— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
আগামী ২২ অগস্ট, শুক্রবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
বিচারপতি কান্তের পর্যবেক্ষণ, নাগরিকদের নিজস্ব সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। যে কোনও সমস্যার জন্য সব সময় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের পিছনে দৌড়তে হবে কেন? বিচারপতি কান্ত আরও বলেন, ‘‘যদি ২২ লক্ষ মানুষ মারা গিয়ে থাকেন, তা হলে বুথ পর্যায়ে কেন তা প্রকাশ করা হচ্ছে না? যদি এই পরিসংখ্যান জনসমক্ষে আসে, তা হলে এ নিয়ে আর বিতর্ক থাকবে না।’’ বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তালিকা থেকে নাম মুছে ফেলার অনুমোদন নেই। কেন নাম বাদ গিয়েছে তা জানার মৌলিক অধিকার নাগরিকদের রয়েছে। এ জন্য সর্বাধিক প্রচার প্রয়োজন। গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা চাই। নামের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হোক। যদি বিএলও দফতরের সামনে নামের তালিকা ঝোলানো যায়, তা হলে ওয়েবসাইটে নয় কেন?’’
বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘আধার কার্ড স্থায়ী বসবাসের প্রমাণপত্র হিসাবে এবং পরিচয়পত্র হিসাবে আইনত স্বীকৃত একটি নথি। সে ক্ষেত্রে আধার কার্ড গ্রহণ করা হবে না কেন?’’ শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কোনও রকম সমস্যা হলে পরিচয় এবং বাসস্থানের প্রমাণ হিসাবে আধার কার্ড নিয়ে নির্বাচনী আধিকারিকদের দ্বারস্থ হতে পারবেন নাগরিকেরা।
যে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে, তা মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়ে এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। ২০২৫ সালের তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, অথচ খসড়া তালিকায় নেই, তাঁদের সকলের নাম যেন জেলাস্তরের ওয়েবসাইটে থাকে। সঙ্গে কী কারণে তাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, তারও উল্লেখ থাকতে হবে। প্রত্যেক জেলাস্তরের নির্বাচনী আধিকারিকের ওয়েবসাইটে এই তালিকা থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংবাদপত্র এবং চ্যানেলগুলিকে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের যদি সমাজমাধ্যমে নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থাকে, তা হলে সেখানেও বিজ্ঞপ্তিটি পোস্ট করতে হবে তাঁকে।
বিচারপতি কান্ত বলেন, ‘‘আপাতত ধরে নেওয়া যাক, নির্বাচন কমিশনের বিশেষ ও নিবিড় সমীক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে। এ বার প্রক্রিয়াগত অংশে আসি। এখন ৬৫ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। আপনি বলছেন, ২২ লক্ষ জন মারা গিয়েছেন। আবার অন্য পক্ষ বলছে কে মৃত আর কে জীবিত তা নিয়েই বিরোধ রয়েছে।’’
বিচারপতি বাগচী: ২০২৫ সালের তালিকায় কতজন রয়েছেন?
আইনজীবী: ৭.৮৯ কোটি।
বিচারপতি বাগচী: খসড়া তালিকায় কতজন বাদ পড়েছেন?
আইনজীবী: ৭.২৪ কোটি জনের নাম রয়েছে। ৬৫ লক্ষ জনের নাম নেই। এর মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত। এ ছাড়াও রয়েছেন ৬.২৪ কোটি মানুষ, যাঁদের কোনও নথিপত্র দেখানোর প্রয়োজন নেই।
আইনজীবী দ্বিবেদী বলেন, ‘‘মৃত ভোটার, ভুয়ো আবেদনের মতো উদাহরণগুলি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কিন্তু বিহারকে একটি অত্যন্ত দরিদ্র রাজ্য হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে। বলা হচ্ছে, এখানে কোনও কিছুই ডিজিটাল নয়। কোনও ডিজিটাল নথি বা শংসাপত্র নেই। দেখানো হচ্ছে, বিহার যেন একটি উন্নয়নশীল দেশের ভিতর একটি অন্ধকার স্থান! অথচ দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিহারের। বিহার জ্ঞানার্জনের ভূমি। গণতন্ত্রেরও জন্ম বিহারেই।’’
কমিশনের আইনজীবী আরও বলেন, ‘‘আমরা ধরে নিচ্ছি না যে আমরা সর্বশক্তিমান এবং আমরা চাইলেই সবকিছু করতে পারি। তবে সংবিধানের ৩২৪, ১৫ এবং ২১ (১) ও (২) ধারার অধীনে নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।’’
নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব খতিয়ে দেখার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই। যেহেতু সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে, তাই আমরা তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারি না।’’
বিরতির পর দুপুর ২টো নাগাদ ফের শুরু হয়েছে শুনানি।
আইনজীবী রশ্মি সিংহ বলেন, কোনও রকম পরিকাঠামো ছাড়াই বিএলও-দের অবাস্তব কাজের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। তাঁদের প্রতিদিন ১০০টি ফর্ম সংগ্রহ করতে হচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন ৪০টি ফর্ম সংগ্রহ করাও কঠিন।
আপাতত মধ্যাহ্নভোজের বিরতি শুরু হল সুপ্রিম কোর্টে। বিরতির পর নির্বাচন কমিশনের তরফে সওয়াল করবেন আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী।
আইনজীবী ফৌজিয়া শাকিল বলেন, তাড়াহুড়ো করে প্রক্রিয়াটি নির্বাচনের আগেভাগে সেরে না ফেলা হোক। তা ছাড়া, গ্রাহ্য নথির তালিকায় আধারকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। পাশাপাশি, প্রক্রিয়া সংক্রান্ত যে কোনও অসুবিধা নথিভুক্ত করার সময়সীমাও বাড়ানো হোক।
আইনজীবী ফৌজিয়া শাকিল সওয়াল করেন, কমিশনের নির্দেশ স্বেচ্ছাচারিতার নিদর্শন। প্রথমত, গোটা প্রক্রিয়া তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে বলা হয়েছে। বিহারের মতো রাজ্যে তা কার্সযত অসম্ভব। ডিজিটাল সাক্ষরতায় এত পিছিয়ে রয়েছে এমন একটি রাজ্যে এক কোটি লোকের জন্য নথি আপলোড করাও কষ্টসাধ্য। সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। অথচ ওই সময়ই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হবে।
মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী শোয়েব আলম বলেন, এই প্রক্রিয়া নাম নথিভু্ক্তকরণের হওয়া উচিত। তার পরিবর্তে কেন নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে? দেশের বহু মানুষ শিক্ষা বা অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের কাছে ভোটদানের সাংবিধানিক অধিকারই নিজের ভবিষ্য়ৎ বদলানোর একমাত্র রাস্তা।
এর পরেই বিচারপতি বাগচী বলেন, ২০০৩ সালে কোন কোন নথি জমা নেওয়া হয়েছিল, নির্বাচন কমিশন তা জানাক। কী পদ্ধতিতে ভোটার তালিকা তৈরি হয়েছিল, তা-ও জানানো হোক।
সওয়াল করা শুরু করলেন মামলাকারীদের আইনজীবী নিজামুদ্দিন পাশা। তিনি বলেন, ভোটার তালিকার বিশেষ সমীক্ষা এবং বার্ষিক সমীক্ষা— দু’টি প্রায়ই একই বিষয়। দু’টিই কমিশন করে। তা সত্ত্বেও কমিশন কেন ভোটার কার্ড গ্রহণ করছে না? তা ছাড়া, নথি দেওয়ার পরে কোনও রশিদও দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, এ ক্ষেত্রে বুথস্তরীয় আধিকারিক (বিএলও)-দের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে নিচুস্তরের আধিকারিকদের হাতেও ক্ষমতা দিয়েছে কমিশন।
বৃহস্পতিবার সকাল সওয়া ১২টা নাগাদ বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ এবং নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি শুরু হল।
বুধবার গোটা শুনানি জুড়েই এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন এবং সমস্যার কথা তোলেন মামলাকারীর আইনজীবীরা। বিহারে কেন এসআইআর প্রক্রিয়া বাতিল করতে চাইছেন, তার ব্যাখ্যাও দেন তাঁরা। মামলাকারীর পক্ষের প্রায় সব আইনজীবীই প্রশ্ন তোলেন, কেন ভোটের দোরগোড়ায় এসে বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ এবং নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রয়োজন হয়ে পড়ল? ভোটের পর সারা বছর জুড়ে কি তা করা যেত না? তবে শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে প্রশাসনকে। তবে কিছু একটা উপায় খুঁজে বার করতেই হবে। নানা সমস্যা রয়েছে, তবে তার মানে এই নয় যে এই সব সমস্যার কোনও সমাধান নেই। বৃহস্পতিবার ফের শুনানি রয়েছে।
সম্প্রতি কমিশন জানিয়েছিল, আধার কার্ডকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে ধরা হবে না। মঙ্গলবারের শুনানিতে কমিশনের সেই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছিল শীর্ষ আদালত। বিচারপতি সূর্য কান্তের পর্যবেক্ষণ, কমিশন ঠিকই বলছে। আধারের মতো নথির ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব আলাদা করে যাচাই করতে হবে। কারণ, আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। বুধবারের শুনানিতেও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, কমিশন যে সব নথি চাইছে তা ভোটার-বান্ধব। যদি বলা হত উল্লেখিত ১১টি নথির সবক’টিই চাই, তা হলে সেটা ভোটার বিরোধী বলা যেত। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে ১১টির মধ্যে যে কোনও একটি দিতে হবে। তাতে আপত্তি থাকার কথা নয়।