পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। —ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের তালিবান নিষেধাজ্ঞা কমিটির সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেয়েছে পাকিস্তান। সন্ত্রাসদমন কমিটিতেও তারা সহ-সভাপতিত্ব করবে। পাকিস্তান এই দায়িত্ব পাওয়ার পর তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু আসলে নিরাপত্তা পরিষদের চারটি কমিটিতে তারা সভাপতিত্বের দাবি জানিয়েছিল। কেবল একটি ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের দাবি মান্যতা পেয়েছে। নিউ ইয়র্কের একটি সূত্র উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই খবর জানিয়েছে।
জানা গিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ নিষেধাজ্ঞা কমিটি, ১৫৪০ (নন-প্রোলিফেরেশন) নিষেধাজ্ঞা কমিটি, ১৩৭৩ সন্ত্রাসদমন কমিটি এবং ১৯৮৮ তালিবান নিষেধাজ্ঞা কমিটির সভাপতিত্ব করতে চেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু কেবল তালিবান সংক্রান্ত কমিটির মাথায় থাকার সুযোগ পেয়েছে তারা। সন্ত্রাসদমন কমিটির সহ-সভাপতিত্ব তাদের দেওয়া হয়েছে। বাকি কমিটিগুলিতে পাকিস্তানের সভাপতিত্বের দাবি খারিজ হয়ে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই নিরাপত্তা পরিষদের এই পদ বণ্টন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের টালবাহানার কারণে তা পিছিয়ে গিয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে পাকিস্তানের ‘ঐকমত্যের অভাব এবং অযৌক্তিক দাবি’। তাদের এই মনোভাবে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যেরাও বিরক্ত হয়েছে বলে খবর।
পাকিস্তানের সভাপতিত্বে তালিবান নিষেধাজ্ঞা কমিটির সহ-সভাপতিত্ব করবে রাশিয়া এবং গায়ানা। এ ছাড়া ১২৬৭ নিষেধাজ্ঞা কমিটির সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেয়েছে ডেনমার্ক (সহ-সভাপতিত্বে রাশিয়া এবং সিয়েরা লিওন), ১৫৪০ (নন-প্রোলিফেরেশন) নিষেধাজ্ঞা কমিটির সভাপতিত্বে রয়েছে ইকুয়েডর। পাকিস্তান যে সন্ত্রাসদমন কমিটির সহ-সভাপতিত্ব পেয়েছে, তার মাথায় রয়েছে আলজেরিয়া। এ ছাড়াও পাকিস্তানের সঙ্গে এই কমিটির সহ-সভাপতিত্ব করবে ফ্রান্স এবং রাশিয়া।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচ স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র আমেরিকা, চিন, রাশিয়া, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স। এ ছাড়া দু’বছরের মেয়াদে ১০টি রাষ্ট্রকে অস্থায়ী সদস্য হিসাবে নিরাপত্তা পরিষদে জায়গা দেওয়া হয়। পাকিস্তান বর্তমানে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য। নিরাপত্তা পরিষদের অধীনস্থ বিভিন্ন কমিটির দায়িত্ব স্থায়ী এবং অস্থায়ী সদস্যদের মধ্যে ভাগ করা হয়। তেমনই চারটি কমিটিতে সভাপতিত্ব করতে চেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু আপাতত তাদের একটি সভাপতিত্ব এবং একটি সহ-সভাপতিত্বে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। একসময় ভারতও এই তালিবান নিষেধাজ্ঞা কমিটি এবং সন্ত্রাসদমন কমিটির সভাপতিত্ব করেছে। এ ছাড়া, নিরাপত্তা পরিষদের ইনফর্মাল ওয়ার্কিং গ্রুপ (আইডব্লিউজি)-তে গ্রিসের সঙ্গে যুগ্ম সভাপতিত্ব করবে পাকিস্তান। ডকুমেন্টেশন আইডব্লিউজি-তে তারা ডেনমার্কের সঙ্গে যুগ্ম সভাপতিত্ব পেয়েছে। এই সংক্রান্ত বিষয়ে ওয়াকিবহালরা বলছেন, নিরাপত্তা পরিষদের কমিটিগুলিতে যে জায়গা পাকিস্তান পেয়েছে, তাতে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
উল্লেখ্য, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং তৎপরবর্তী ভারত-পাক সংঘর্ষের আবহে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদতের দাবি আরও জোরদার করেছে নয়াদিল্লি। পহেলগাঁও কাণ্ডের জন্য পাকিস্তানকেই দায়ী করেছে ভারত। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপও করা হয়েছে। পাকিস্তানে সেনা অভিযান চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি, যে অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থানের কথা প্রচার করতে দেশে দেশে প্রতিনিধিদলও পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য দেশগুলিতে গিয়েছেন এবং পাকিস্তানের সীমান্ত সন্ত্রাসের দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসদমন কমিটিতে পাকিস্তানের সহ-সভাপতিত্ব এবং তালিবান সংক্রান্ত কমিটিতে সভাপতিত্ব ভারতের কাছে ‘ধাক্কা’ বলে ব্যাখ্যা করছেন কেউ কেউ। কিন্তু সূত্রের দাবি, রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের প্রত্যাশা আদৌ পূরণ হয়নি। পাক প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করার ক্ষেত্রে ভারত তাদের বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে আলোচনাও চালিয়ে যেতে পারবে। ফলে পাকিস্তান একার ইচ্ছায় কোনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারবে না।