নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র বিনামূল্যে রেশন দেবে বলে যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী করেছেন, তা জানার পরে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের দেওয়া রেশনের মেয়াদও বাড়ানোর কথা ঘোষণা করে দেন।
লকডাউনের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে, শুরু হচ্ছে আনলক-২। কিন্তু চালের রাজনীতির মেয়াদ আরও বাড়ল। শুধু বাড়ল না, এক দিনে দু’দফায় বেড়ে গেল বিনামূল্যে রেশন পাওয়ার মেয়াদ। অন্তত পশ্চিমবঙ্গের জন্য। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী জানালেন, সেপ্টেম্বর নয়, নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনের ফাঁকে সে কথা জানার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বললেন, আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন দিতে থাকবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। শুধু তাই নয়, কেন্দ্র যে চাল দিচ্ছে বা দেবে, তার চেয়ে রাজ্য সরকারের দেওয়া চালের মান উন্নত বলেও এ দিন দাবি করলেন তিনি।
লকডাউন শুরুর আগে, লকডাউনের মাঝে এবং আনলক পর্বে— বার বারই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ দিনের ভাষণও ছিল সেই সংক্রান্তই। তার মধ্যে বড় ঘোষণা বলতে ছিল বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার মেয়াদ বৃদ্ধির কথা জানানো। ইতিমধ্যেই ৩ মাস বিনামূল্যে রেশন দিয়েছে ভারত সরকার। তাতে প্রতি মাসে মাথা পিছু ৫ কেজি করে চাল বা গম এবং পরিবার পিছু ১ কেজি করে ডাল দেওয়া হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী এ দিন জানান, নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত এই রেশন দেওয়া চলবে। এখন থেকে প্রত্যেক পরিবারকে মাসে ১ কেজি করে ছোলাও দেওয়া হবে।
পরে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রসঙ্গ ওঠে। সে কথা শুনে মমতা প্রথমেই বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন, তা নিজে না শোনার আগে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। কিন্তু নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র বিনামূল্যে রেশন দেবে বলে যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী করেছেন, তা জানার পরে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের দেওয়া রেশনের মেয়াদও বাড়ানোর কথা ঘোষণা করে দেন। ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত রাজ্য সরকার বিনামূল্যে রেশন দেবে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে বসেই ঘোষণা করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ‘আর দু’দিন দেখব!’, বেসরকারি বাস তুলে নিয়ে চালানোর হুঁশিয়ারি মমতার
কেন্দ্রের মতো রাজ্য সরকারও ইতিমধ্যেই তিন মাস বিনামূল্যে রেশন দিয়েছে। আরও তিন মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে এই রেশন দেওয়া হবে, সে কথাও আগে জানানো হয়েছিল, এ দিন মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে জানান, এখন থেকে শুধু চাল নয়, আটাও মিলবে রাজ্যের দেওয়া রেশনে। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রের রেশন নীতিতে বৈষম্য রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘যে রেশনটা ওঁরা দিচ্ছেন, সেটা ৬০ শতাংশ লোক পাচ্ছেন, ৪০ শতাংশ লোক পাচ্ছেন না।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা ১০ কোটি লোককে এখন রেশন দিচ্ছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার অর্ধেক লোককে দেয়, অর্ধেক লোককে দেয় না। আমার বাংলায় ১০ কোটি লোক থাকলে কেন্দ্রের দেওয়া রেশন ৬ কোটির মতো লোক পায়, ৪ কোটি লোক পায় না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘এই বৈষম্য কেন হবে?’’ নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত যদি রেশন দিতেই হয়, তা হলে দেশের ১৩০ কোটি মানুষকেই সেই রেশন দেওয়া হোক, দাবি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর।
আরও পড়ুন: প্রধান থেকে প্রধানমন্ত্রী— কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, করোনা বিধি নিয়ে কড়া বার্তা মোদীর
কেন্দ্র যে চাল দিচ্ছে, তার চেয়ে রাজ্যের দেওয়া চালের মান উন্নত বলেও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের চালটা ভাল চাল, আমরা চাষিদের থেকে নিই। ওঁদের চালটা এফসিআই থেকে নেয়, ওঁদের চালের মানটা খারাপ।’’ তবে রাজ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ কোটি মানুষকেই রেশনের সুবিধা দিলেও তার পর থেকে জুন মাস পর্যন্ত প্রত্যেকের জন্যই বিনামূল্যে রেশনের ব্যবস্থা থাকবে কি না, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সে কথা এ দিন জানান। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সবাই পাবেন, তার পর থেকে জুন পর্যন্তও খাদ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় থাকারা অবশ্যই পাবেন— জানান মুখ্যমন্ত্রী। বাকিদের জন্যও বিনামূল্যে রেশন ব্যবস্থা বহাল রাখা যায় কি না, তা পরে ভেবে দেখা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy