পাড়ার ছোট্ট চরকির সঙ্গে দিন কয়েকেই ভাব জমেছে বাড়ির ছোট সদস্যটির। চরকি চারপেয়ে গোল্ডেন রিট্রিভার। আবার আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছে ল্যাব্রাডর। সেও বেশ শান্তশিষ্ট এবং লোকজন ভালবাসে। তাদের দেখেই পোষ্য আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কিন্তু বুঝতে পারছেন না বেছে নেবেন কোন প্রজাতির সারমেয়? তা হলে জেনে নিন কোন কুকুর স্বভাবগত ভাবে কেমন?
দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা সারমেয় লালনপালন করেন তাঁরাই বলছেন, বাড়িতে সারমেয় আনার আগে তার স্বভাব, আচরণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া প্রয়োজন। কোনও কোনও সারমেয় খুবই শান্ত হয়। কোনও প্রজাতির কুকুরের মধ্যে হিংস্রভাব থাকে। যেমন বাড়ি বা বাংলো, বা কোনও চত্বর পাহারা দেওয়ার জন্য জার্মান শেফার্ড, ডোবারম্যানের মতো সারমেয় ভাল। পাহাড়ি এলাকায় অনেকেই এই কাজে এখনও কুকুর ব্যবহার করেন।
আবার আপনার আস্তানাটি কত বড় বা সেখানকার আবহাওয়াও কেমন, বিচার করা জরুরি। এমন অনেক প্রজাতির সারমেয় রয়েছে যারা গরম এলাকায় মানিয়ে নিতে পারে না। তা ছাড়া চেহারায় বেশ বড়সড় হলে তার চলেফেরা, শোয়ার জন্য বড় জায়গা দরকার। সেই শর্তগুলো পূরণ করা সম্ভব কি না, বুঝে তবেই কুকুর কেনা দরকার। কিন্তু যদি ল্যাব্রাডর বা গোল্ডেন রিট্রিভারের মধ্যে কোনও একটিকে বেছে নিতে হয়, কাকে রাখবেন? কেনই বা রাখবেন?
ল্যাব্রাডর এবং গোল্ডেন রিট্রিভার উভয়েই ‘রিট্রিভার’ পরিবারের। ল্যাব্রাডর রিট্রিভার বা ল্যাব্রাডর, রিট্রিভার গান ডগের একটি প্রজাতি। ইংল্যান্ডে তাদের আদিনিবাস। গান ডগ বলতে শিকারের সময় সঙ্গে থাকা কুকুরদের বোঝায়। তবে ল্যাব্রাডর মোটেই হিংস্র নয়। বরং অন্য অনেক প্রজাতির সারমেয়র তুলনায় শান্ত, বুদ্ধিদীপ্ত। এদের ঘ্রাণশক্তিও প্রখর। এরা মনুষ্য মনিবদের সঙ্গে মিশেও যেতে পারে। সে কারণে পোষ্য হিসাবে ল্যাব্রাডরের জনপ্রিয়তা বরাবরই।
গোল্ডেন রিট্রিভারও পোষ্য হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। এটি স্কটল্যান্ডের একটি প্রজাতি থেকে এসেছে। গোল্ডেন রিট্রিভারের সৌন্দর্য তার সোনালিরঙা পশমের মতো বড় বড় লোমের জন্য। এমনিতে এরাও শান্ত স্বভাবের। পরিবারের সঙ্গে ভাল ভাবেই মানিয়ে নেয়।
তফাত কোথায়?
দুই ধরনের কুকুরের প্রধান বৈষম্য তাদের লোমে। গোল্ডেন রিট্রিভারের গায়ের রং সোনালি বা হলদেটে। তাদের লোম বেশ বড়। তুলনায় ল্যাব্রাডরের লোম ছোট। কালো, ফন, সাদা— নানা রকমের গায়ের রং হয় তাদের। গোল্ডেন রিট্রিভারের মুখ ল্যাব্রাডরের তুলনায় একটু সরু এবং কান বেশি লম্বা হয়। দুই ধরনের কুকুরই আকার, আয়তনে বেশ বড় হয়। গোল্ডেন রিট্রিভার দৈর্ঘ্যে সর্বাধিক ২৪ ইঞ্চি হয়। ল্যাব্রাডরের দৈর্ঘ্য ২২ ইঞ্চিতেই সীমাবদ্ধ।
পরিবারের জন্য কে ভাল হবে?
গোল্ডেন রিট্রিভারের তুলনায় ল্যাব্রাডর অনেক বেশি চনমনে, খেলাধুলো পছন্দ করে। ল্যাব্রাডর মনুষ্য মনিবের অনুভূতিও দ্রুত বুঝতে পারে। তাঁদের মনখারাপ, খুশি —সবটাই নাড়া দেয় পোষ্যকে। গোল্ডেন রিট্রিভারও যথেষ্ট সংবেদনশীল। তাই বাড়িতে শিশুরা থাকলে গোল্ডেন রিট্রিভারেরও পছন্দ হতে পারে। তার মানে এই নয় যে, ল্যাব্রাডর শিশুদের সঙ্গ উপভোগ করে না। তবে বন্ধু বা সঙ্গী হিসাবে গোল্ডেন রিট্রিভার এগিয়ে থাকতে পারে।
ল্যাব্রাডর যেহেতু চনমনে বেশি, তাই তাদের জন্য শরীরচর্চা বেশি জরুরি। ল্যাব্রাডরের খাবার খাওয়ার প্রবণতাও বেশি। তাই তাকে ঠিকমতো শরীরচর্চা না করালে, স্থূলত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গোল্ডেন রিট্রিভারও উন্মুক্ত পরিবেশ খুব পছন্দ করে। তাবে তারা সাধারণত একটু শান্ত হয়। দু’জনকেই শরীরচর্চা করানো যায়।
পোষ্য শুধু ঘরে আনলেই হয় না। তাদের দেখভালও খুব জরুরি। মনুষ্য সন্তানের মতোই পোষ্য শাবকদেরও টিকাকরণ, নির্দিষ্ট সময় অন্তর পশুরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। দরকার তাদের পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মন বোঝা।