস্থ্য নিয়ে অসংখ্য পরামর্শ বদলে দিয়েছে নতুন প্রজন্মের ভাবনাচিন্তা। চিরপরিচিত দেশি খাবারের বদলে এখন হরেক রকম সিরিয়াল, দানাশস্য খাওয়ার চল, যা বছর কয়েক আগেও সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরে সচরাচর খেতেন না কেউ। দৈনিক খাদ্যতালিকায় এবং নির্মেদ চেহারা পেতে প্রোটিন কতটা জরুরি তা নিয়ে জোরদার চর্চা হতেই বাজারে নতুন রূপে, নতুন মোড়কে নানা রকম সংস্থা প্রোটিন বার নিয়ে এসেছে। প্রোটিন বার একেবারেই নতুন কোনও জিনিস নয়। কিন্তু আগে যা শরীরচর্চা বা দৌ়ড়বিদদের প্রয়োজনের জিনিস ছিল, এখন স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স হিসেবে তা-ই খাওয়া শুরু করেছেন অনেকে। প্রাতরাশ হোক বা সান্ধ্য খাবার, অনেকেই খিদের মুখে অন্য কিছু খাওয়ার সময় না পেয়ে, প্রোটিন বারে ভরসা রাখেন। কিন্তু সময় নিয়ে পছন্দের খাবার সাজিয়ে প্রাতরাশ আর প্রোটিন বার খাওয়া কি সমান?
প্রাতরাশের প্রয়োজনীয়তা: দৈনন্দিন কাজের প্রয়োজনীয় শক্তি মেলে সকালের খাবারে। তা ছাড়া, রাতে খাওয়ার পর মানুষজন ঘুমিয়ে পড়েন। দীর্ঘ ক্ষণ খাওয়া হয় না। সকালে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এতে কমে যেতে পারে। তাই সকালের খাবার হওয়া দরকার পুষ্টিকর, বলেন চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদেরা। এ নিয়ে একাধিক গবেষণাও হয়েছে। তাতেই স্পষ্ট, প্রাতরাশ ঠিকমতো না করলে ডায়াবিটিস, ওবেসিটি, বিপাকহার জনিত সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
প্রাতরাশে প্রোটিন বার: ১৯৮০-র দশকে প্রোটিন বার ব্যবহার হত শরীরচর্চার পর দ্রুত শক্তি জোগানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু গত কয়েক বছরে প্রোটিন বার নিয়ে ভাবনা বদলেছে। চকোলেট, বাদামের মাখন-সহ বিভিন্ন উপকরণ যোগে এখন সে সব তৈরি হচ্ছে। প্রোটিনের চাহিদা পূরণে নতুন প্রজন্মের অনেকেই তা স্ন্যাক্স হিসাবেও বেছে নিচ্ছেন।
জলখাবারের শুধুই প্রোটিন বার?
প্রাতরাশে শুধুই প্রোটিন বার খাওয়ার বিষয়টিকে সমর্থন করছেন না চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদেরা। সকালের খাবারে ব্যালান্স ডায়েটের পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়িকা অনন্যা ভৌমিক। তিনি বলছেন, ‘‘দিনের শুরুর খাবারে শুধু প্রোটিন যথেষ্ট নয়। কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এমনকি স্বাস্থ্যকর ফ্যাটও খুব জরুরি। এক-আধদিন সকালে প্রোটিন বার খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু নিয়মিত এমন অভ্যাসের খারাপ ফল পড়তে পারে দৈনন্দিন জীবনে। সাময়িক ভাবে সমস্যা না হলেও সুষম আহারের অভাব ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, পিসিওডি-র মতো রোগের জন্ম দিতে পারে।’’ অনন্যা জানাচ্ছেন, প্রোটিন হজমেও ভিটামিন এবং খনিজের প্রয়োজন হয়। শুধু প্রোটিন খেলে হজমের সমস্যাও হতে পারে।
বেঙ্গালুরুর পুষ্টিবিদ কার্তিগাইসেলভির কথায়, প্রোটিন বার প্রোটিনের অভাব পূরণে সহায়ক হতে পারে কিন্তু তা স্বাস্থ্যকর ব্যালান্স ডায়েটের পরিপূরক কোনও ভাবেই হতে পারে না। সকালের খাবারের পাতে দানাশস্য, ফাইবার, ভিটামিন, লিন প্রোটিনের দরকার হয়।
কতটা প্রোটিন বার দিনে খাওয়া যায়?
খিদের মুখে কেউ এক বারে একাধিক বার খেয়ে ফেলছেন। কেউ খাচ্ছেন একটা। পু্ষ্টিবিদ অনন্যা বলছেন একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওজন ৬০ কেজি হলে, তাঁর দৈনিক ৬০ গ্রাম প্রোটিন দরকার। কার্তিগাইসেলভির কথায়, একটি প্রোটিন বারে কতটা প্রোটিন থাকছে, তার উপর নির্ভর করে তা কতটা খাওয়া যায়। কোনও বারে ১০ গ্রাম প্রোটিন থাকে, কোনওটিতে থাকে ২০ গ্রাম। পুষ্টিবিদের পরামর্শ, সাপ্লিমেন্ট হিসেবে প্রোটিন বার খেতে হলে দেখা নেওয়া দরকার, তাতে কার্বোহাইড্রেট বা কৃত্রিম চিনি মিশ্রিত রয়েছে কি না। স্বাস্থ্যের জন্য খেতে হলে, চিনি ছাড়া প্রোটিন বার বেছে নেওয়াই ভাল।