slip disc

অনেক ক্ষণ একটানা বসে কাজ? স্লিপ ডিস্ক ঠেকাতে এ ভাবেই সতর্ক হোন

অনেক সময় নীচু হয়ে হ্যাঁচকা টানে কিছু সরাতে গিয়ে বা না জেনেবুঝে ব্যায়াম করতে গিয়েও সমস্যা হতে পারে৷

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:২৫
Share:

মেরুদণ্ডের দুই হাড়ের মাঝে ভুল ভাবে বেশি চাপ পড়লে দেখা দেয় স্লিপ ডিস্কের সমস্য়া। ছবি: শাটারস্টক।

স্লিপ ডিস্ক বা ডিস্ক প্রোল্যাপ্স অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয় জীবনযাপনের দোষে৷ দিনের পর দিন কোমরের কাছে মেরুদণ্ডের দুই হাড়ের মাঝে ভুল ভাবে বেশি চাপ পড়তে পড়তে এক সময় বসে থাকা নরম কুশন হড়কে গিয়ে পিছনের স্নায়ুতে চাপ দিতে শুরু করে৷ শুরু হয় কারেন্ট লাগার মতো ব্যথা৷ দেখা দেয় অ্যাকিউট ডিস্ক প্রোল্যাপ্স৷

Advertisement

অনেক সময় নীচু হয়ে হ্যাঁচকা টানে কিছু সরাতে গিয়ে বা না জেনেবুঝে ব্যায়াম করতে গিয়েও সমস্যা হতে পারে৷ আবার ব্যায়াম না করার অভ্যাস ও ওবেসিটি থাকলেও সমস্যা হতে পারে৷ ১৫–৪০ বছর বয়সে এ রোগ বেশি হয়৷

এই প্রসঙ্গে অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক চক্রবর্তীর মতে, ‘‘৫০–৮০ বছর বয়সের মানুষদের ক্ষেত্রে বেশি হয় ক্রনিক ডিস্ক প্রোল্যাপ্স৷ এই অসুখে প্রথম দিকে হালকা ব্যথা হয়। পরিমাণ কম থাকে বলে অনেকেই এই হালকা ব্যথাকে অগ্রাহ্য করে। ভিতরে ভিতরে জটিল হয়ে উঠতে থাকে এই ব্যথা। এমন একটা সময় আসে যখন দেখা যায়, হাঁটতে গেলে পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছে৷ আবার দাঁড়ালে কমে যাচ্ছে৷ পায়ে অবশ ভাবও থাকতে পারে৷ এর সঙ্গে মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয়ে এবড়ো খেবড়ো হয়ে গেলে বিপদ বাড়ে৷ কখনও নড়বড়ে হয়ে যায় মেরুদণ্ড৷ হাঁটতে গেলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে৷’’

Advertisement

আরও পড়ুন: মেদ ঝরাতে রোজ সকালে লেবু-জল, আদৌ কোনও লাভ আছে কি?

রোগ ঠেকাতে কী কী করণীয়

চিকিৎসকদের মতে, স্লিপ ডিস্ক ঠেকাতে প্রতি দিনের জীবনে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলাটা একান্তই দরকার।

ওজন ও ভুঁড়ি ঠিক রাখুন৷ শুধু কার্ডিও-ই নয়, কোমরের পেশি সবল করার ব্যায়াম করুন নিয়মিত৷ হাঁটা বা বসার সময় কোমর ও শিরদাঁড়া সোজা রাখুন৷ আধশোয়া হয়ে বা শুয়ে বই পড়া, টিভি দেখা যত কমানো যায় ততই ভাল৷ কোমরে ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শমতো ব্যাক রিল্যাক্সিং আসন করুন৷ দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ করতে হলে কোমরের কাছে সাপোর্ট দেওয়া চেয়ারে সোজা বসুন। একটানা বসে না থেকে মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে একটু হাঁটাচলা করে বা ব্যাক স্ট্রেচিং করে নিতে পারেন। এতে সমস্যা কম হয়৷ নিয়মিত সাঁতার কাটলে খুব ভাল কাজ হয়৷ মেয়েরা ৪৫ আর ছেলেরা ৬০ বছর বয়সের পরে ডাক্তার দেখিয়ে ভিটামিন ডি খান৷ চিকিৎসকের পরামর্শ মতো হাড় মজবুত রাখার ওষুধও খেতে হবে। রোজ এক–আধ ঘণ্টা ভোরের রোদ লাগান গায়ে৷ অতিরিক্ত ধূমপানেও হাড় পাতলা হয়৷ কাজেই অভ্যেস বদলান৷ মদ্যপান ছেড়ে দিতে পারলে সবচেয়ে ভাল৷ একান্তই তা না পারলে এক থেকে দেড় পেগের বেশি একেবারেই চলবে না। হাড় সবল করতে আমিষ খাবারের জুড়ি নেই। বিশেষ করে ডিম, কাঁটা সমেত স্যামন, সারডিন ও চুনো মাছ রাখুন ডায়েটে৷ এর সঙ্গে দুধ ও দুধের খাবার, মাশরুম, কড লিভার অয়েল, মাখন, ঘি, সবুজ শাকসবজি, বাদাম, কুমড়ো পাতা, টোফু, পোস্ত ইত্যাদিও রাখতে হবে খাবাহর পাতে৷

আরও পড়ুন: সারভাইকাল ক্যানসার নয় তো? এই সব লক্ষণ দেখলেই ডাক্তার দেখান

এর পরেও রোগের হানা দেখা দিতে পারে। তেমনটা হলে কী কী উপায়ে তার সঙ্গে যুঝবেন তা জেনে রাখা দরকারি।

অ্যাকিউট ডিস্ক প্রোল্যাপ্সে বিশ্রাম, সামান্য ওষুধ, ফিজিওথেরাপি, বেল্ট, ব্যায়াম ইত্যাদির সাহায্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সমস্যা কমে যায়। তবে যদি তীব্র ব্যথার সঙ্গে পা–ও কমজোরি লাগে, আঙুল নাড়ানো বা পায়ের পাতা উপরে তুলতে কষ্ট হয়, এমআরআই স্ক্যান করে অবস্থার পর্যালোচনা করা দরকার৷ ক্রনিক ডিস্ক প্রোল্যাপ্সে কয়েকটি নিয়ম ও সামান্য ওষুধেই প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগ বশে থাকে৷

অ্যাকিউট ডিস্ক প্রোল্যাপ্সের অপারেশন বলতে যেটুকু ডিস্ক হাড়ের খাঁচার বাইরে বেরিয়ে এসেছে তাকে কেটে নার্ভকে চাপমুক্ত করা৷ খুব একটা কাটাছেঁড়া করতে হয় না এতে৷ কখনও মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে, কখনও ছোট্ট ফুটো করে এন্ডোস্কোপের সাহায্যে অপারেশন হয়৷ ক্রনিক ডিস্ক প্রোল্যাপ্সে বড় অপারেশন লাগে৷ তবে অপারেশনের পর সমস্যা মিটে যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন