National News

নোটবন্দিতে খোয়া গিয়েছে কয়েকশো কোটি টাকা, উদ্ধারে মরিয়া মাওবাদীরা

নোটবন্দির সময় দেশ জুড়ে কয়েকশো কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে মাওবাদীদের। বিভিন্ন এরিয়া কমিটি বা ডিভিশনাল কমিটির নেতৃত্ব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নোট বদলানোর চেষ্টা করেছিলেন।

Advertisement

সিজার মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:১৮
Share:

দেশ জুড়েই টাকা উদ্ধার করতে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে মাওবাদীরা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নোটবন্দির সময় মাওবাদীদের কয়েকশো কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বিভিন্ন ব্যবসায়ী। এখন সেই টাকা উদ্ধারে মরিয়া হয়ে মাঠে নামছে মাওবাদীরা। গোয়েন্দাদের দাবি তেমনই।

Advertisement

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে মাওবাদীদের নয়া সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসব রাজের লেখা একটি চিঠি হাতে এসেছে। চিঠিটি তিনি বস্তারের বিভিন্ন ডিভিশনের শীর্ষ নেতৃত্বের উদ্দেশে করে লিখেছেন। সেই চিঠিতে স্পষ্টই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে দলীয় তহবিল নিয়ে।

দলের দায়িত্ব নিয়েই সিপিআই মাওবাদী সংগঠনের নতুন সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাওয়ের এখন সবচেয়ে বড় চিন্তা দলের তহবিলের ভাঁড়ে মা ভবানী দশা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ছত্তিসগঢ় এবং মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ এলাকায় কেন্দু পাতার ঠিকাদারদের কাছ থেকে বছরে ১০০কোটি টাকারও বেশি লেভি আদায় করত মাওবাদীরা। কিন্তু, গত কয়েক বছর সেই লেভির বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গিয়েছে যৌথ বাহিনীর চেষ্টায়। গোয়েন্দাদের দাবি, চিঠিতে সে কথা স্বীকার করেছেন বাসবরাজ। তাঁর লেখায় রয়েছে, ‘বহু জায়গাতেই যে সমস্ত কমরেডরা লেভি সংগ্রহ করতেন, তাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন। অনেক জায়গাতেই ঠিকাদাররা লেভি দিতে অস্বীকার করছেন।”গোয়েন্দা সূত্রে খবর, আর্থিক পরিস্থিতির পর্যালোচনার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে সংগঠনের বেশ কিছু নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করেছেন বাসবরাজ। কর্নাটক, কেরল, অসম এবং পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনকে মজবুত করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে তাঁর চিঠিতে।

Advertisement

(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন— ফিরে দেখা এই দিন।)

গোয়েন্দাদের দাবি, সংগঠনের আর্থিক এই দুর্দশার জন্য নোটবন্দিকেই দায়ী করেছেন শীর্ষ ওই মাওবাদী নেতা। নোটবন্দির সময় দেশ জুড়ে কয়েকশো কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে মাওবাদীদের। বিভিন্ন এরিয়া কমিটি বা ডিভিশনাল কমিটির নেতৃত্ব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নোট বদলানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছেন ওই ব্যবসায়ীরা। সেই টাকা এখন পুনরুদ্ধারে মরিয়া মাওবাদীরা।

আরও পড়ুন: ‘সন্তানকে যেন সারা জীবনের সঞ্চয় না দেন কোনও বাবা-মা’, আক্ষেপ প্রাক্তন রেমন্ডকর্তার

দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে এবার সেই টাকা উদ্ধারে দেশ জুড়ে অভিযানে নেমেছে মাওবাদী সংগঠন। সোমবারই তারা বিহারের ঔরঙ্গাবাদে বিধান পরিষদের সদস্য বিজেপি নেতা রাজন সিংহের বাড়িতে হানা দেয়। সেখানে রাজনের কাকাকে মাওবাদীরা হত্যা করে। গ্রামের একটি কমিউনিটি হলও তারা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লসিভ ডিভাইস (আইইডি) দিয়ে উড়িয়ে দেয়। মাওবাদীদের দাবি, রাজনকে তাঁরা নোটবন্দির সময়ে পাঁচ কোটি টাকা দিয়েছিল বদল করতে। সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে রাজন। এখন সেটাই ফেরৎ চায় গেরিলারা।

আরও পড়ুন: ‘রাফাল চুক্তির ফাইল মনোহর পর্রীকরের বেডরুমে’! এ বার ‘অডিয়ো বোমা’ ফাটাল কংগ্রেস

গোয়েন্দাদের দাবি, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশ জুড়েই টাকা উদ্ধার করতে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে মাওবাদীরা। আর পাল্লা দিয়ে বাড়বে হিংসা। কারণ,হিংসার মাত্রা বাড়িয়ে তারা লেভি আদায়ের রাস্তা পরিষ্কার করতে চাইবে। মাওবাদী প্রধান তাঁর চিঠিতে বিভিন্ন অ্যামবুশ বা লড়াইয়ের সময়েক্লেমোর মাইন এবং আন্ডার ব্যারেল গ্রেনেড লঞ্চারের ব্যবহার বাড়াতে বলেছেন। এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, “ওই নির্দেশ স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, ক্যাডারদের আরও আক্রমনাত্মক হতে বলছেন বাসবরাজ।”

আসলে গোয়েন্দাদের চিন্তা বাড়িয়েছে বাসবরাজের পরিকল্পনা। গোয়েন্দাদের দাবি, বস্তারের উপর চাপ কমাতে এবার কর্নাটক এবং কেরলে সংগঠনের উপর জোর দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই কেরলের মল্লপুরম এলাকায় সশস্ত্র মাওবাদীদের প্রভাব এবং সংগঠন উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। সঙ্গে অসম এবং বাংলায় সংগঠন নিয়ে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। আর এই নয়া ছকই এখন চিন্তা বাড়িয়েছে গোয়েন্দাদের।

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন