Laxmi Puja Rituals

বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো করার পুরোহিত পাচ্ছেন না? নিজেই দেবীর পুজো করে নিতে পারেন, জেনে নিন নিয়ম

যে হেতু প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেবীর পূজা করা হয়, তাই এই দিন পুরোহিতের আকাল পড়তে দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে পুরোহিত ছাড়া বাড়িতে আমরা নিজেরাই দেবীর আরাধনা করে নিতে পারি। শুধু মানতে হবে সঠিক কিছু নিয়ম।

Advertisement

বাক্‌সিদ্ধা গার্গী

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৩৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

৬ অক্টোবর, সোমবার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। এই দিন প্রায় প্রত্যেক বাঙালি হিন্দু বাড়িতেই মা লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিন মা লক্ষ্মী মর্তে আসেন তাঁর ভক্তদের আশীর্বাদ করার উদ্দেশ্যে। মা লক্ষ্মীর আরাধনায় সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। অর্থাভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মাটির মূর্তি ছাড়াও, মাটির সরা, ছবি এমন নানা ভাবে লক্ষ্মীপুজো করার চল আমাদের মধ্যে রয়েছে। যে হেতু প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেবীকে পূজিত করা হয়, তাই এই দিন পুরোহিতের আকাল পড়তে দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে পুরোহিত ছাড়া আমরা নিজেরাই বাড়িতে দেবীর আরাধনা করে নিতে পারি। শুধু মানতে হবে সঠিক কিছু নিয়ম।

Advertisement

পুরোহিত ছাড়া বাড়িতে কী ভাবে লক্ষ্মীপুজো করা সম্ভব?

১. প্রথমেই স্নান করে শুদ্ধ বসন পরতে হবে। তার পর যে জায়গায় পুজো হবে সেই স্থান ভাল করে পরিষ্কার করে নিয়ে গঙ্গাজল ছেটাতে হবে। নিজের এবং পুজোয় যাঁরা অংশগ্রহণ করবেন, তাঁদের মাথাতেও গঙ্গাজল ছিটিয়ে নিতে হবে।

Advertisement

২. লক্ষ্মীপুজো শুরুর আগে নারায়ণকে স্মরণ করা আবশ্যিক। মা লক্ষ্মীকে যেখানে বসাবেন সেই স্থানে অবশ্যই আলপনা আঁকতে হবে। বাড়ির সদর দরজার সামনে এবং অন্যান্য জায়গায় লক্ষ্মীদেবীর চরণ আঁকতে হবে।

৩. পুজোর স্থানে একটি তামার পাত্র রাখুন। তার পর সূর্যদেবকে স্মরণ করে সেই পাত্রে অল্প অল্প করে জল ঢালতে থাকুন।

৪. ঘটস্থাপনের জন্য প্রথমে একটি তামার ঘট নিয়ে তাতে সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে নিন। তার পর মাটির ডেলা (গঙ্গামাটি হলে খুব ভাল হয়, অন্য মাটিও চলবে) নিয়ে সেটিকে সমান করে মেঝের উপর রাখুন। সেটির উপর ঘট স্থাপন করুন। ঘটের চারপাশে ধান ছড়িয়ে দিন।

৫. ঘটটিকে গঙ্গাজল দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। এর পর সেটির মধ্যে আম্রপল্লব দিতে হবে। আম্রপল্লবটি ঘটে দেওয়ার আগে সেটির মধ্যে তেল ও সিঁদুরের ফোঁটা দিয়ে নিন। আম্রপল্লবটি ঘটে দেওয়ার পর তার মধ্যে হরিতকী, ফুল ও দূর্বা দিন।

৬. ঘটস্থাপনের পর লক্ষ্মীদেবীর ধ্যানমন্ত্র জপ করে দেবীকে নিজের ঘরে ডাকুন। যদিও লক্ষ্মীর পাঁচালিতে এই মন্ত্রের উল্লেখ থাকে, তা-ও যদি না জানা থাকে তা হলে ভুল মন্ত্র পাঠ করার বদলে লক্ষ্মীদেবীকে একমনে স্মরণ করুন। কোনও মতেই ভুল মন্ত্রোচ্চারণ করা যাবে না।

৭. তার পর লক্ষ্মীদেবীকে ফুলের মালা ও ফুল অর্পণ করুন। সম্ভব বলে লক্ষ্মীদেবীর পা ধুইয়ে তাতে আলতা পরাতে পারেন। মাথায় চন্দন ও সিঁদুরের টিপ পরান এবং ভোগ নিবেদন করুন। লক্ষ্মীপুজোর ভোগে ফলের সঙ্গে নাড়ু, মুড়কি, মিষ্টি অবশ্যই রাখতে হবে।

৮. লক্ষ্মীপুজোয় কাঁসর, ঘণ্টা বাজানো যাবে না। কেবল শঙ্খ বাজানো যেতে পারে। অতিরিক্ত আওয়াজ দেবী মোটেই পছন্দ করেন না। এই পুজোয় তুলসীপাতাও ব্যবহার করা যাবে না। লোহার বাসনের বদলে কাঁসা বা পিতলের বাসন ব্যবহার করা উচিত।

৯. দেবীকে ধূপ-ধুনো দেখান ও নারায়ণকে স্মরণ করে দেবীর ঘটে ফুল দিন। তার পর জোড়হাতে দেবীকে প্রণাম করে তিন বার পুষ্পাঞ্জলি দিন। পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার আগে অবশ্যই গঙ্গাজল দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

১০. পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়ে গেলে দেবীর কাছে নিজের সকল মনোস্কামনা জানিয়ে দিন। তার পর লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়ে পুজো সম্পন্ন করুন। পাঁচালি পড়া হয়ে গেলে পুজোর ঘর থেকে সকলে বেরিয়ে গিয়ে ঘরের জানলা-দরজা কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ করে রেখে দিন। এই সময় দেবী এসে ভোগ গ্রহণ করে বলে বিশ্বাস করা হয়।

সাধারণত সন্ধ্যার পরই দেবীর পুজো করার রীতির উল্লেখ রয়েছে শাস্ত্রে। তবে অনেকে সকালের দিকেও করে থাকেন। যদিও দেবীকে পুজো করার শ্রেষ্ঠ সময় হল সূর্যাস্তের পরবর্তী সময়কাল। এই সকল নিয়ম বাদেও, বহু বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর আরও নানাবিধ নিয়ম রয়েছে। সেগুলি নিজেদের মতন করে মেনে পুজো করতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement