(ইনসেটে) ঐশ্বর্যা রায়। (বাঁ দিকে) রাবড়ি দেবী এবং তেজপ্রতাপ যাদব (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
তেজপ্রতাপ যাদবকে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, এ বার তা নিয়ে মুখ খুললেন লালু-পুত্রের প্রাক্তন স্ত্রী ঐশ্বর্যা রায়। তিনি আঙুল তুললেন লালুপ্রসাদ যাদবের পরিবারের দিকেই। ঐশ্বর্যার অভিযোগ, সব জেনেও তাঁর জীবন নষ্ট করেছে যাদব পরিবার। অতীতের মতো তিনি আবার আঙুল তুলেছেন প্রাক্তন শাশুড়ি তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবীর দিকে। কটাক্ষ করে জানান, সব জেনেবুঝেই এই ‘নাটক’ রচনা করেছেন তেজের মা। গোটা পরিবারই জড়িত।
পুত্র তেজপ্রতাপকে ‘ত্যাজ্য’ করেছেন রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব। মনে করা হচ্ছে, সমাজমাধ্যমে অনুষ্কা যাদব নামে এক মহিলার সঙ্গে নিজের ১২ বছরের সম্পর্কের কথা ঘোষণা করেই বাবার বিরাগভাজন হয়েছেন। সমাজমাধ্যমের এই পোস্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই তিনি দাবি করেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে। যদিও তাতে বিতর্ক থামেনি। প্রশ্ন ওঠে, গত ১২ বছর ধরে অনুষ্কা যাদব নামে ওই মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে ঐশ্বর্যাকে কেন তিনি বিয়ে করেছিলেন? যাদব পরিবারের অজান্তেই কি এ সব হয়েছে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এ বার একই প্রশ্ন তুললেন ঐশ্বর্যা।
সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, ওঁরা যখন এ সব জানতেন, তখন আমার জীবনটা নষ্ট করলেন কেন? আসলে ওঁরা সকলেই জড়িত। আমি সংবাদমাধ্যম থেকে এ সব জেনেছি। এমনকি, বিবাদবিচ্ছেদের খবরও। আমায় যখন মারধর করা হয়েছে, হেনস্থা করা হয়েছে, তখন ওঁদের সামাজিক ন্যায়বিচার কোথায় ছিল?’’ প্রসঙ্গত, দল থেকে তাড়িয়ে এবং ত্যাজ্যপুত্র করার পরে লালু জানান, তেজপ্রতাপের আচরণ পারিবারিক মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই নিয়ে কটাক্ষ করেছেন ঐশ্বর্যা।এর পরে ঐশ্বর্যা আবার প্রাক্তন শাশুড়ি রাবড়িকে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আসলে রাবড়ি দেবীই ওঁদের সকলকে চুপ থাকতে বলেছেন। সামনেই নির্বাচন বলে এ সব নাটক করছেন ওঁরা।’’
২০১৮ সালে পটনায় ঘটা করে তেজের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ঐশ্বর্যার। তেজ দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। অন্য দিকে, ঐশ্বর্যা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করার পরে এমবিএ করেছিলেন। কয়েক মাস পরেই আলাদা হয়ে যান তাঁরা। তাঁদের বিচ্ছেদ মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন। ঐশ্বর্যার বাবা চন্দ্রিকা রায় বিহারের ছ’বারের বিধায়ক। অতীতে মন্ত্রীও হয়েছেন। ঐশ্বর্যার দাদু দারোগাপ্রসাদ রায় ১৯৭০ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১০ মাস ওই পদে ছিলেন। দারোগাপ্রসাদ ছিলেন কংগ্রেস নেতা। চন্দ্রিকাও রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে কংগ্রেসের নেতা ছিলেন। পরে তিনি আরজেডিতে যোগ দেন। দলের প্রধান লালুর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন চন্দ্রিকা। সেই সূত্রেই লালুর পুত্র তেজের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন তিনি। কিন্তু মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে বাবা চন্দ্রিকাও আরজেডি ছেড়ে দেন। জেডিইউতে যোগ দেন তিনি।
২০১৮ সালে তেজের বাড়ি ছেড়ে চলে যান ঐশ্বর্যা। একটি সংবাদমাধ্যমের ভিডিয়োতে তাঁকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছিল। পরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়ে তেজের পাশাপাশি রাবড়ি এবং ননদ মিশার দিকে আঙুল তোলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ওই তিন জন তাঁকে হেনস্থা, এমনকি মারধর করেছেন। থানায় তিন জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেন ঐশ্বর্যা। অভিযোগ করে বলেন, ‘‘প্রমাণ লোপাটের জন্য আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমার সব জিনিসপত্র ওঁরা নিজেদের কাছে রেখে আমায় তাড়িয়ে দিয়েছেন।’’ তিনি জানিয়েছিলেন, এ সবের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। রাবড়িও পাল্টা ঐশ্বর্যার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁকে হেনস্থা, অপমান করেছেন পুত্রবধূ। এ বার ফের সেই রাবড়ির দিকে আঙুল তুললেন ঐশ্বর্যা।