ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচল। ছবি: পিটিআই।
হিমাচল প্রদেশে হড়পা বান ও ধসে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ল। এর আগে রবিবারই প্রশাসন জানিয়েছিল, গত ২০ জুন থেকে এখও পর্যন্ত সে রাজ্যে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার আরও চার জনের দেহ মেলায় সেই সংখ্যা ৭৮-এ গিয়ে দাঁড়াল। সারা রাজ্যে অন্তত ৩৭ জন এখনও নিখোঁজ। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মন্ডীতে। সেখানে ৩০ জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের খোঁজে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। পাশাপাশি, হিমাচলের বেশ কিছু জেলায় চলতি সপ্তাহেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
মন্ডী জেলার ধস ও বন্যাকবলিত এলাকায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে থুনাগের হিমাচল সমবায় ব্যাঙ্ক। প্রায় ৮০০০ শহরবাসীর জীবনের সমস্ত সঞ্চয় হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে। ব্যাঙ্কটির একতলার লকার ভেসে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ স্পষ্ট জানা না গেলেও মনে করা হচ্ছে, আনুমানিক কয়েক কোটি টাকা এবং লক্ষ লক্ষ টাকার গহনা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সোমবার পর্যন্ত হিমাচলে মোট ২৩টি হড়পা বান, ১৯ বার মেঘ ভাঙা বৃষ্টি এবং ১৬টি ভূমিধসের খবর পাওয়া গিয়েছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃতের সংখ্যাও। সরকারি হিসাবে গত ২০ জুন বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর (এসডিএমএ) জানিয়েছে, এর মধ্যে ৫০ জন মারা গিয়েছেন বৃষ্টিজনিত কারণে, আর ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। হড়পা বানে ভেসে গিয়েছেন ১৪ জন। জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে আট জনের। ভূমিধস, বজ্রপাত, সাপের কামড় এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েও অনেকের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যাও শতাধিক।
হিমাচল প্রদেশের ১০ জেলায় আরও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য আবহাওয়া দফতর। বুধবার পর্যন্ত রাজ্যের তিন জেলা কাংড়া, সিরমৌর এবং মন্ডীতে অতি ভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শিমলা, সোলান, বিলাসপুর, হামিরপুর, উনা, চম্বা এবং কুল্লুতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। টানা দুর্যোগে রাজ্যের ২৬৯টি রাস্তা বন্ধ, যার মধ্যে দু’টি জাতীয় সড়কও রয়েছে। ২৭৮টি জলপ্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছে। কোথাও আবার ট্রান্সফর্মার, পাম্প এবং জলের পাইপ ভেঙে গিয়েছে। ফলে রাজ্য জুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র জলসঙ্কট। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে ১৯ বার মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। হড়পা বান এবং ধসে বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটির সম্পত্তি।
হিমাচলের পাশাপাশি ভূমিধসের সতর্কতা জারি হয়েছে পার্শ্ববর্তী উত্তরাখণ্ডেও। তেহরি, উত্তরকাশী, রুদ্রপ্রয়াগ এবং চামোলি জেলায় সোম ও মঙ্গলবার ভূমিধস হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। সম্ভাব্য বিপর্যয়ের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত রয়েছে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। সতর্ক রয়েছে প্রশাসনও।