Walking Vs Yoga For Diabetes

রক্তে ক্রমবর্ধমান শর্করার মাত্রা, হাঁটবেন না কি যোগাসনেই হবে সুরাহা, চিকিৎসকের মত কী?

খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণে, তবু রক্তে শর্করার ওঠা-পড়া বাগে আসছে না? হাঁটাহাটি না যোগাভ্যাস— কোন ধরনের শরীরচর্চায় ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫ ১১:০০
Share:

রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ছে? যোগাভ্যাস নাকি হাঁটাহাটি, কোনটিতে ভাল কাজ হবে? ছবি: আনন্দবাজার ডট কম

বিশ্ব জু়ড়ে চিকিৎসকেরা চিন্তিত ডায়াবিটিস নিয়ে। ‘ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবিটিস ফেডারেশন’-এর ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে ২০২৪ সালে ভারতে ডায়াবিটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ কোটির উপরে। পরিস্থিতি যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে এই সংখ্যা ২০৫০-এ ১৫ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

Advertisement

এটি এমন রোগ, যেটি এক বার ধরা পড়লে তার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয় জীবনভর। ডায়াবিটিস হলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয় ইনসুলিন নামক হরমোন। সেটি ঠিক ভাবে ক্ষরিত না হলে বা কোষ ইনসুলিনে ঠিকমতো সাড়া না দিলেই এই সমস্যা হয়।

চিকিৎসকেরা বলনে, এই অসুখ মোটেই হেলাফেলার নয়। বরং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, এই রোগকে বশে রাখতে সাহায্য করে। আর তার জন্যই দরকার রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখা। চিকিৎসকেরা ডায়াবেটিক রোগীদের হাঁটাহাটির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যাঁরা শরীরচর্চা করেন এবং এই বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তাঁদের অনেকেই আবার বলেন, ডায়াবিটিস বা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের ভাল উপায় যোগাভ্যাস।

Advertisement

হাঁটাহাটি এবং যোগাভ্যাস— দুই-ই ভাল, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু রক্তে শর্করার মাত্রায় লাগাম টানতে কোনটি বেশি কার্যকর?

হাঁটাহাটি: হাঁটাহাটির উপকারিতা অনেক। মেদ ঝরাতে, হার্ট ভাল রাখতে হাঁটতে বলেন চিকিৎসকেরা। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও হাঁটার উপকারিতা রয়েছে।

যোগাসন: যোগাসনও শরীরচর্চার ভাল উপায়। স্নায়ুর উত্তেজনা কমাতে, ব্যথা-বেদনা সারাতে, শরীর ভাল রাখতে যোগাসন কার্যকর। কিন্তু যদি ডায়াবিটিস কমানোর প্রশ্ন ওঠে, তা হলে এগিয়ে থাকবে শরীরচর্চা কোন পন্থা?

ডায়াবিটিসের চিকিৎসক অভিজ্ঞান মাঝি বলছেন, ‘‘ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ক্যালোরি খরচ করা দরকার। অর্থাৎ, খাবারের মাধ্যমে যে ক্যালোরি শরীরে ঢুকছে, সেটি ঝরিয়ে ফেলার জন্য হাঁটতে বলা হয়। এতে ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’ কমে। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থাকলে শরীরের কোষগুলি ইনসুলিন হরমোনে ঠিকমতো প্রতিক্রয়া করে না। আধ ঘণ্টা জোরে হাঁটলে, ঘাম ঝরলে ক্যালোরি ঝরে, ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স কমে যায়, রক্তে শর্করার মাত্রাও কমতে থাকে। অন্য দিকে, যোগাসনের লক্ষ্যই হল শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা। হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণেও যোগাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। অগ্ন্যাশয়ের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে, হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই ইনসুলিন হরমোন আরও ভাল ভাবে কাজ করবে। সুতরাং হাঁটা এবং যোগাসন—দুই-ই শরীরের জন্য ভাল।’’

ডায়াবিটিসের দু’টি ধরন আছে। টাইপ ১ এবং টাইপ ২। টাইপ ১ ডায়াবিটিসে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ইনসুলিন হরমোনটি সঠিক মাত্রায় নিঃসৃত হয় না। তার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা ‘হাইপার গ্লাইসেমিয়া’র কারণ।

অন্য দিকে, টাইপ ২ ডায়াবিটিসে ইনসুলিন হয় ঠিকমতো ক্ষরিত হয় না, বা হলেও কোষ সেই ইনসুলিনকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারে না। যার ফলে শর্করা ঠিক ভাবে শরীর কাজে লাগাতে পারে না এবং তার জেরে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।

সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত ডায়াবিটিস-প্রশিক্ষক এবং পুষ্টিবিদ কণিকা মলহোত্র এক সাক্ষাৎকারে জানাচ্ছেন, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে হাঁটাহাটি এবং যোগাভ্যাস, দুই-ই উপকারী। তবে যোগাসন করলে তা অনেক বেশি স্থিতিশীল থাকে। নিয়মিত সঠিক পন্থায় যোগাসন অভ্যাস করলে অগ্ন্যাশয়ের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।

কখন হাঁটবেন বা যোগাসন করবেন?

অভিজ্ঞান জানাচ্ছেন, খাওয়ার পরই তাঁরা হাঁটাহাটির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কণিকা জানাচ্ছেন, ৩০-৪৫ মিনিট দিনে হাঁটাহাটি করলে ভাল। খাওয়ার পরে অন্তত পক্ষে ১০ মিনিট হাঁটলেও উপকার হবে।

নিয়মিত যদি সময় করে যোগাসন করা যায়, বিশেষত অগ্ন্যাশয়ের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির আসন করা সম্ভব হয়, তার দীর্ঘমেয়াদি সুফল মিলবে। যোগাভ্যাসে ‘স্ট্রেস হরমোন’ নিয়ন্ত্রণে থাকে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে হরমানের ভারসাম্য থাকা খুব জরুরি।

অভিজ্ঞানের বক্তব্য, সে কারণেই কেউ যদি নিয়ম করে হাঁটাহাটি করেন আবার পাশাপাশি সঠিক ভাবে যোগাসন করেন— তা হলে দ্বিগুণ উপকার মিলবে অবশ্যই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement