Narendra Modi

১৬ মিনিট ৮ সেকেন্ড! চিন নিয়ে নীরব মোদী

লকডাউন জারির পরেই ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’-য় এই ঘোষণা হয়েছিল। তার মেয়াদ ৩০ জুন, মঙ্গলবারই শেষ হচ্ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ০৪:১৩
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।—ছবি এপি।

দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক বারও চিনের নাম উচ্চারণ করলেন না। রবিবারের ‘মন কি বাত’-এর মতোই মৌন রইলেন।

Advertisement

অলিখিত প্রথা ভেঙে এ বার রাত ৮টার বদলে বিকেল ৪টেয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হতে চলেছে বলে অমিত শাহ থেকে বিজেপির মন্ত্রী-সান্ত্রীরা সকাল থেকেই প্রত্যাশা বাড়িয়েছিলেন। মনে করা হচ্ছিল, চিনের অ্যাপ নিষিদ্ধ করার পরে এ বার মোদী চিনের বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপের ঘোষণা করবেন।

প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ‘আমি বড় ঘোষণা করতে চলেছি’ বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, জুলাই থেকে নভেম্বর, আরও পাঁচ মাস, একেবারে ছটপুজো পর্যন্ত বিনামূল্যে মাসে মাথা-পিছু পাঁচ কেজি করে চাল বা গম দেওয়া হবে। পরিবার-পিছু এক কেজি করে চানা বা ছোলার ডালও দেওয়া হবে। লকডাউন জারির পরেই ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’-য় এই ঘোষণা হয়েছিল। তার মেয়াদ ৩০ জুন, মঙ্গলবারই শেষ হচ্ছিল। সেই মেয়াদ বাড়ল।

Advertisement

বিরোধীদের প্রশ্ন, এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তৃতার কী দরকার? এ তো বুধবার মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্তের পরেই অন্য যে কোনও মন্ত্রী জানিয়ে দিতে পারতেন!

আরও পড়ুন: বিশ্বে ৪১ শতাংশ হ্যাকিং চিন থেকে! চিনা অ্যাপ মানেই কেন সন্দেহজনক

প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যের রেশন বিলিতে ছটপুজোর সময়সীমা রাখায় প্রশ্ন উঠেছে, বছরের শেষে বিহারের ভোটের দিকে তাকিয়েই কি এই সিদ্ধান্ত? এর সঙ্গে বিহারের ভোটের যোগ নেই দাবি করে আজ রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি নেতা সুশীল মোদীর যুক্তি, ‘‘শুধু খাদ্যশস্যের জন্য কি মানুষ ভোট দেয়?’’

প্রধানমন্ত্রী নিজে যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘বর্ষার সময়ে ও তার পরে কৃষিকাজ হলেও অন্য ক্ষেত্রে তেমন কাজকর্ম হয় না। জুলাই থেকে উৎসবের মরসুমও শুরু হয়ে যায়। গুরুপূর্ণিমা থেকে শ্রাবণ মাস, ১৫ অগস্ট, রাখী, জন্মাষ্টমী, গণেশ চতুর্থী, ওনাম, কাটি বিহু, নবরাত্রি, দুর্গাপুজো, দীপাবলি, ছট। এই সময়ে খরচাও বেড়ে যায়। সব দিক মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত।’’ বিরোধীদের পাল্টা প্রশ্ন, তা হলে কি সরকার মেনে নিচ্ছে, নভেম্বর পর্যন্ত গরিব মানুষের রুটি-রুজির সঙ্কট চলবে? সে ক্ষেত্রে গত তিন মাস গরিব মহিলাদের অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা করে দেওয়ার যে প্রকল্প চলছিল, তার মেয়াদ বাড়ানো হল না কেন?

আরও পড়ুন: কেন্দ্রের নভেম্বর তো রাজ্যের রেশন জুন পর্যন্ত, সরগরম চালের রাজনীতি

কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী মোদীর বক্তৃতার আগেই দাবি তুলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী গরিব মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার কথা বলুন। একই সঙ্গে চিন ভারতের জমি দখল করেছে কি না, তারও জবাব দিন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চিনের নাম উচ্চারণও না-করায় রাহুল কটাক্ষ করে শাহাব জাফরির বিখ্যাত কবিতা উদ্ধৃত করে বলেন, ‘তু ইধর উধর কি না বাত কর, ইয়ে বতা কি কাফিলা ক্যায়সে লুটা, মুঝে রাহাজনো সে গিলা তো হ্যায়, পর তেরি রহবরী কা সওয়াল হ্যায়’। অর্থাৎ চিন অনুপ্রবেশ করলেও তাঁর প্রশ্ন যে মোদীর ‘রহবরী’ বা নেতৃত্ব নিয়ে, সে কথা বুঝিয়েছেন রাহুল।

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৮০ কোটি গরিব মানুষকে আরও পাঁচ মাস বিনামূল্যে রেশন দিতে ৯০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। গত তিন মাসের খরচ যোগ করলে, মোট খরচ দেড় লক্ষ কোটি টাকা। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়েছেন চাষি ও করদাতাদের। কারণ চাষিরা শস্য ফলিয়েছেন। করদাতারা সৎ ভাবে কর জমা করেছেন। কিন্তু সত্যিই কি ৮০ কোটি মানুষ চাল-গম পাচ্ছেন? একটি পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল ও মে মাসে প্রায় ৭৪ কোটি মানুষ বিনামূল্যের রেশন নিয়েছিলেন। কিন্তু জুনে সেই সংখ্যাটা ৬০ কোটিরও কম।

সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘খাদ্য সুরক্ষা আইনে ভর্তুকিতে ৫ কেজি চাল-গম দিতে প্রতি মাসে ৪৩ লক্ষ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ হয়। যদি অতিরিক্ত ৫ কেজি বিনামূল্যে দেওয়া হয়, তা হলে বরাদ্দ দ্বিগুণ হওয়ার কথা। কিন্তু এপ্রিলে মাত্র ২৬, মে মাসে ২৯ লক্ষ টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য বরাদ্দ হয়েছে। এটা মোদীর আরেক জুমলা।’’ এমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসির প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর চিন নিয়ে বলার কথা ছিল। চানা নিয়ে বললেন। অপরিকল্পিত লকডাউনের জন্য নিরন্ন মানুষকে রেশন দিতেই হত। কিন্তু খেয়াল করলাম, অনেক উৎসবের কথা বললেও বকর-ইদ বাদ দিয়ে দিলেন!’’

কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর চিন নিয়ে নীরবতা দেখে গোটা দেশ হতাশ। এমনকি করোনা-সঙ্কট বা আর্থিক সঙ্কটের বাস্তব পরিস্থিতি নিয়েও তিনি মুখ খোলেননি। অন্যান্য দেশের থেকে ভারতে মৃত্যুহার কম বলে দাবি করেছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, করোনা প্রতিরোধের নিয়ম মানার ক্ষেত্রে গা-ছাড়া মনোভাব চিন্তার কারণ।

সম্প্রতি মাস্ক না-পরে গির্জায় যাওয়ার জন্য বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৭৪ ডলার (প্রায় ১৩ হাজার টাকা) জরিমানা দিতে হয়েছে। তা মনে করিয়ে দিয়ে মোদী বলেছেন, ‘‘যাঁরা নিয়ম ভাঙছেন, তাঁদের আটকাতে হবে, সাবধান করতে হবে। নিয়ম সকলের জন্যই সমান, গ্রামপ্রধান হোন বা প্রধানমন্ত্রী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন