energy drinks

গরমে চাঙ্গা থাকতে এনার্জি ড্রিঙ্ক? এই স্বভাব ডেকে আনছে মারাত্মক সব বিপদ

এই অভ্যাসকে কিন্তু সাক্ষাৎ অসুখবাহী বলে দেগে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৯ ১৬:৪৮
Share:

জলে অরুচি এলে সঙ্গে থাকা এই পানীয়ের বোতলটিই ভরসা জোগাচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে। এতেই বিপদ দেখছেন চিকিৎসকরা। ছবি: শাটারস্টক।

গরমে শরীর নাজেহাল। শক্তিক্ষয় রুখে চাঙ্গা হতে হাতের কাছে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরছেন এনার্জি ড্রিঙ্ককে। শীতল হতে কেউ কেউ মিশিয়ে নিচ্ছেন বরফ, আবার কেউ বা দিনে দু’-তিন বার বরফটরফ ছাড়াই চুমুক দিচ্ছেন এনার্জি ড্রিঙ্কে। ক্লান্তি কমে কিছুটা শক্তিও আসছে বটে। এ অভ্যাসের দাস একা এ দেশ নয়, বরং গোটা বিশ্বেই ছবিটা কমবেশি একই।

Advertisement

জলে অরুচি এলে সঙ্গে থাকা এই পানীয়ের বোতলটিই ভরসা জোগাচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে। এই অভ্যাসকে কিন্তু সাক্ষাৎ অসুখবাহী বলে দেগে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সম্প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-ওএই পানীয়জনিত বিপদ সম্পর্কে অভিভাবকদের সতর্ক করেছেন। তবে শুধু ছোটরা নয়, সব বয়সের জন্যই এই পানীয় ক্ষতিকর।

কেন বিপদ

Advertisement

পুষ্টিবিদদের হিসাব অনুযায়ী, একটি ৩৩০ গ্রাম এনার্জি ড্রিঙ্কের বোতলে প্রায় ১০ শতাংশ জুড়ে থাকে সুগার ও ক্যাফিন। এর জেরে ওবেসিটি, টাইপ ২ ডায়াবিটিস ও মানসিক অস্থিরতার সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ সব ছাড়াও রয়েছে আরও কিছু ভয়ের কারণ।

আরও পড়ুন: অনিদ্রা ঠেকাতে আর ঘুমের ওষুধ নয়, এ সব যোগাসনেই আসবে নিশ্চিন্তের গাঢ় ঘুম

নতুন সমীক্ষা বাড়়াচ্ছে ভয়

‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোশিয়েশন’-এর নতুন সমীক্ষা শঙ্কা জাগানোর জন্য যথেষ্ট। ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সি ৩৪ জন সুস্থ মানুষের উপর তিন দিন গবেষণা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রতি দিন এক লিটার বা তার বেশি এই ধরনের পানীয় যাঁরা খান, তাঁদের রক্তচাপ সুস্থ মানুষের থেকে বেড়ে যায়। একই সঙ্গে হৃদস্পন্দনের গতিও স্বাভাবিক থাকে না।

প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসির অধ্যাপক সচিন এ শাহ একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছেন,“শুধু ক্যাফিন নয়, এই ধরনের পানীয়তে টাওরিন (এক ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড),গ্লুকুরোনোল্যাকটোন জাতীয় বহুবিধ উপাদান থাকে। এই পানীয়গুলি যত কম খাওয়া যায় ততই মঙ্গল।’’

ছোট-বড় সকলের জন্যই এই পানীয় ক্ষতিকর।

এই প্রসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ভাস্কর কুমার দাসের মতে, “এনার্জি ড্রিঙ্ক থেকে শরীরে অতিরিক্ত চিনি প্রবেশ করে। এই ধরনের পানীয়ে অনেক ক্ষেত্রেই কৃত্রিম চিনি বা অ্যাসপার্টেম মজুত থাকে, যা ডায়াবিটিস ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট। তার সঙ্গে প্রিজারভেটিভ যুক্ত থাকার দরুণ শরীরে বাসা বাঁধে নানা চর্মরোগের জীবাণু, লিভারের উপরেও সরাসরি কুপ্রভাব বিস্তার করে এই সব উপাদান। তাই জল, ডাবের জল, নুন-মধুর জল, লেবু-মধু জল এ সব খেয়েই দরমে চাঙ্গা থাকুন।’’

আরও পড়ুন: মেদ তো বাড়েই না, পরিমিত পরিমাণে খেলে এ সব উপকার করে আম

এ নিয়ে ভাস্করবাবুর সঙ্গে সহমত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। তাঁর মতে, এনার্জি ড্রিঙ্ক হিসাবে অনেকে ঠান্ডা পানীয়তেও চুমুক মারেন। সেটাও খুব ক্ষতিকর। এতেও অতিরিক্ত চিনি থাকে। তা ছাড়াও এরা শরীরে জলের চাহিদা তৈরি করে শরীরকে শুষ্ক করে দেয়। তাই এনার্জি ড্রিঙ্ক, ঠান্ডা পানীয় সবই এড়িয়ে চলুন।’’

ভারতের বাজারে দেদার বিক্রি হওয়া বেশ কিছু এনার্জি ড্রিঙ্ক ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ করেছে নরওয়ে ও ডেনমার্কের মতো দেশ। ব্রিটেনে শিশুদের কাছে এই ধরনের পানীয় বিক্রি রীতিমতো নিষিদ্ধ। ভারতের টনক নড়বে কবে?চিকিৎসকেরা সতর্ক করে বলছেন, বিলম্বিত হলেও এই বোধোদয় এ বার অন্তত হলে ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন