Ahmedabad Plane Crash

১৬ সেকেন্ডে ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি! ড্রিমলাইনারের দুর্ঘটনার নেপথ্যে আর কী কী কারণ থাকতে পারে?

বিমানটি যে ভাবে ভেঙে পড়েছে, বিমান পরিবহণের ভাষায় সেটিকে ‘ফ্রি ফল’ বলে। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিমানটি ঠিক মতো রানওয়ে থেকে উড়েছিল। কিন্তু উল্লম্ব ভাবেই নীচের দিকে নেমে আসে, তার পরই আছড়ে পড়ে আগুন ধরে যায়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫ ১৫:৫৭
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

গুজরাতের অহমদাবাদের মেঘানিনগরে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান এআই ১৭১ দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। সাধারণত কোনও বড় বিমান বা রেল দুর্ঘটনার পর পরই যে প্রশ্নগুলি ওঠে, কী ভাবে দুর্ঘটনা, কেন দুর্ঘটনা, কোথাও কোনও ত্রুটি ছিল কি না। থাকলেও যান্ত্রিক না মানবিক— এ সব নিয়ে কাটাঁছেড়া চলতেই থাকে, পাশাপাশি চলে তদন্তও। অহমদাবাদে লন্ডনগামী বিমানটি কেন ভেঙে পড়ল, তার ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার হলেই আসল কারণ জানা যাবে। কিন্তু তার বাইরেও অনেকগুলি বিষয় থাকে, যেগুলি নিয়ে কাটাছেঁড়া, বিশ্লেষণ চলতে থাকে। এই ১৭১ ভেঙে পড়ার পরেও সে রকম বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে।

Advertisement

বিমানটি যে ভাবে ভেঙে পড়েছে, বিমান পরিবহণের ভাষায় সেটিকে ‘ফ্রি ফল’ বলে। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিমানটি ঠিক মতো রানওয়ে থেকে উড়েছিল। কিন্তু উল্লম্ব ভাবেই নীচের দিকে নেমে আসে, আর তার পরই বিমানটি আছড়ে পড়ে আগুন ধরে যায়। এই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাঁদের মধ্যে ২৪১ জন বিমানযাত্রী। এখন ঠিক কোন কোন বিষয়গুলি দুর্ঘটনার নেপথ্যের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ?

দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান এআই ১৭১-এর বিমানের ধ্বংসাবশেষ। ছবি: পিটিআই।

কনফিগারেশন এরর: যে যান্ত্রিক এবং প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া বিমানকে সঠিক ভাবে উড়তে এবং নামতে সহযোগিতা করে, সেটিকে কনফিগারেশন বলে। যদি বিমানের ফ্ল্যাপস ঠিক মতো কাজ না করা, ওড়ার জন্য যে ধাক্কাটা (থ্রাস্ট) জরুরি, তা যদি ঠিকমতো কাজ না করা এবং ল্যান্ডিং গিয়ার ঠিকমতো কাজ কাজ না করার মতো ত্রুটিগুলিকে ‘কনফিগারেশন এরর’ বলা হয়। এই সব বিষয়ই বিমানকে সঠিক উচ্চতায় পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। যদি এগুলি ঠিক মতো কাজ না করে, তা হলে বিমান নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি ঠিক মতো কাজ করেছিল কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ।

Advertisement

যে বিমানটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত, সেটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। অত্যাধুনিক, দীর্ঘ যাত্রাপথের বিমান। এই বিমানে জিই জেনএক্স ইঞ্জিন লাগানো ছিল। অহমদাবাদ থেকে লন্ডন ৪২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল এআই ১৭১-এর। ফলে জ্বালানির পরিমাণ অনেকটাই বেশি ছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৃহস্পতিবারই জানিয়েছেন বিমানে ১.২৫ লক্ষ লিটার জ্বালানি ছিল। ফলে আছড়ে পড়ার পর বিস্ফোরণের অভিঘাত অনেক বেশি হয়।

টেক অফকরার সময় বিমানের গতি: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃহস্পতিবার অহমদাবাদের আকাশ পরিষ্কার ছিল। আবহাওয়াও ভাল ছিল। তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরমের কারণে হাওয়া পাতলা ছিল। আর হাওয়া পাতলা থাকলে বিমানের থ্রাস্ট কম হয়ে যায়। ওড়ার ৮ মিনিটের মধ্যে বিমান ভেঙে পড়েছিল। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের ওড়ার জন্য অন্তত ঘণ্টায় ৩৭০-৪৬৩ কিমি (২০০-২৫০ নট) গতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই বিমানের ক্ষেত্রে সেই গতি ছিল কি না, তা-ও তদন্তসাপেক্ষ। তবে বিভিন্ন সূত্রের দাবি, ওড়ার পর ঘণ্টায় ৩২৫ কিলোমিটার (১৭৪ নট) গতি ছিল বিমানটির। ভেঙে পড়ার আগে সেই গতিতে ৬২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছিল বিমানটি।

অহমদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার পরের ছবি। ছবি: সংগৃহীত।

ল্যান্ডিং গিয়ার: বিমানের ভেঙে পড়ার আগেও দেখা গিয়েছে ল্যান্ডিং গিয়ার খোলা ছিল। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, রানওয়ে ছেড়ে ওড়ার ১৬ সেকেন্ডের মধ্যে ড্রিমলাইনারের ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন সূত্র মারফত দাবি করা হচ্ছে, এআই ১৭১-এর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ১০১ সেকেন্ড পরেও ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ হয়নি।

ফ্ল্যাপ: এটি বিমানের ডানার ঠিক পিছনের প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটি বিমানের ওড়ার দূরত্ব এবং অবতরণের দূরত্ব কমাতে সাহায্য করে। এটিকে ‘সেকেন্ডারি ফ্লাইট কন্ট্রোল’ বলা হয়। কম গতিতেও বিমানটিকে যাতে ঠিক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই হল ফ্ল্যাপের কাজ। আবহাওয়া, পরিস্থিতি অনুযায়ী এই ফ্ল্যাপগুলির প্রক্রিয়াকে ঠিক রাখতে হয় পাইলটকে। কোন ফ্ল্যাপ কখন ব্যবহার করা উচিত, সেটি সময় মতো স্থির করা হয়। ফ্ল্যাপে কোনও ত্রুটি হলে বিমানের সঠিক উচ্চতায় উঠতে বা অবতরণে সমস্যা হয়।

থ্রাস্ট : থ্রাস্ট হল একটি শক্তি। যা বিমানকে হাওয়ায় ভাসতে সাহায্য করে। বিমানের ইঞ্জিন থেকেই এই শক্তি সৃষ্টি হয়। বাইরের তাপমাত্রা বেশি থাকার জন্য অনেক সময় ‘থ্রাস্ট’ কমে যায়। এই জন্য উড়ানের সময় সঠিক ‘থ্রাস্ট’ নির্ধারণ করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি পাইলট ভুলক্রমে কম ‘থ্রাস্ট’ নির্ধারণ করেন বা এই ‘থ্রাস্ট’ নির্ধারণে তাঁর যদি হিসাবের গন্ডগোল হয়, তা হলে বিমান উপরের দিকে উঠতে পারবে না। যে বিমানটি ভেঙে পড়েছে সেটির মোট ওজন ২২৭ টন।

রানওয়ে: সর্দার বল্লভভাই পটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ২৩-এর দৈর্ঘ্য ৩৬০০ মিটার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় যদি রানওয়ের পুরোটা অতিক্রম না করে মাঝপথ থেকেই বিমান ‘টেক অফ’ করানো হয়, তা হলে বিমানটি সঠিক উচ্চতার পৌঁছোনোর জন্য পর্যাপ্ত শক্তি পায় না। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কি তাই হয়েছিল? সেটাও তদন্তসাপেক্ষ। পাইলটেরা ‘ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বা এফএমএস-এ নির্দিষ্ট করে দেওয়া তথ্যের উপর ভরসা করে ইঞ্জিনের ক্ষমতা নির্ধারণ করেন। কিন্তু যদি বিমানের ওজন, বাইরের তাপমাত্রা এবং রানওয়ের দৈর্ঘ্যের তথ্যে কোনও গন্ডগোল হয়, তা হলে ইঞ্জিনে কম ‘থ্রাস্ট’ মেলে।

সময়ের আগেই রোটেশন: ‘রোটেশন’-এর অর্থ হল বিমান ওড়ার মুহূর্তে তার নাকটিকে উপরের দিকে ওঠানো, যাতে সেটি মাটি থেকে উপরের দিকে যেতে পারে। এটি বিমানের গতির উপর নির্ভর করে স্থির করা হয়। ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের মতো বিমানের নাক ওঠানোর জন্য গতি প্রয়োজন ঘণ্টায় ২৬০-৩০০ কিলোমিটার। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যদি এই গতির আগেই বিমান উপরে ওঠার চেষ্টা করে, তা হলে সঠিক ‘লিফ্ট’ (উপরে ওঠার ক্ষমতা) পায় না। আর সে কারণে বিমানের পিছনের অংশ রানওয়েতে ধাক্কা খেতে পারে বা বেসামাল হয়ে ভেঙে পড়তে পারে। এই ১৭১-এর ক্ষেত্রে কি তাই হয়েছিল, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

পাখির ধাক্কা: বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, ওড়ার মুহূর্তেই পাখির সঙ্গে ধাক্কা লেগেছিল বিমানের। সে ক্ষেত্রে একটি বা দু’টি নয় এক ঝাঁক পাখি হয়ে থাকতে পারে। আর তার জেরেই ইঞ্জিন বিকল হয়ে যেতে পারে। এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement