গত বুধবার গুজরাতের বডোদরায় মহিসাগর নদীতে ভেঙে পড়ে গম্ভীরা সেতু। ছবি: পিটিআই।
গুজরাতের বডোদরায় মহিসাগর নদীর উপর গম্ভীরা সেতু ভেঙে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২১। এ পর্যন্ত ২০টি দেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও এক ব্যক্তির খোঁজ মেলেনি। দুর্ঘটনার তিন দিন পরে তাঁর খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। কিন্তু সালফিউরিক অ্যাসিড ভর্তি একটি ট্যাঙ্কার নদীতে পড়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ধারকারীদের কয়েক জন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর।
বুধবার সকালে বডোদরায় সেতু বিপর্যয় হয়। সেতু ভেঙে একের পর এক গাড়ি পড়ে নদীতে। ক্রমশ মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুসংবাদ পাওয়া গিয়েছিল। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে গুজরাত সরকার। সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক আহতের মৃত্যু হয়েছে। বডোদরার কালেক্টর অনিল ধামেলিয়া বলেন, ‘‘নদীতে পড়ে যাওয়া একটি ট্যাঙ্কারে ভর্তি সালফিউরিক অ্যাসিড ছিল। মনে করা হচ্ছে, নদীর জলে অ্যাসিড মিশছে। জলে সোডা অ্যাশ (সোডিয়াম কার্বনেট) মিশে যাওয়ার ফলে উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা জ্বালাপোড়া এবং চুলকানির সমস্যায় ভুগছেন।’’ তিনি আরও জানান, এই সেতু বিপর্যয়ে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
মধ্য গুজরাতের সঙ্গে সৌরাষ্ট্রের যোগাযোগের অন্যতম ভরসা গম্ভীরা সেতু। আনন্দ, বডোদরা, ভারুচ, আঙ্কলেশ্বরের স্থানীয় লোকজন দৈনন্দিন চলাচলের জন্য এই সেতু ব্যবহার করতেন। কিন্তু ৪০ বছরের পুরনো সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ছিল বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়দের বড় অংশ। সেতু বিপর্যয়ের কারণ খোঁজার জন্য তদন্তকারী দল গঠন করেছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে সরাকরি চার ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল।
দুর্ঘটনায় প্রাণ বাঁচিয়ে ফেরা অনেকে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। এমনই একজন রাজুভাই আথিয়া। হাসপাতালে শয্যায় শুয়ে রাজু বলেন, ‘‘বাইক নিয়ে আমি আর আমার বন্ধু দ্বারকা থেকে অঙ্কলেশ্বর যাচ্ছিলাম। আমরা যখন সেতুর উপরে, তখন হুড়মুড়িয়ে একটি অংশ ভেঙে পড়ে। বাইক নিয়ে নদীতে পড়ে যাই দু’জন। আমার বন্ধুর কোনও খোঁজ পাইনি। আমায় নৌকা করে কয়েক জন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কী ভাবে প্রাণে বেঁচে গেলাম জানি না।’’ বলেই কেঁদে ফেলেন ওই যুবক।
আবার অল্পের জন্য বেশ কয়েক জন বিপদের মুখে পড়েননি। ২৩ বছরের মহেশভাই পরমার যেমন। বুধবার সকালে গম্ভীরা সেতুতে ওঠার আগে তাঁর বাইকের চাকা পাংচার হয়ে যায়। তার কিছু ক্ষণ পরেই ভেঙে পড়ে সেতুটি।