নুন বা নোনতা খাবার খাওয়ার এত ইচ্ছা হয় কেন? ছবি: ফ্রিপিক।
খাওয়ার পাতে কাঁচা নুন নিয়ে বসেন অনেকেই। ভাত খাওয়ার সময়ে নুন না মাখলে খাবারের স্বাদই নাকি খোলে না। কাঁচা নুন খেতে যতই বারণ করা হোক না কেন, বাঙালির পাতে নুন থাকবেই। আর কাঁচা নুন বলে নয়, নোনতা খেতেও কম ভাল লাগে না। বিকেল হলেই ভাজাভুজি, চপ, সিঙ্গাড়া খেতে মন চায় অনেকেরই। এই যে নুন বা নোনতা খাওয়ার এত ইচ্ছে, এর পিছনে কারণ কী? এত দিন মনে করা হত, শরীরে জল ও খনিজ লবণগুলির ঘাটতি হলেই বুঝি নুন খাওয়ার ইচ্ছা নয়। তা কিন্তু নয়। এর নেপথ্যের কারণ অন্য।
মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা বা ‘সুগার ক্রেভিং’ কেন হয়, তা নিয়ে অনেক মতামত আছে। কিন্তু ‘সল্ট ক্রেভিং’-এর আসল কারণ কী, সে বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন-এর তথ্য বলছে, নুন খাওয়ার ইচ্ছার একটি কারণ হল হরমোনের গোলমাল। অ্যাল্ডোস্টেরন নামক একটি হরমোন রয়েছে যেটির তারতম্য হলে তখন নুন খাওয়ার অদম্য ইচ্ছা জাগে। অ্যাল্ডোস্টেরন একটি স্টেরয়েড হরমোন, যা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে বার হয়। এই হরমোনটি শরীরে রক্তচাপ ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। এর আরও একটি কাজ হল শরীরের সোডিয়াম শোষণে সাহায্য করা, বদলে অতিরিক্ত পটাশিয়াম প্রস্রাবের সঙ্গে বার করে দেওয়া। এই হরমোনের তারতম্য হলে রক্তচাপ বাড়ে, শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রাও বাড়ে, কিডনির অসুখ দেখা দিতে পারে।
তবে হরমোনের গন্ডগোল ছাড়াও নুন বা নোনতা খাবার খাওয়ার ইচ্ছার আরও কিছু কারণ আছে। যেমন, কম ঘুম বা অনিদ্রার সমস্যা থাকলে ‘সল্ট ক্রেভিং’ বাড়তে পারে। যাঁরা প্রচণ্ড ঘামেন, তাঁদের নোনতা খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে। প্রচণ্ড মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থেকেও নোনতা খাওয়ার সাধ জাগে। আবার কিছু রোগ আছে যা থেকেও এমন ইচ্ছা হয়। তার মধ্যে একটি হল ‘বার্টার সিন্ড্রোম’। এটি জিনগত রোগ, যাঁদের থাকে তাঁদের শরীর থেকে সোডিয়াম দ্রুত বেরিয়ে যায়, ফলে পটাশিয়াম ও ক্যালশিয়ামেরও তারতম্য দেখা দেয়। এই সিন্ড্রোম থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়, কিডনিতে পাথর জমার প্রবণতা বেশি হয়, রক্তচাপ যখন তখন কমে যেতে পারে। আবার ‘সিস্টিক ফাইব্রোসিস’ নামক অসুখের ক্ষেত্রেও নুন বেশি খাওয়ার ইচ্ছা হয় রোগীর। এই রোগে ফুসফুস ও বিপাকক্রিয়া পুরোপুরি নষ্ট হতে থাকে।