গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
পহেলগাঁওয়ে হামলার ১৫ দিনের মাথায় পাকিস্তানে প্রত্যাঘাত হেনেছে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী। যে অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’। অভিযানের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ‘অপারেশন সিঁদুর’ শব্দবন্ধের ট্রেডমার্ক চেয়ে চার-চারটি আবেদন জমা পড়ল কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকে। মঙ্গল ও বুধবারের মাঝের রাতে পাকিস্তানের ন’টি জায়গায় বিমানহানা চালিয়ে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনা। তার সপক্ষে অজস্র ছবি, ভিডিয়োও প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের ওয়েবাসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ট্রেডমার্ক পাওয়ার জন্য প্রথম আবেদন করে মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ় লিমিটেড।
মধ্যরাতে পাকিস্তানে প্রত্যাঘাতের পরে গোটা ঘটনাক্রম সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমকে জানানোর জন্য বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক শুরু করে সেনা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ, কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। মধ্যমণি ছিলেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে ওই সাংবাদিক বৈঠক (মিডিয়া ব্রিফিং)। কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের ওয়েবাসাইট অনুযায়ী, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে যখন সাংবাদিক বৈঠক চলছে, সেই সময়েই ওই নামে ট্রেডমার্কের জন্য আবেদন জানায় রিলায়্যান্স।
রিলায়্যান্সের আবেদনের এক ঘণ্টার মধ্যে বুধবার সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে ট্রেডমার্কের জন্য আবেদন করেন মুম্বইয়ের অধিবাসী মুকেশ চেত্রম আগরওয়াল। বেলা ১২টা ১৬ মিনিটে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ট্রেডমার্কের জন্য আবেদন জানান ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন কংল সিংহ। সন্ধ্যা ৬টা ২৭ মিনিটে ট্রেডমার্কের জন্য নাম নথিভুক্ত করান দিল্লির অধিবাসী অলোক কোঠারি। কী ধরনের ট্রেডমার্ক? মুকেশ আগরওয়াল ছাড়া বাকি তিন আবেদনকারীই ওই শব্দের ট্রেডমার্ক চেয়েছেন। মুকেশ কেবল ‘ডিভাইস’-এর জন্য ট্রেডমার্কের আবেদন করেছেন। তবে প্রত্যেক আবেদনকারীরই উদ্দেশ্য প্রায় অভিন্ন। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা মনোরঞ্জন, চলচ্চিত্র, ওয়েব সিরিজ় নির্মাণ, শিক্ষা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, প্রকাশনার জন্য ট্রেডমার্কের আবেদন করছেন।
বাণিজ্যিক মহলের বিদগ্ধদের বক্তব্য, নামটি যে বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহার করা হবে, আবেদনের ধরন দেখেই তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তবে কৌতূহল হল, সেনা অভিযানের নাম কি এই ধরনের বাণিজ্যিক ট্রেডমার্ক হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে? ট্রেডমার্ক সংক্রান্ত আইন বলছে, এই ধরনের অভিযানের নামকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সাধারণত বৌদ্ধিক সম্পত্তি হিসাবে দাবি করে না। সে ক্ষেত্রে আইনত বাধা নেই। সরকার আপত্তি না-জানালে ট্রেডমার্ক পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা থাকার কথা নয়। আবার সরকার আপত্তি জানালে জটিলতাও তৈরি হতে পারে ট্রেডমার্ক পাওয়ার ক্ষেত্রে। ১৯৯৯ সালের ট্রেডমার্ক আইন অনুযায়ী কোনও নাম বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা হলে, তা যদি বিভ্রান্তিকর, মানুষের ভাবাবেগের পরিপন্থী হয়, তা হলে স্বত্ব না-ও দেওয়া হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ট্রেডমার্ক দেওয়ার পরে প্রত্যাহার করারও নজির রয়েছে।
ট্রেডমার্ক পাওয়ার নিয়ম কী?
আইন বলছে, কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি প্রথমে আবেদন করলেই যে ট্রেডমার্ক পাবেন, তা না-ও হতে পারে। কারণ, প্রথমে ট্রেডমার্কের জন্য নাম নথিভুক্ত করাতে হয়। তার পর তা জার্নালে প্রকাশ করতে হয়। কেউ আপত্তি জানালে, তা খতিয়ে দেখে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক। তার পর সব ঠিক থাকলে ট্রেডমার্ক দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কী হবে, তা সময়ই বলবে।