অঙ্ক মিলিয়ে ফেলার পরেও মামলার কাঁটা বিজেপির গোয়া দখলের পথে।
সরকার গড়তে দরকার ২১ জন বিধায়কের সমর্থন। নিজেদের ১৭ জনের সঙ্গে বাড়তি ৯ জন বিধায়কের সমর্থন জোগাড় করে গত কালই রাজ্যপালের কাছ থেকে গোয়ায় সরকার গড়ার চিঠি পেয়ে গিয়েছেন মনোহর পর্রীকর। এর পরে আজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফাও দিয়েছেন তিনি। ওই মন্ত্রকের বাড়তি দায়িত্ব গিয়েছে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির হাতে। দলীয় সূত্রে এ কথাও জানানো হয়ে গিয়েছে যে, আগামিকাল বিকেল পাঁচটা নাগাদ গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন পর্রীকর। তার আগেই গোয়ায় পৌঁছে যাবেন দলের সভাপতি অমিত শাহ। তবে সংখ্যায় পিছিয়ে থেকেও দর কষাকষির অঙ্কে কংগ্রেসকে হারিয়ে দিয়ে এখনই শেষ হাসি হাসতে পারছে না বিজেপি। কারণ, বিজেপিকে সরকার গড়তে ডাকার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কংগ্রেস।
বিষয়টি নিয়ে দ্রুত শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের কাছে আজ আবেদন জানান গোয়ার কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা চন্দ্রকান্ত কাভলেকর। হোলির ফলে আগামিকালও বন্ধ সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তা-ও শপথের আগে এ দিনই বিষয়টি নিয়ে জরুরি শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। কাভলেকরের আইনজীবী দেবদত্ত কামাথ আর্জিতে জানিয়েছেন, রাজ্যে একক বৃহত্তম দলকে সরকার গড়তে ডাকাই সংসদীয় রীতি। রাজ্যপাল মৃদুলা সিন্হা সেই রীতি ভেঙেছেন। কংগ্রেসের পি চিদম্বরমের দাবি, গোয়া ও মণিপুর দুই রাজ্যেই রাজ্যপাল অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, রাজ্যপাল ঠিক কাজই করেছেন, পর্রীকরের পাশে বিজেপির ১৩, মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির ৩, গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টির ৩ এবং ৩ জন নির্দল বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। জাদুসংখ্যার চেয়ে যা ১ বেশি। কংগ্রেস ১৭ আসনে জিতে একক বৃহত্তম দল হলেও রাজ্যপাল কোন পক্ষ গরিষ্ঠ সেই দিকটিই বিবেচনা করেছেন।
আরও পড়ুন: নগ্ন ধর্ষিতার আকুতি, মুখ ফেরাল রাজধানী, আঁতকে উঠছেন অনেকেই
সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ পর্রীকর সৎ ও নরেন্দ্র মোদীর অনুগত। ফলে প্রশ্ন উঠছে, মোদী, অমিত শাহরা কেন তাঁকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ফেরত পাঠালেন? তিনটি যুক্তি উঠে আসছে রাজনীতির লোকজনের আলোচনায়।
এক, গো বলয়ে বিপুল জনসমর্থন আদায় করার পরে বিজেপি গোটা দেশে নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া। এই বার্তাকে সামনে আনতেই মোদী-অমিতরা গোয়া, মণিপুরের মতো ছোট রাজ্যকেও কম গুরুত্ব দিচ্ছেন না। গোয়ায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাঠানোর আগেই পর্রীকরকে এ কথা জানিয়েছিলেন মোদী।
দুই, বিজেপির সংসদীয় বোর্ড ও গোয়া পরিষদীয় দল মনে করেছে, একক গরিষ্ঠতা না থাকলেও গোয়ায় স্থায়ী সরকার দিতে পারবেন পর্রীকর। বাড়তি যে ৯ জনের সমর্থন নিয়ে বিজেপি সরকার গড়তে চলেছে, গত কালই তাঁরা নিতিন গডকড়ীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন পর্রীকরকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে, তবেই তাঁরা বিজেপিকে সমর্থন করবেন।
তিন, বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের মতভেদ হচ্ছিল। পর্রীকরকে গোয়ায় পাঠিয়ে কার্যত এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছেন মোদী।