পুজোয় কোন ফেশিয়ালে ত্বকের জেল্লা ফিরবে? ছবি: সংগৃহীত।
কথায় আছে, সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। সৌন্দর্য এবং রূপচর্চার কথা উঠলে অগ্রাধিকার পায় মুখমণ্ডলই। পোশাক, গয়না যতই সুন্দর হোক না কেন, মুখের জেল্লা যদি উধাও হয়, পুরো সাজটাই মাটি হয়ে যেতে পারে।
দুর্গাপুজোর আগে কেতাদুরস্ত পোশাকের সঙ্গে সঠিক ভাবে সাজতে হলে চাই প্রস্তুতি। উজ্জ্বল মুখ, সুন্দর কেশই হতে পারে সেই সৌন্দর্যের চাবিকাঠি। আর রূপচর্চার প্রসঙ্গ উঠলেই অনিবার্য ভাবে এসে পড়ে ফেশিয়ালের কথাও। স্বল্প সময়ে মুখে লাবণ্য ফেরাতে এর বিকল্প হয় না। আবার ফেশিয়ালের গুণে সমাধান হয় ত্বকের হরেক সমস্যারও।
রূপচর্চা সহায়ক এবং রূপটানশিল্পী কেয়া শেঠ এবং শর্মিলা সিংহ ফ্লোরা বলছেন সে কথাই। বছরভর ত্বকের যত্ন না নিলে, এক বার ফেশিয়াল কোনও জাদু করতে পারে না। তাই পুজোর সাজগোজের প্রস্তুতি নিতে হলে, ফেশিয়াল নিয়ে আগেই ভাবা দরকার। শর্মিলার কথায়, ‘‘পুজোর ঠিক দু’দিন আগে বা এক সপ্তাহ আগে ফেশিয়াল না করিয়ে অন্তত মাস খানেক বা দিন ১৫ আগেই ফেশিয়াল করানো যায়।’’
অনেকেরই ধারণা ফেশিয়াল যত শেষ মুহূ্র্তে করা হবে, ততই উজ্জ্বল হবে ত্বক। সপ্তমী-অষ্টমীতে ঠাকুর দেখতে গেলে তাই পঞ্চমী-ষষ্ঠীতেই ফেশিয়াল করানো ভাল। রূপচর্চা সহায়ক কেয়া বলছেন, ‘‘এই ধারণা সঠিক নয়। বরং সঠিক কৌশলে ফেশিয়াল করলে তার জেল্লা দীর্ঘ দিন থাকে। জরুরি হল, ফেশিয়াল করার পরেও ত্বকের সঠিক যত্ন নেওয়া।’’
যতই দিন যাচ্ছে, নিত্য নতুন ফেশিয়াল আসছে বাজারে। উন্নত হচ্ছে পদ্ধতিও। এই বছর কোন ফেশিয়ালের চল, কোনটি ভাল জানাচ্ছেন দুই সাজ-শিল্পী কেয়া শেঠ এবং শর্মিলা সিংহ ফ্লোরা।
হাইড্রা নিয়ে হইচই
গত কয়েক বছর ধরে এই ফেশিয়াল নিয়ে আগ্রহ। তবে এ বছর হাইড্রা ফেশিয়াল হয়েছে আরও উন্নত। হয়ে উঠছে ট্রিটমেন্ট নির্ভর। এই বছর হাইড্রা ফেশিয়াল সবচেয়ে জনপ্রিয়। মৃত কোষ সরিয়ে, ত্বককে আর্দ্রতা জোগানোর মাধ্যমে মুখে দীপ্তি আনাই এই ফেশিয়ালের মূল লক্ষ্য। যে কোনও ধরনের ত্বকেই এটি করা চলে। বিভিন্ন রকম উপকরণ এবং যন্ত্রের সঠিক ব্যবহারে ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে তোলা হয় ফেশিয়ালটিতে। কেয়া বলছেন, ‘হায়ালুরোনিক হাইড্রা’-সহ বিভিন্ন নামে হাইড্রা ফেশিয়াল হচ্ছে। ত্বকের ধরন এবং প্রয়োজন বুঝে উপকরণে বদলও আনা হচ্ছে। শর্মিলা জানাচ্ছেন, মিনারেল হাইড্রা ফেশিয়াল হচ্ছে এই বছর। পুজোর আগে এটিও বেশ জনপ্রিয়। ২৫ থেকে শুরু করে ৪৫ ঊর্ধ্বরা ফেশিয়ালটি করাতে পারেন। ত্বকের জেল্লা আসে এতে খুব ভাল ভাবে।
‘গ্লাস স্কিন’ লক্ষ্য
কোরিয়ানদের মতো ‘গ্লাস স্কিন’ পেতে উৎসুক তরুণ প্রজন্ম। এই বছর তাই গ্লাস স্কিন ফেশিয়ালের রমরমা। কোথাও তা করানো হয় চালের জলের ব্যবহারে, কোথাও আবার কোরিয়ান ভেষজ ব্যবহার হচ্ছে। থাকছে যন্ত্রের ব্যবহারও। কোনও সালোঁ আবার কোরিয়ান মাসাজ় পদ্ধতি অনুসরণ করছে।
বর্ণ হোক উজ্জ্বল
মুখজুড়ে থাকবে লাবণ্য, তাই গ্লো ফেশিয়াল কখনও পুরনো হয় না। শর্মিলা সিং ফ্লোরা বলছেন, ‘‘ত্বকের বর্ণ উজ্জ্বল করার প্রবণতা সব সময়েই লক্ষ্য করা যায়। পুজোর সময়েও তাই গ্লো ফেশিয়ালের রমরমা। রোদে পোড়া ত্বকের সমস্যা যাঁদের, তাঁদের জন্য এটি ভাল। কালচে ভাব তুলে ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।’’
ভিটামিন সি
ভিটামিন সি নিয়ে এই বছর বেশ হইচই। ভিটামিন সি নির্ভর ফেশিয়াল কোলাজেন বৃদ্ধি করে ত্বক টানটান করতে সাহায্য করে। বলিরেখা দূর করে। দূষণ, অতিরিক্ত মেকআপের ব্যবহার, সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগনি রশ্মির প্রভাবে এখন কম বয়সেই অনেকের ত্বকে বলিরেখা পড়ে যায়। ভিটামিন সি ত্বক টানটান করার পাশাপাশি ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে।
সোনার মতো বর্ণ
ত্বকে উজ্জ্বল আভা পেতে ‘গোল্ড ফেশিয়াল’-এর কদর বেশ পুরনো। বিয়ের কনেদের এই ফেশিয়াল করানোর হি়ড়িক ছিল এক সময়ে। সেই পুরনো ফেশিয়াল নতুন করে এই বছর ফিরে আসছে বলছেন শর্মিলা। বলিরেখা কমানো, ত্বকে ঔজ্জ্বল্য ফেরাতে, ত্বর টানটান রাখতে ফেশিয়ালটি বেশ কার্যকর।
ওয়াইন দিয়ে রূপচর্চা
তরুণ প্রজন্মের জন্য ওয়াইন ফেশিয়ালটিও ভাল বলছেন কেয়া শেঠ। যে কোনও বয়েসিরাই এটি করতে পারেন। ত্বকের কালচে ভাব দূর করা, মুখ টানটান এবং উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে ফেশিয়ালটি। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির ফলে হওয়া ত্বকের ক্ষতি প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
ফেশিয়ালে জুড়ছে ট্রিটমেন্ট
রূপচর্চা-সহায়ক এবং রূপটান শিল্পী কেয়া শেঠ বলছেন, ‘‘দিনে দিনে ফেশিয়ায়লের পাশাপাশি ট্রিটমেন্ট নির্ভর রূপচপর্চার কদর বাড়ছে। ফেশিয়ালেরই উন্নত সংস্করণ বলা যায় এটিকে। পুজোর সময়ে অনেকেই কার্বন লেজ়ার ট্রিটমেন্ট, গ্লুটাথায়ন ট্রিটমেন্টও করাচ্ছেন।’’ পিগমেন্টশন, ব্রণ, ওপেন পোর্স থাকলে কার্বন লেজ়ার ট্রিটমেন্ট ভাল কাজ করে। কার্বনের ব্যবহারে মুখ থেকে মৃত কোষ, তেল, ময়লা বার করে আনা হয় এতে। গ্লুটাথায়ন ট্রিটমেন্টে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট প্রবেশ করানো হয় নানা ভাবে। মেলানিন কমাতে, ত্বক টানটান রাখতে, ঔজ্জ্বল্য ফেরাতে সাহায্য করে এই পদ্ধতি।
তবে রূপচর্চা সহায়করা পরামর্শ দিচ্ছেন, ফেশিয়ালের নাম শুনেই বেছে নেওয়াটা ঠিক নয়, বরং ত্বক সম্পর্কে অভিজ্ঞ লোকজনই ত্বক পরীক্ষা করে, সমস্যা জেনে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন। পেশাদার সালোঁতে পেশাদার লোকজন থাকেন, যাঁরা এই পরামর্শ দেন।