এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় মৃত পাইলট সুমিত সবরওয়াল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
অহমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে কোনও পাইলটকেই দোষারোপ করা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টে স্পষ্ট করল কেন্দ্রীয় সরকার। এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট সুমিত সবরওয়ালের বাবা পুষ্করাজ সবরওয়ালের করা মামলায় কেন্দ্র বৃহস্পতিবার এই জবাব দিয়েছে। সুমিত দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের প্রধান পাইলট ছিলেন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করছে তদন্তকারী সংস্থা এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন বোর্ড (এএআইবি)। কয়েক মাস আগে তারা তদন্তের একটি প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছিল। সেই রিপোর্টের ভাষা নিয়ে আপত্তি তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সুমিতের বাবা। সেই মামলাতেই এ বার কেন্দ্র অবস্থান স্পষ্ট করল।
তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে এএআইবি বলেছিল, রানওয়ে ছাড়ার পরে জ্বালানির সুইচ আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই বিমানটি ভেঙে পড়ে। এই সময়ে ককপিটের ভিতরে দুই পাইলটের মধ্যে কয়েক সেকেন্ডের কথোপকথন প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে এক জনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কেন তুমি জ্বালানির সুইচ বন্ধ করে দিলে?’’ অন্য জন উত্তরে বলেন, ‘‘আমি কিছু বন্ধ করিনি।’’ কোনটি কোন পাইলটের বক্তব্য, তা-ও স্পষ্ট করা হয়নি ওই রিপোর্টে। তবে অনেকে ধরে নেন, সুমিত জ্বালানির সুইচ বন্ধ করেছেন বলে অভিযোগ করছেন অপর পাইলট ক্লাইভ কুন্দর। বিদেশি সংবাদমাধ্যমেও এই মর্মে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। এতে ভেঙে পড়েন সুমিতের নবতিপর বাবা পুষ্করাজ।
কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার দায় কারও উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। প্রাথমিক রিপোর্টে কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে মাত্র। কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকও এর আগে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, কোনও ব্যক্তিবিশেষকে দোষী বলে মনে করা হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে এএআইবি-র অনুসন্ধানে অন্য কারও হস্তক্ষেপ তদন্তের ক্ষতি করতে পারে, জানিয়েছেন কেন্দ্রের আইনজীবী।
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ তদন্তের আবেদন জানিয়েছিলেন সুমিতের বাবা। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হচ্ছে। গত শুনানিতে বৃদ্ধকে সান্ত্বনা দিয়েছিল আদালত। বিচারপতি কান্ত বলেছিলেন, ‘‘দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু আপনার ছেলে দোষী, এমনটা মনে করছেন কেন? এটা মনে করা উচিত নয়। ভারতের কেউ বিশ্বাস করেন না যে, দুর্ঘটনায় পাইলটদের গাফিলতি ছিল।”
কেন্দ্রের আইনজীবীর বক্তব্য, এই ধরনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া মেনে আন্তর্জাতিক অসামরিক বিমান পরিবহণ সংস্থা (আইসিএও)-র সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ভাবে কাজ করে এএআইবি। গত কয়েক মাসে তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। এখন অন্য হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। আদালত কেন্দ্রকে এই সংক্রান্ত বক্তব্য লিখিত আকারে হলফনামা দিয়ে জানাতে বলেছে।