ইনসুলিনের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি মৃত্যুর দিকে ঠেলছে ডায়াবিটিকদের। ছবি: শাটারস্টক।
ডায়াবিটিসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তার সমাধান ইনসুলিনের সরবরাহ বাড়ছে না। ফলে অচিরেই ডায়াবিটিক রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ইনসুলিন জুটবে না। ল্যানসেট ডায়াবিটিস ও এন্ডোক্রিনোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা এমনই শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
আধুনিক জীবনযাত্রা, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তার হাত ধরে যে সব রোগের আক্রমণ আমাদের জীবনে ভয়াল রূপে নেমে আসছে তার মধ্যে অন্যতম ডায়াবিটিস। বর্তমানে এই অসুখে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বিশ্বে প্রায় ৪৩ কোটি।
দিনকে দিন অবস্থা এতই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে যে, ২০৩০ সাল নাগাদ এই অসুখে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৫১ কোটিরও বেশি। এই অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও ওশিয়ানিয়া অঞ্চলে বিপুল পরিমাণে ইনসুলিনের জোগান কমবে। তার অন্যতম কারণ বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার দ্বারা ইনসুলিনের নির্ধারিত মূল্য।
আরও পড়ুন: কিছু বদভ্যাস ডায়াবিটিস ডেকে আনে, জানেন তো?
এই গবেষণায় আন্তর্জাতিক ডায়াবিটিস ফাউন্ডেশন ও আরও ১৪টি সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাতে দেখা গিয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের সকল প্রাপ্তবয়স্কের প্রায় নয় শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত। ২০৩০ সাল নাগাদ ২২১টি দেশে টাইপ টু ডায়াবিটিসের সংখ্যা বেড়ে ৫১ কোটি ১০ লাখে। তবে অসুখ আক্রান্তরা কত দিন এই ইনসুলিন ব্যবহার করার মতো পকেটের জোর দেখাতে পারবেন, তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে চিকিৎসকদের কপালে।
এই প্রসঙ্গে এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘ইনসুলিন মূলত বিদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার দ্বারাই বাজারজাত হয়। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মারফতে তা তৈরি হলেও কোনও কারণ ছাড়াই গত ১০ বছরে প্রায় ৬০০ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে সংস্থাগুলি। ফলে একটা সময়ের পর মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাবে এই ওষুধ।’’
আরও পড়ুন: ব্যায়াম করে দাবিয়ে রাখুন ডায়াবিটিসকে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, সারা বিশ্বে এখন যেখানে টাইপ টু ডায়াবিটিসের কারণে ৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষের ইনসুলিন প্রয়োজন, সেখানে দামের প্রভাবে সরবরাহ কমেছে অনেকটাই। পরিসংখ্যানে মাত্র ৩ কোটি ৩০ লাখ। দামের বাড়বাড়ন্ত এই হারে থাকলে সরবরাহ আরও কমবে বলে শঙ্কা গবষকদের। বর্তমান সরবরাহ বজায় থাকলে ২০৩০ সালে মাত্র অর্ধেক লোকই ওষুধটি হাতে পাবে।
তা হলে উপায়?
এই গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় বসুর মতে, জাতিসঙ্ঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ পদক্ষেপে এই দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে বৈঠক চলছে, চেষ্টা করা হচ্ছে দাম আয়ত্তে এনে জোগান বাড়াতে। এ ছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই অসুখের প্রকোপ বেশি হওয়ায় সেখানে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণের দিকেও মন দিতে হবে আমাদের।
ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।