US Tariff on India

ট্রাম্পের শুল্কবাণে ক্ষতির আশঙ্কায় মাথায় হাত মোরাদাবাদের পিতল ব্যবসায়ীদের, বিপাকে রবার্ট বঢরার পরিবার?

গত মাসের শেষেই ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। আগামী ২৭ তারিখ থেকে ভারতীয় পণ্যে সেই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ হওয়ার কথা। আর এতেই মাথায় হাত পড়েছে মোরাদাবাদের পিতলের কারবারিদের।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৫ ১৩:১৬
Share:

রবার্ট বঢরা। — ফাইল চিত্র।

উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ ভারতের ‘পিতলনগরী’! সেখানকার এক পিতল ব্যবসায়ীর ঘরে জন্ম হয়েছিল গান্ধী পরিবারের জামাই রবার্ট বঢরার। ১৯৯৭ সালে প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে বিবাহের আগে পিতলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন রবার্ট নিজেও। সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কবাণে রবার্টদের সেই পারিবারিক ব্যবসাই এখন প্রশ্নের মুখে। মোরাদাবাদের পিতল ব্যবসায়ীদের কপালেও এখন চিন্তার ভাঁজ।

Advertisement

গত মাসের শেষেই ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। আগামী ২৭ তারিখ থেকে ভারতীয় পণ্যে সেই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ হওয়ার কথা। আর এতেই মাথায় হাত পড়েছে মোরাদাবাদের পিতলের কারবারিদের। তৃতীয় প্রজন্মের এক পিতল ব্যবসায়ী তথা রফতানিকারক শচীন চড্ডা সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ-কে জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে বাড়তি শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তার আগেই ক্ষতির মুখ দেখতে শুরু করেছে মোরাদাবাদের অন্যতম প্রধান জীবিকা নির্বাহের পথ— পিতলের জিনিসপত্র তৈরির ব্যবসা। রফতানিও অনিশ্চয়তার মুখে। কারণ, বর্ধিত শুল্কের কারণে বড়দিনের মরসুমের আগে সমস্ত বরাত বাতিল করে দিয়েছেন মার্কিন গ্রাহকেরা। ফলে গোটা পিতল শিল্পই এখন অনিশ্চয়তার কবলে।

মোরাদাবাদের পিতলনগরী বাজারে নিজের দোকান রয়েছে শচীনের। মাসখানেক আগেও সেখানে দিনভর শোনা যেত হাতুড়ির ওঠাপড়ার ছন্দোবদ্ধ শব্দ। তবে গত কয়েক দিনে ছবিটা বদলে গিয়েছে। এখন পিতলের সোনালি ঝাড়বাতি, কলসি, ট্রে, বাটি, ফুলদানি, বাসনপত্র-বোঝাই দোকানে একা বসে থাকেন শচীন। শচীনের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের একতরফা বন্ধুত্বই আমাদের এমন বিপদে ফেলল। ট্রাম্প আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন!’’

Advertisement

মোরাদাবাদের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের উপার্জনের এক বড় অংশ আসে মার্কিন মুলুকে পিতলের জিনিসপত্র রফতানি থেকে। কিন্তু ট্রাম্পের ঘোষণার পরেই একের পর এক বরাত বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু আমেরিকান সংস্থা আবার বরাত বাতিল না করলেও স্বাভাবিক অবস্থা না ফেরা পর্যন্ত লেনদেন স্থগিত রেখেছে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর আশঙ্কা, ওই চুক্তিগুলি ভারতের বদলে চিনে স্থানান্তরিত হতে পারে। এক ধাক্কায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে মোরাদাবাদের মোট পিতল রফতানি। ফলে অচিরেই চাকরি হারাতে পারেন ভারতের কয়েকশো কারিগর। তা ছাড়া, শিপিং বাবদ খরচ বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই মুনাফা কমছে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর মতে, সেই কফিনে শেষ পেরেক হতে পারে ট্রাম্পের শুল্কবাণ।

দিল্লি থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মোরাদাবাদ শহর। মোগল সম্রাট শাহজাহানের কনিষ্ঠ পুত্র যুবরাজ মুরাদ বখশের নামে নামকরণ করা হয়েছিল এই শহরের। শহরের এক ব্যবসায়ী অভিনন্দন জৈনের কথায়, পিতল শিল্পের অন্যতম কেন্দ্র হিসাবে মোরাদাবাদের উত্থান শুরু হয় মোগল আমলেই। দেশবিদেশের ব্যবসায়ীদের হাত ধরে ক্রমে সেই শিল্পে পারস্য ও মিশরের প্রভাব স্পষ্ট হয়। পিতলের জিনিসের উপর শুরু হয় নিখুঁত খোদাইয়ের কাজ। শাহজাহানের সময় থেকেই মোরাদাবাদ থেকে পিতলের জিনিসপত্র তুরস্ক, ইরান এবং পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য স্থানে রফতানি করা হত। ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশদের সূত্রে এই শিল্প আরও প্রসার লাভ করে। আজও সেই ট্র্যাডিশন চলেছে! বর্তমানে জেলার পিতল শিল্প থেকে বার্ষিক আয় প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১০,০০০ কোটি টাকা রফতানি থেকে আসে। প্রায় পাঁচ লক্ষ কারিগরের জীবন ও জীবিকা জুড়ে রয়েছে এই শিল্পের সঙ্গে। ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়বেন তাঁরাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement