ওষুধ খেয়েও অম্বল সারে না, আসল কারণ জেনে নিন। ছবি: ফ্রিপিক।
অম্বলের সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খেলে এবং খাওয়াদাওয়া নিয়ম মেনে করলে তা নিয়ন্ত্রণেও থাকে। কিন্তু যদি দেখেন, টানা তিন সপ্তাহের বেশি গ্যাস-অম্বল, পেট ফাঁপার সমস্যা রয়েছে এবং ওষুধেও তা সারছে না, তা হলে বুঝতে হবে গোল বেধেছে অন্য জায়গায়। নিছক অম্বল নয়, অন্য কোনও শারীরিক সমস্যাও জড়িত। কিসের লক্ষণ হতে পারে?
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস)
শরীরের গঠনগত কোনও সমস্যা নয়, পুরোপুরিই ‘ফাংশনাল ডিজ়অর্ডার’, এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসক রণবীর ভৌমিক। খাদ্যনালি, স্নায়ু-সহ সার্বিক ভাবে গোটা শরীরের সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। সেখান থেকেই সঙ্কেত আসে ও তার ফলে ‘বাওয়েল মুভমেন্ট’ হয় দ্রুত। তার পরেই আসে মলত্যাগের বেগ। কিন্তু এই সঙ্কেত আদান-প্রদানেই যদি সমস্যা হয়, তা হলে এই রোগ বাসা বাঁধে। অনিয়মিত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান, ব্যায়ামের ঠিক পরেই খাবার খাওয়া, এমনকি অতিরিক্ত ব্যায়ামও কখনও কখনও আইবিএসের সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
খাবারে অ্যালার্জি নয় তো?
দুধ বা দুগ্ধজাত খাবারে অ্যালার্জি বা ‘ল্যাকটোজ় ইনটলারেন্স’ হলে তার থেকেও পেট ফাঁপা, গ্যাসের সমস্যা চলতেই থাকে। আবার ফ্রুক্টোজ ম্যালঅ্যাবজ়র্পশন, গ্লুটেন সেনসিটিভি থাকলেও অম্বলের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে। সে ক্ষেত্রে খাবার বুঝেশুনে খেতে হবে।
স্মল ইন্টেস্টিনাল ব্যাক্টেরিয়াল ওভারগ্রোথ (এসআইবিও)
অন্ত্রে যদি ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হয়, তা হলে অম্বল, গ্যাস, পেট ফাঁপা, এমনকি খাদ্যনালিতেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে কিছু খেলেই অম্বল হবে, গলা-বুক জ্বালা করবে, বমি ভাব থাকবে, খাবার হজম হতে সমস্যা হবে। এসআইবিও থাকলে ঘন ঘন ডায়েরিয়া হবে, সব সময়েই পেট ভার থাকবে।
হেলিকোব্যাক্টের পাইলোরি
এটি এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ, যা পেপটিক আলসারের অন্যতম প্রধান কারণ। পেটে অসহ্য যন্ত্রণা, বমি ভাব, পেট ফাঁপা এবং খিদে কমে যাওয়া এর লক্ষণ। কিছু খেলেই বদহজম হবে, অম্বল সারতেই চাইবে না।
সিলিয়াক রোগ
গমে থাকে গ্লুটেন নামে এক ধরনের প্রোটিন। গড়ে ১০০ জনের মধ্যে ১ জনের দেহে এই প্রোটিন এক প্রকার অটোইমিউন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ক্ষুদ্রান্তে মারাত্মক প্রদাহ হয়। তার জেরে পেট ভার, পেট ব্যথা এবং ডায়েরিয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। সিলিয়াক রোগ হলে দীর্ঘস্থায়ী ডায়েরিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেবে। শুধু তা-ই নয়, ত্বকে র্যাশ বা ফোস্কা পড়া, মুখে-জিভে ছোট আলসারও হতে পারে সিলিয়াকের লক্ষণ। এর থেকে রেহাই পেতে গম-বার্লি খাওয়া বন্ধ করতে হবে, বদলে সব রকম আনাজ, ডিম-মাছ-মাংস, ফল, বাদাম, বীজ জাতীয় খাবার রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। প্রোটিন খেতে হবে বেশি করে।