স্মৃতি জমা রাখার যন্ত্র, চাইলেই মনে পড়বে যে কোনও কিছু। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভুলে যাওয়ার পথটাই আর থাকবে না। কারণ ভুলে যেতে দেবে না এই ডিভাইস। মস্তিষ্কে বসিয়ে দিলেই, স্মৃতির পাতা একটার পর একটা খুলতে থাকবে। অতীতের গুরুত্বপূর্ণ কোনও ঘটনাও মনে পড়ে যাবে লহমায়। রোজ যা যা ভুলছেন, সে সব তো আছেই, এক বার দেখে বা শুনেও তা মনে রাখতে পারবেন বহু দিন। এমনই এক যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছেন কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা।
ইলন মাস্কের মেমরি চিপ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরেই হইচই চলছে। কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা আরও কয়েক কদম এগিয়ে এমন যন্ত্র তৈরি করে ফেলেছেন, যা মাথায় বসালে আর অস্ত্রোপচার করে বার করার দরকার পড়বে না। মস্তিষ্কের কোষের মধ্যেই মিশে যাবে। আর যদি তা বার করার দরকার হয়, তা হলে ‘মেডিক্যাল বর্জ্য’ হিসেবে জমা হবে না, কারণ ওই যন্ত্র জলে দিব্যি দ্রবীভূত হতে পারবে।
কোরিয়া ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকেরা এই যন্ত্রটি তৈরি করেছেন, যার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তাঁরা যন্ত্রটি নাম দিয়েছেন ‘পিসিএল-টেম্পো’। এটি পলিক্যাপ্রোল্যাকটন (পিসিএল) নামে বায়ো পলিমার দিয়ে তৈরি। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এমন জৈব অণু দিয়ে যন্ত্রটি বানানো হয়েছে, যার মধ্যে তথ্য জমা থাকতে পারে। ঠিক যেমন ফোনের মেমরি চিপ ডেটা সংরক্ষণ করে রাখে, তেমনই। সেটি থাকে বৈদ্যুতিন যন্ত্রে, আর এটি বসানো হবে মানুষের মস্তিষ্কে।
যন্ত্রটি প্রতি মুহূর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনার জমা করে রাখতে পারবে। অতীতের স্মৃতি সংরক্ষণ করতেও পারবে। চাইলে এই যন্ত্রটিতে জমা তথ্য মুছেও দেওয়া যাবে। কোনও খারাপ স্মৃতি যদি মনে না রাখতে চান, তা হলে সেই ডেটা মুছে দেওয়ার বিশেষ প্রযুক্তিও থাকবে যন্ত্রটিতে। তবে যন্ত্রটি একটানা কত দিন চলবে এবং কী পরিমাণ তথ্য জমা রাখবে, তা এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি। এই নিয়ে গবেষণা চলছে।
স্মৃতি জমা রাখার যন্ত্র শরীরের জন্য কতটা ভাল হবে, সে নিয়ে গবেষণা অবশ্য চলছে। যদিও বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, যন্ত্রটি শরীরে বসালে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না। পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অনেক ঘটনা মনে রাখতে হয়, সে ক্ষেত্রেও যন্ত্রটি কাজে আসবে। চাইলেই আবার সে সব স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা যাবে। অন্তত ২৫০ বার যন্ত্রটিতে স্মৃতি জমা রাখা ও মুছে দেওয়ার কাজটি করা যাবে। যে মুহূর্তে মনে হবে যন্ত্রটির আর প্রয়োজন নেই, সেটিকে সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট করে দেওয়া যাবে।
যন্ত্রটি নিয়ে অবশ্য চিকিৎসকদের মত ভিন্ন। স্নায়ুরোগ চিকিৎসক অনিমেষ করের বক্তব্য, এমন যন্ত্র আদৌ মানুষের জন্য কার্যকরী হবে কি না, তা পরবর্তী সময়ে বোঝা যাবে। স্মৃতি জমা রাখার যন্ত্র কাজ করবে নিশ্চয়ই, কিন্তু মনে রাখার যে সহজাত ক্ষমতা সেটি নষ্ট হতে থাকবে। যে কোনও কাজেই এখন মানুষ যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়েছে। মস্তিষ্কের কাজ দিন দিন কমছে, এতেই মস্তিষ্কের ধারও কমছে। এর পরেও যদি স্মৃতি ধরে রাখার যন্ত্র চলে আসে, তা হলে স্মৃতিশক্তিই ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকবে।