পশ্চিমবঙ্গের এক দম্পতিকে বেঙ্গালুরুতে থানায় ডেকে মারধরের অভিযোগ। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
বেঙ্গালুরুতে পুলিশি হেফাজতে পশ্চিমবঙ্গের এক দম্পতিকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল। তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ। আক্রান্ত সুন্দরী বিবি এবং তাঁর স্বামী বেঙ্গালুরুর বেলাগেরে রোড এলাকায় শ্রমিক কলোনিতে থাকতেন। সুন্দরী বেঙ্গালুরুর বর্তুর থানা এলাকায় এক ইঞ্জিনিয়ার দম্পতির বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। ওই বাড়ি থেকে সুন্দরী একটি হিরের আংটি চুরি করেছেন বলে সন্দেহ হয় দম্পতির। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই সুন্দরী এবং তাঁর স্বামীকে থানায় ডেকে পুলিশ মারধর করে বলে অভিযোগ।
সুন্দরী এবং তাঁর স্বামী— উভয়েই বেঙ্গালুরুতে থাকেন। সুন্দরী গৃহপরিচারিকা হিসাবে কাজ করতেন ওই ইঞ্জিনিয়ার দম্পতির বাড়িতে। তাঁর স্বামী আবর্জনা ফেলার একটি গাড়ি চালান বেঙ্গালুরু শহরে। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’র এক প্রতিবেদন অনুসারে, ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার। বেঙ্গালুরুর বর্তুল থানা থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল সুন্দরী এবং তাঁর স্বামীকে। অভিযোগ, তাঁরা থানায় যেতেই দম্পতিকে আটক করে পুলিশ। এর পরে লাঠি দিয়ে দু’জনকেই বেধড়ক মারধর করা হয়।
সুন্দরীর অভিযোগ, ওই সময় থানায় সাত জন পুলিশকর্মী ছিলেন। চার জন পুরুষ এবং তিন জন মহিলা পুলিশকর্মী। তাঁরা প্রত্যেকেই সুন্দরী এবং তাঁর স্বামীকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ। ‘দ্য হিন্দু’কে সুন্দরী বলেন, “আমি বার বার বলছিলাম, আমি কিছু করিনি। আমি নির্দোষ। কিন্তু ওরা আমাকে লাঠিপেটা করতে থাকে। আমাকে ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেয়। তাঁরা আমাকে কুকথাও বলছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ কথা কন্নড় ভাষায় হওয়ায় আমরা তা বুঝতে পারিনি।”
সূত্রের খবর, সুন্দরী যে বাড়িতে কাজ করতেন, ওই বাড়ির ইঞ্জিনিয়ার দম্পতিই তাঁর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনেছিলেন। ওই দম্পতির অভিযোগ, তাঁদের বাড়ি থেকে একটি হিরের আংটি চুরি হয়ে গিয়েছে। তাঁদের সন্দেহ গিয়েছিল সুন্দরীর উপরেই। ওই ইঞ্জিনিয়ার দম্পতির দাবি, তাই তাঁরা সুন্দরীকে যাচাই করতে ঘরের মেঝেতে একটি ১০০ টাকার নোট ফেলে রেখেছিলেন। সুন্দরী সেই নোটটি তুলে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন বলে দাবি বাড়ির মালিকদের। যদিও সুন্দরীর দাবি, তিনি ফেরত দেওয়ার জন্যই ওই নোটটি তুলেছিলেন। সূত্রের খবর, ওই ঘটনার ভিত্তিতেই সুন্দরীর বিরুদ্ধে বর্তুল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ইঞ্জিনিয়ার দম্পতি।
ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার যখন সুন্দরী এবং তাঁর স্বামীকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল, তখন থানার বাইরে আরও কয়েক জন পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন। থানার ভিতর থেকে দম্পতির চিৎকার শুনে তাঁরাই দ্রুত যোগাযোগ করেন এলাকার এক সমাজকর্মীর সঙ্গে। তাঁর তৎপরতাতেই শেষ পর্যন্ত সুন্দরী থানা থেকে ছাড়া পান বলে জানা যাচ্ছে। পরে ওই মহিলার ‘মেডিকো-লিগ্যাল টেস্ট’ করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বেঙ্গালুরুর এই ঘটনা প্রসঙ্গে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের গোচরে আসে। আমরা তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওখানে তাঁদের সবরকম আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। যাঁরা হেনস্থার শিকার হয়েছেন, তাঁরা যদি বাংলায় ফিরে এসে কাজ চান, আমরা সেই ব্যবস্থাও করে দেব। আমাদের তরফে সবসময় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’’