আইন কার্যকর হলে আর ক্রেতাদের মোবাইল নম্বর মৌখিক ভাবে চাইতে পারবে না বিপণিগুলি। —ফাইল চিত্র।
মৌখিক ভাবে আর ক্রেতাদের কাছে মোবাইল নম্বর চাইতে পারবে না কোনও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা অন্য বিপণিগুলি। এ বার এমনই আইন চালু করার পথে এগোচ্ছে কেন্দ্র। মৌখিক ভাবে মোবাইল নম্বর চাওয়ার ফলে ক্রেতাদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা লঙ্ঘিত হতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্র। ব্যক্তিগত ডিজিটাল ডেটা সুরক্ষা আইন (ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট) চালু হলে, প্রকাশ্যে ক্রেতাদের মোবাইল নম্বর চাওয়া বেআইনি বলে গণ্য হবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই এই আইনের খসড়া তৈরি করে ফেলে কেন্দ্র। অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্র মারফত জানা যায়, বিধিতে কোনও বদল আনার পরিকল্পনা নেই।
বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা বস্ত্র, ওষুধের নামী বিপণিগুলি ক্রেতাদের কাছে মোবাইল নম্বর চেয়ে থাকে। কখনও অনলাইনে রশিদ দেওয়ার জন্য, আবার কখনও ‘লয়্যালটি পয়েন্ট’ (যা থেকে ক্রেতারা পরবর্তী কেনাকাটির সময়ে ছাড় বা অন্য সুবিধা পান)-এর জন্য এই মোবাইল নম্বর চাওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিপণির কর্মীরা বিল দেওয়ার ক্যাশ কাউন্টারে ক্রেতাদের কাছে মৌখিক ভাবে তা চেয়ে থাকে। ক্রেতাদেরও তা মৌখিক ভাবেই জানাতে হয়, যা বিপণির কর্মী থেকে শুরু করে আশপাশের লোকেরাও শুনতে পান। এই ভাবে মোবাইল নম্বর চাওয়ার ফলে ক্রেতার ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে মনে করছে কেন্দ্র। ফলে নতুন আইন অনুসারে, মৌখিক ভাবে মোবাইল নম্বর চাইতে পারবে না বিপণিগুলি।
বস্তুত, ক্রেতাদের মোবাইল নম্বরের উপর ভিত্তি করেই প্রয়োজনীয় ‘রেকর্ড’ রাখে বিপণিগুলি। ক্রেতাদের ‘লয়্যালটি পয়েন্ট’ বা অন্য কোনও ছাড়ের ক্ষেত্রেও মোবাইল নম্বরের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল বিপণিগুলি। তবে কেন্দ্রের নতুন আইনের ফলে বিপণিগুলিকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রচলিত রেওয়াজের পরিবর্তে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে তাদের।
বৌদ্ধিক সম্পত্তি সংক্রান্ত এক আইনি সংস্থার ডিজিটাল এবং সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ের প্রধান এস চন্দ্রশেখরের মতে, ছোটখাটো কিছু বদল এনে এই সমস্যা সামাল দেওয়া যেতে পারে। যেমন, মৌখিক ভাবে ক্রেতাদের কাছে মোবাইল নম্বর চাওয়ার পরিবর্তে কোনও কি-প্যাডের মাধ্যমে সেই তথ্য নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে ক্রেতাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও অনেকাংশে রক্ষা করা যাবে। সংবাদমাধ্যম ‘টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’কে তিনি বলেন, “ক্রেতাদের বিষয়ে কোনও তথ্য কেন নেওয়া হচ্ছে, কত দিনের জন্য তা নেওয়া হচ্ছে এবং কবে মুছে ফেলা (ডিলিট) হবে— নতুন আইন অনুসারে তা ক্রেতাদের অবশ্যই জানিয়ে রাখতে হবে। এই তথ্য জানাতে ক্রেতার সম্মতি রয়েছে বলে ধরে নেওয়া যাবে না। ক্রেতার সম্মতি প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হতে হবে।”
নতুন আইনের বিধি অনুসারে, কোনও ক্রেতা মোবাইল নম্বর না-দিলেও তাঁকে পরিষেবা দিতে হবে। তবে মোবাইল রিচার্জ বা সমতুল কোনও পরিষেবা (যেগুলির সঙ্গে মোবাইল নম্বরের সরাসরি যোগ আছে) সে ক্ষেত্রে এই কড়াকড়ি থাকছে না। তবে নতুন আইন কার্যকর হলে শুধু মোবাইল নম্বর নয়, অন্য বিকল্পের দিকেও হাঁটতে হতে পারে বিপণিগুলিকে। সে ক্ষেত্রে মোবাইল নম্বরের বিকল্প হিসাবে ইমেল আইডিও চাইতে পারে তারা। রশিদ মোবাইলে পাঠানোর পরিবর্তে ইমেল আইডিতে বা কাগজে ছাপানো রশিদ দিতে হতে পারে। চন্দ্রশেখরের মতে, ব্যবসাকে বিঘ্নিত করা এই আইনের লক্ষ্য নয়। বরং, ক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া তথ্য যাতে নির্দিষ্ট কাজেই ব্যবহার হয় এবং কাজ মিটে গেলে তা মুছে ফেলা হয়— তা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ।
২০২৩ সালের অগস্টে সংসদের উভয় কক্ষে এই সংক্রান্ত বিল পাশ হয়। তার দু’দিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির সম্মতি মেলে এবং বিলটি আইনে পরিণত হয়। তার পর থেকে দু’বছর কেটে গেলেও আইনটি এখনও পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। গত জানুয়ারিতে আইনের খসড়া বিধি প্রকাশ করে কেন্দ্র। অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্র মারফত জানা যায়, বিধিতে কোনও বদল আনার পরিকল্পনা নেই।