(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। ভ্লাদিমির পুতিন (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে চাপানউতর চলছে ভারতের। রাশিয়ার থেকে তেল কেনার ‘অপরাধে’ ভারতীয় পণ্যের উপর জরিমানা-সহ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই আবহে শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। পরে তিনি সমাজমাধ্যমে সেই ফোনালাপের কথা জানিয়েছেন। পুতিনকে নিজের ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করে মোদী লিখেছেন, তাঁরা দু’জনেই ভারত-রাশিয়ার সম্পর্ক আরও মজবুত করার উপর জোর দিয়েছেন। দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারি বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেছেন। পাশাপাশি, ইউক্রেনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিষয়ে পুতিন তাঁকে জানিয়েছেন বলেও সমাজমাধ্যমে লিখেছেন মোদী।
শুক্রবার মোদী এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘‘বন্ধু পুতিনের সঙ্গে খুব ভাল এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ কথোপকথন হয়েছে। ইউক্রেনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা জানানোর জন্য ওঁকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করেছি। ভারত এবং রাশিয়ার বিশেষ কৌশলগত অংশীদারি বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা করেছি। চলতি বছরে পুতিনকে এ দেশে স্বাগত জানানোর জন্য মুখিয়ে রয়েছি।’’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় গিয়ে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সূত্রের খবর, তার পরেই মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে পুতিনের।
বুধবার ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর আরও ২৫ শতাংশ জরিমানা আরোপ করেছেন। এখন ভারত থেকে আমেরিকায় রফতানি করা পণ্যে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানো হচ্ছে। চলতি মাসের ২৭ তারিখ থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতীয় সংস্থাগুলি রাশিয়া থেকে তেল কিনে খোলা বাজারে বিক্রি করে মুনাফা করছে এবং রাশিয়াকে যুদ্ধে ‘সাহায্য’ করে চলেছে। সে কারণে এই শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা বলেও জানিয়েছেন তিনি। তার পরেই ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি, সার্বভৌম দেশগুলির অবশ্যই তাদের বাণিজ্য ও আর্থিক সহযোগী নির্বাচন করার অধিকার রয়েছে।’’
এই আবহে রাশিয়া সফরে গিয়েছেন ডোভাল। তিনি বৃহস্পতিবার রাশিয়া থেকে পুতিনের ভারতের সফরের কথা জানান। চলতি মাসের শেষে ভারত সফরে আসার কথা পুতিনের। তবে কবে, সেই তারিখ স্পষ্ট করা হয়নি। আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে টানাপড়েনের আবহে পুতিনের এই ভারত সফর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল। এখনও পূর্ব ইউরোপে দুই দেশের যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিবাদে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি বিশ্ব তাদের উপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে রুশ বাণিজ্য যে কারণে বড়সড় ধাক্কা খায়। সেই সময়ে রাশিয়া সস্তায় খনিজ তেল বিক্রি শুরু করে। জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল সেই সময়ে। রাশিয়া থেকে এই মুহূর্তে ৩৫ শতাংশ তেল আমদানি করে ভারত। আমেরিকার দাবি, ভারত রাশিয়া থেকে তেল এবং অস্ত্র কেনার ফলে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সুবিধা হচ্ছে পুতিনের। ভারত যদিও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, জাতীয় স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক বাজারদরের কথা মাথায় রেখে ভারত তার বাণিজ্যনীতি নির্ধারণ করে থাকে। রাশিয়া সস্তায় তেল বিক্রি করছে বলেই ভারত কিনছে। এ বার প্রধানমন্ত্রী রুশ প্রেসিডেন্টকে ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করলেন। ফোনে দু’জনের কথাবার্তার বিষয়ও প্রকাশ করেছেন।