কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি। ছবি: সংগৃহীত।
পুষ্টিবিদেরা বলেন, গাড়ির ইঞ্জিন চালু করার জন্য যেমন তেলের প্রয়োজন হয়, তেমনই সারা দিনের জন্য শরীরে শক্তির জোগান দিতে জলখাবারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু জলখাবারের গুরুত্ব এতটুকুতে সীমাবদ্ধ নয়। শুধু দিন শুরু করার জন্য দরকারি অভ্যাস নয়, বরং রোগের বিরুদ্ধে শরীরের ভিতরে অদৃশ্য ঢাল হিসেবেও কাজ করে এটি। অন্তত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় তেমনই দেখা গিয়েছে। সমীক্ষা করে লক্ষ করা গিয়েছে, যাঁরা নিয়মিত সকালের জলখাবার খান, তাঁদের কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে কম।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এপিডেমোলজি’-তে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্র তৈরি হয়েছে ইংল্যান্ডের ৪,৭৫,০০০ জন প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে সমীক্ষা করার পর। দেখা গিয়েছে, যাঁরা প্রাতরাশে বেশি পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার গ্রহণ করেছেন, তাঁদের কোলন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ১৪ শতাংশ কম তাঁদের তুলনায়, যাঁরা কম ফাইবারযুক্ত খাবার খান। তাই বলা হচ্ছে, সকালে জলখাবার খাওয়া হচ্ছে কি না, কেবল সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, কী খাওয়া হচ্ছে, সেটি দেখাও জরুরি।
ডায়েটরি ফাইবারের উপর ভরসা রাখতে হবে। ছবি: সংগৃহীত।
গোটা শস্য, ওট্স, ফল ইত্যাদিতে ফাইবার ভর্তি থাকে। ফাইবারই হজমক্রিয়াকে সুস্থ রাখে এবং অন্ত্র দিয়ে দূষিত পদার্থ বার করতে সাহায্য করে। ফলে কার্সিনোজেন উপাদান (যা ক্যানসারের জন্য দায়ী) খুব বেশি ক্ষণ কোলনের সংস্পর্শে থাকতে পারে না।
ক্যানসার চিকিৎসক সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায় এই গবেষণাকে সমর্থন করে বলছেন, ‘‘ডায়েটরি ফাইবার কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ডায়েটরি ফাইবার হচ্ছে উদ্ভিজ্জ কার্বোহাইড্রেট, যেমন শাক, সব্জি, আটা, বিভিন্ন ফল এবং ওট্স। অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এগুলি খেলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমছে। ডায়েটরি ফাইবার শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে দ্রুত মল তৈরিতে সাহায্য করছে। কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ছে না। ফলে নানাবিধ খাবারের মধ্যে থাকা ব্যাক্টেরিয়া বা কার্সিনোজেন কোলনের কোষের সংস্পর্শে আসতে পারছে না বলে কোষও নষ্ট হচ্ছে না। ডায়েটারি ফাইবারগুলি কোলনের ব্যাক্টেরিয়ার সঙ্গে বিক্রিয়া করে শর্ট-চেন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করছে। এগুলি কোলনের কোষকে সুরক্ষা দেয়।’’
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, প্রতি দিন ১৫-৩০ গ্রাম ডায়েটরি ফাইবার খাওয়া উচিত সকলের। তাই তাঁর পরামর্শ, খাদ্যতালিকায় যেন কলার মতো ফলমূল, শাকসব্জি ইত্যাদি রাখতেই হবে। তাতেই কোলন ক্যানসার বা পলিপ ইত্যাদি রোধ হবে।
একই ভাবে সকাল উঠে প্রাতরাশ করারও গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, প্রাতরাশ শরীরকে বিপাকীয় প্রক্রিয়া শুরু করার সঙ্কেত দেয়। কিন্তু জলখাবার বাদ দিলে পিত্তের অ্যাসিড এবং পাচক এনজ়াইম ভিন্ন ভাবে তৈরি হতে পারে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।